কলকাতা, 18 জুলাই: 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর গেল গেল রব ওঠে বামেদের নিয়ে । কিন্তু, 2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে বামেদের জমি ফেরার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট । কারণ, একুশের বিধানসভার থেকে তেইশের পঞ্চায়েতে 11 শতাংশ ভোট বেড়েছে বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ জোটের । 10 শতাংশ থেকে বেড়ে 21 শতাংশ হয়েছে । যে কারণে সিপিএমের তরফে জোরদার প্রচার করা হচ্ছে, ‘তৃণমূল-বিজেপি বাইনারি আর কাজ করছে না । দম রাখো খেলা ঘুরছে । বাম পথে ফিরছে গ্রাম ।’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেন, "পঞ্চায়েত বুঝিয়ে দিল গ্রাম ও নগরে বামেদের মাটি কামড়ে লড়ে যাওয়ার ফলাফল । 2023-এ স্বৈরাচারী-লুটেরাদের ভিত নড়ে গিয়েছে । 2024-এ হবে দুর্নীতির চূড়ামণি পিসি-ভাইপোর রক্ষাকর্তা বিজেপিকে হটানোর লড়াই । তারপর 2026-এ স্বৈরাচারী-লুটেরাদের অট্টালিকা ধুলিস্যাৎ করার লড়াই হবে । দম রাখতে হবে তিনটে বছর একযুগের অন্ধকার কাটিয়ে নতুন সুর্যোদয়ের জন্য ।"
একুশের নির্বাচনের ফলাফল দেখে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বলতে শোনা গিয়েছিল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে । কিন্তু, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এই রাজ্যে বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ-এর মিলিত ভোট বৃদ্ধি ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দিচ্ছে । বাম দলগুলি বারবার বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিককে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তুলছে । এই দুই রাজনৈতিক দল রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম মিশিয়ে মানুষকে ভুল পথে চালিত করছে বলেও অভিযোগ ।
আরও পড়ুন:ভোটে হিংসা ও গণহত্যার অভিযোগে রাজপথে প্রতিবাদ সেলিম-নওশাদদের
আইনজীবী তথা রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "ধর্মের নামে, জাতপাতের নামে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি সাধারণ মানুষকে ভাগ করছে । তারপরও যখন আশানুরূপ সাফল্য তাঁরা পাচ্ছে না, তখনই নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক হিংসা, গণনায় কারচুপি, গণহত্যা চালিয়েছে শাসক দল ।"
সিপিএমের তরফে দাবি করা হচ্ছে যে এর আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস 34 শতাংশ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল । তারপরও হিংসা, ভয় দেখানো চলেছিল রাজ্যজুড়ে । একুশের ভোটে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বিজেপি । কিন্তু, বামেদের পথে ফের হওয়া বইতে শুরু হয় একাধিক উপনির্বাচনে । বালিগঞ্জ, শান্তিপুর ও কলকাতা পৌরনিগম, আসানসোল, সাগরদিঘির উপনির্বাচনগুলিতে ভোট শতাংশ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে বামেদের ।
2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই লাগাতার হিংসা ভয় দেখানো সন্ত্রাস না চললে, এমন কী গণনাতে কারচুপি না করলে বাম, কংগ্রেস এবং আইএসএফের ভোট শতাংশ আরও বৃদ্ধি পেত বলেই সিপিএমের দাবি ৷ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অনেক নেতারই বক্তব্য যে, 23-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব ও গণনাতে যে নৃশংসতা ঘটেছে, তাতে ফলাফলে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে । গণনা কেন্দ্রে ভোট লুট হয়েছে ও ভয় দেখানো চলেছে । বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফের জেতা প্রার্থীকে শংসাপত্র না দিয়ে শাসক দল তৃণমূলের হেরে যাওয়া প্রার্থীকে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক মদতে । এর থেকেই স্পষ্ট বাম-সহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলির ভোট শতাংশ আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে । অবাধ ভোট হলে সেটা সামনে আসত ৷
আরও পড়ুন:নেতারা দল বদলালে মানুষ তার জবাব দেয়, দেখাল আমরাসোতা পঞ্চায়েত