কলকাতা, 16 নভেম্বর: জঙ্গি হানায় পাঁচ বন্ধুকে হারিয়েছেন জহিরুদ্দিন। চোখে মুখে সে আতঙ্ক এখনও স্পষ্ট । কয়েকদিন পরই তাঁর প্লাস্টিক সার্জারি হওয়ার কথা রয়েছে । এদিকে শওহরের সুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে খানিকটা স্বস্তিতে বিবি পারমিতা খাতুন । কিন্তু তারপর । বাড়ি ফিরতে হবে তাঁদের । ঘরে অসুস্থ আব্বা- আম্মা । আবার বাড়ির বড় ছেলে জহিরুদ্দিনকে ধরতে হবে সংসারের হাল। এতদিন তার রোজগারের উপর দাঁড়িয়েছিল সংসার। কিন্তু এখন ভাত জুটবে কী করে? তাই শওহরের জন্য চাকরির আবেদন পারমিতার । তাঁর বক্তব্য, জহিরুদ্দিনকে যেন দু'বেলা ভাত জোগাড়ের জন্য একটা চাকরি দেওয়া হয়।
মুর্শিদাবাদ থেকে কাশ্মীরের কুলগামে কাজ করতে গেছিলেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক । 29 অক্টোবর তাঁদের উপর জঙ্গিরা হামলা চালায় । জঙ্গিদের গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয় । জহিরুদ্দিনও শ্রমিকদের ওই দলে ছিলেন । গুলিবিদ্ধ হন জহিরুদ্দিন । গুলি তাঁর হাত-পায়ে লাগে । কাশ্মীরের একটি হাসপাতালে এতদিন জহিরুদ্দিনের চিকিৎসা চলছিল । বুধবার রাতে তাঁকে রাজ্যে আনা হয় ৷ প্রথমে SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ICU-তে ছিলেন তিনি ।পরে ট্রমা কেয়ার সেন্টারের জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, "জহিরুদ্দিন সরকার এখন ভালো আছেন । তবে, তাঁর পেটে, হাতে প্লাস্টিক সার্জারি করা হবে । এর জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে । আগামী বুধবার প্লাস্টিক সার্জারি করা হতে পারে ।"
এদিকে, জহিরুদ্দিন সরকারকে SSKM হাসপাতালে নিয়ে আসার পর, বৃহস্পতিবার তাঁকে দেখতে আসেন পারমিতা । তবে, দেখা হয়নি । পারমিতা বলেন, "বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত, এই একঘণ্টা সময়ে দেখা করা যাবে । বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ঢুকতেই ছ'টা বেজে গেছিল । অনেক অনুরোধের পর দেখা করার সুযোগ মিলেছিল । আমার সঙ্গে আম্মাও ছিলেন । হাসপাতাল থেকে বলা হয় হয় আম্মা না হয় আমি, আমাদের মধ্যে যে কোনও একজন ওর সঙ্গে দেখা করতে পারব । আম্মা দেখতে গেছিলেন ।"বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁরা মুর্শিদাবাদের বাড়িতে ফিরে গেছেন ।
জহিরুদ্দিন সরকারের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর আম্মা,আব্বা ও এক ভাই । যখন যেমন কাজ মিলত, তখন সেই কাজ করতেন তিনি । মুম্বইতে সোনার কাজ করতেও গেছিলেন । মাস দু'য়েক আগে জহিরুদ্দিন সরকারের সঙ্গে পারমিতা খাতুনের বিয়ে হয় । গত ৬ অক্টোবর তিনি কাশ্মীরে যান। 30 অক্টোবর সকালে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল জহিরুদ্দিন সরকারের । তার আগেরদিন রাতেই জঙ্গিহানায় পাঁচ বন্ধুকে হারায় জহিরুদ্দিন। পারমিতা খাতুন বলেন, "আমার শওহরের দুই পা, ডান হাত এবং পেটে গুলি লেগেছে। এমন অবস্থা আমার স্বামীকে আমি নিজেই চিনতে পারছি না ।"
পারমিতার বক্তব্য, "জহিরুদ্দিন বাড়ির বড় ছেলে । ও আর কিছুই করতে পারবে না । গুলি লাগার পরও ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছে । প্রশাসন যেন আমার ওকে একটি চাকরি দেয়, এটাই আমার আবেদন । ও মাধ্যমিক পাশ করেছে । যেন ডাল-ভাত খাওয়ার জন্য একটি কাজ দেয় প্রশাসন । আমাকে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী । আমার শওহর সুস্থ হলে অন্তত দশ-পনেরো হাজার টাকার একটি কাজ যেন পায় । এই ভরসাতেই আছি । আব্বা আলসারের রোগী । দু'বেলা ডালভাত ছাড়া চিকিৎসার খরচও রয়েছে । তাই আমার শওহর যেন বাদ না পড়ে, এটাই আমার আবেদন।"