কলকাতা, 9 এপ্রিল : দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে । তাই লকডাউন বাড়ানোর সম্ভাবনাই প্রবল বলে জানাচ্ছে রাজ্য সরকার । এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই বিপরীত পরিস্থিতিতেও কীভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার সঙ্গে ছোটো ব্যবসাগুলি সচল রাখা যায়, বজায় রাখা যায় উৎপাদন ও সরবরাহ, তাই পর্যালোচনা করলেন তিনি। ছোটো ব্যবসায়ীদের জিনিসপত্রে হোম ডেলিভারিতে ছাড় থেকে শুরু করে ধানের জোগান সহ একাধিক বিষয়ে নিলেন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ।
21 দিন ব্যাপী লকডাউনের জেরে ইতিমধ্যেই নানা সমস্যার সম্মুখীন প্রত্যেকে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজন। তাদের রুজি রোজগার বন্ধ । এদিকে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই আগে থেকে প্রচুর খাবার মজুত করছেন । তাই মজুতের পরিমাণও কমছে । যার প্রভাব পড়ছে উৎপাদনের উপরও । বিশেষ করে অত্যাবশকীয় পণ্যের মজুত যদি শেষ হয় সেক্ষেত্রে বড়সড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই আজ মাছ, রাইস মিল, পর্যটন, ওষুধ সহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী ।
আজকের বৈঠকে তিনি জানান, লকডাউন বাড়ার সম্ভাবনাই প্রবল । এই পরিস্থিতিতে আগামীদিনে শিল্প ও উৎপাদন ক্ষেত্রে কয়েকটি পরিকল্পনা করা হয়েছে । প্রথমত নজর দেওয়া হচ্ছে ছোটো ব্যবসায়ীদের হোম ডেলিভারির উপর । এতে মানুষজন বাড়ি বসেই খাবার পেতে পারে । বাড়ি থেকে বেরিয়ে বা লকডাউন ভাঙার কোনও ঝুঁকি থাকছে না । অন্যদিকে লকডাউনের জেরে যাঁদের ছোটোখাটো ব্যবসা ও দোকান রয়েছে তাঁরাও কিছুটা হলেও উপার্জনের মুখ দেখবেন । তবে এক্ষেত্রে সকলকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জরুরি পরিষেবায় ট্যাক্সি চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । বিষয়টি নিয়ে পরিবহন দপ্তরের সঙ্গেও দু'তিন দিনের মধ্যে আলোচনায় বসা হবে । এনিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে । নির্দিষ্ট কিছু স্ট্যান্ডে ট্যাক্সি রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে । তবে ট্যাক্সিতে চালক সহ মোট 3 জন উঠতে পারবেন । জরুরি প্রয়োজনে এই ট্যাক্সি ব্যবহার করতে পারে মানুষজন ।
ফ্যাক্টরিতে না গিয়েও উৎপাদন ক্ষেত্রের কিছু কাজ ঘরে বসে করে যায় । এবিষয়েও পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী । বলেন, "ছোটো শিল্পগুলির ক্ষেত্রে ঘরে বসে যদি কাজ করা যায়, তাহলে সেদিকে নজর দিতে হবে । পরে তা একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সরবরাহ করা যাবে । তবে এক্ষেত্রে যেন লকডাউনের কোনও নিয়ম না ভাঙে তার দিকে নজর দিতে হবে ।
তিনি আরও বলেন, "কিছু কারখানা বা ফ্যাক্টরিতে যেখানে প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদিত হয়, সেক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদন কাজ সচল রাখতে হবে । যেমন স্থানীয় কিছু শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো যেতে পারে বা অল্প সংখ্যক শ্রমিককে কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে তাদের দিয়ে কাজ করানো যায় । এক্ষেত্রে আলাদা শিফট শিফট করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই পুরো কাজ সম্পন্ন করতে । মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার থেকে শুরু করে মাস্ক পরা, সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে । এক্ষেত্রে ওই শিল্পসংস্থাগুলিকে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি প্রশাসনের কাছে জমা করতে হবে।
রাইস মিলের মালিকদের সঙ্গেও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী । রাইস মিলের তরফে জানানো হয়, বোরো চাষকে মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই খাদ্যদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে । একটা প্রস্তাব রাখা হয়েছে CPC অর্থাৎ শাখা অফিসগুলিতে এসে যদি কৃষকরা ধান দিয়ে যান । বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করার আশ্বাস দেন তিনি । এবিষয়ে তিনি বলেন, যদি এলাকায় গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা যায় সেদিকটা ভেবে দেখা যেতে পারে । এক্ষেত্রে সেলফ হেল্প গ্রুপগুলির সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে । রাইস মিলের তরফে জানানো হয়, আগেই DPC অর্থাৎ ডিরেক্ট পারচেজ় সেন্টার সিস্টেম চালু করা হয়েছে । এক্ষেত্রে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকায় গিয়ে এই DPC পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে ধানের জোগান ও মজুত ঠিক রাখা যেতে পারে ।
আজকের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে এই মুহূর্তে 80 জন কোরোনা আক্রান্ত । পাশাপাশি রাজ্যের সাত-আাটটি জায়গা চিহ্নিত করে নজরদারি চলছে। কোরোনা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য সন্ধান নামে একটি অ্যাপও চালু করা হয়েছে । 2 লাখ ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য ।