কলকাতা, 27 জুলাই : টালা ব্রিজের একেবারে ঢিল ছোড়া দূরত্বে টিনের চালের ঘর । এটাই একসময় ছিল কারগিল যুদ্ধে শহিদ কণাদ ভট্টাচার্যের শৈশবের বৃন্দাবন । আদতে এটা ছিল ওঁর মামারবাড়ি । মামা বিমানবিহারী অত্যন্ত ভালোবাসতেন কণাদকে । বলা যেতে পারে, বুকে করে আগলে রাখতেন । সেই বাড়িতেই আজ আস্তানা অন্য কারও । বিমানবিহারীবাবু বেঙ্গালুরুতে থাকেন মেয়ের কাছে । কণাদের বাবাও প্রয়াত । আর ছেলে হারানোর স্মৃতি বুকে নিয়ে মা পূর্ণিমাদেবী এখন থাকেন দিল্লিতে । প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে । কিন্তু উত্তর কলকাতার বুকে আজও দাঁড়িয়ে আছে কণাদের স্মৃতিমাখা এই বাড়িটা । এখন সেই বাড়ির মালিক কল্যাণ চৌধুরি । যিনি আজও সযত্নে রক্ষা করে চলেছেন কণাদের স্মৃতি । চাইছেন ওই বাড়িতে তৈরি হোক কণাদ সংগ্রহশালা ।
বাড়িতে ঢুকেই বসার ঘর । সেখানে নানা মহাপুরুষের ছবি । তার মধ্যে শোভা পাচ্ছেন কণাদ ভট্টাচার্যও । ডান দিকের ক্যাবিনেটে রাখা কণাদের নানা স্মারক । ঘরের ভেতরে তুলসি থানটা আজও অটুট । ছেলেবেলায় কণাদ না কি দুষ্টুমি করলে এই তুলসি ধরে চক্কর কাটত । আর পিছনে ছুটতেন পূর্ণিমাদেবী । তুলসি থানের পাশেই বাঁদিকের ঘরটায় থাকত কণাদ । এখান থেকেই তাঁর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সুযোগ পাওয়া । ক্যাপ্টেন কণাদের বাড়ি বলেই বহু টাকা খরচ করেও এই বাড়িটা কিনেছিলেন কল্যাণবাবু । আর তার জন্য তাঁর গর্বও কম নেই । কণাদ প্রসঙ্গ উঠতেই কল্যাণবাবু বললেন, "অনেক চেষ্টা করে টাকা জোগাড় করেছিলাম এই বাড়িটা কিনব বলে । আসলে মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম কণাদের মামার বাড়িটা আমার হোক । এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন বিমানবিহারীবাবু । সেটা জানার পর থেকেই আমার ইচ্ছেটা শুরু হয় । বাড়িটা কিনে আমি কোনওভাবেই কণাদের স্মৃতি মুছে ফেলতে চাইনি । তাই সযত্নে ওঁর সবকিছু রেখে দিয়েছি । যদি সরকারের সাহায্য পাই এখানে একটা সংগ্রহশালা বানাব ।"