কলকাতা, 30 মে : জেলবন্দীকে জেরা করে বড়সড় অস্ত্র কারখানার হদিস পেল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স । আসানসোলের কুলটির নিয়ামতপুরে পরদা ফাঁস হল চক্রের । ঘটনায় 350 সেমি অটোমেটিক 7 mm পিস্তল উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা । গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচজনকে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রেপ্তার করা হয় শওকত আনসারিকে । অস্ত্র কারবারের সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে । এখন সে রয়েছে প্রেসিডেন্সি জেলে । পুলিশি হেপাজতে থাকাকালীন শওকত কোনও কথা স্বীকার করেনি । জেল হেপাজতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, জেলার সূত্র ধরে সাফল্য পেলেন গোয়েন্দারা ।
কুলটিতে অস্ত্র কারখানার হদিস, পরদা ফাঁস করল STF - asansol
গতরাতে আসানসোলের কুলটির নিয়ামতপুরে অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স । মেলে অস্ত্র কারখানার হদিস । সেখানে পাওয়া যায় 350 সেমি অটোমেটিক 7 mm পিস্তল । ঘটনায় মহম্মদ ইসার আহমেদ, মহম্মদ আরিফ, সুরজ কুমার সাউ, উমেশ কুমার সাউ, অরুণ বর্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ।
গতরাতে আসানসোলের কুলটির নিয়ামতপুরে অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স । মেলে অস্ত্র কারখানার হদিস । সেখানে পাওয়া যায় 350 সেমি অটোমেটিক 7 mm পিস্তল । ঘটনায় মহম্মদ ইসার আহমেদ, মহম্মদ আরিফ, সুরজ কুমার সাউ, উমেশ কুমার সাউ, অরুণ বর্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । তাদের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে । ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে, ওই অস্ত্র কারা বানাত । এই ব্যক্তিরাই কি অস্ত্র বানানোর কৌশল শিখে নিয়েছিল ? নাকি অস্ত্র বানাত অন্য কেউ, সেবিষয়ও জানার চেষ্টা চলছে । ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি গাড়ি । পুলিশ মনে করছে, ওই গাড়ি নিয়েই অস্ত্র ডেলিভারি নিতে এসেছিল তারা । প্রাথমিক অনুমান, অস্ত্র বানানোর কারিগর অন্য কেউ ।
গোয়েন্দাদের ধারণা, এখানে কাজ করছিল মুঙ্গেরের অস্ত্র তৈরির ইঞ্জিনিয়াররা । প্রশ্ন হল এই ইঞ্জিনিয়ার কারা ?
আসলে একটা সময় বিহারের মুঙ্গের ছিল অস্ত্র কারবারের মুক্তাঞ্চল । সেখানে তৈরি দেশি “ঘোড়া" ছড়িয়ে পড়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । এমনকী তা যেত বাংলাদেশেও । গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ঢাকায় হলি আর্টিজ়নে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল মুঙ্গেরি অস্ত্র । হাত কাটা নাসিরুল্লাহ সেই অস্ত্র নানাভাবে ঢুকিয়েছিল বাংলাদেশে । সাধারণ লেদ মেশিনে অসাধারণ এক বেআইনি কারবার চলত মুঙ্গেরে । দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এইসব অস্ত্রের দাম অনেকটাই কম । যারা দক্ষতার সঙ্গে অস্ত্র বানিয়ে ফেলে তাদেরকে বলা হয় ইঞ্জিনিয়ার । অস্ত্র কারবারিদের কোড নেম । গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বেআইনিভাবে ভারতে ঢোকা বিদেশি 9 mm বা 7 mm পিস্তলের দাম পড়ে যায় 60 থেকে 70 হাজার টাকা । সেখানে মুঙ্গেরের ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি 9 mm পিস্তল পাওয়া যায় 10 থেকে 15 হাজার টাকায় । স্বাভাবিকভাবেই পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা "ডন"-দের কাছে কদর রয়েছে মুঙ্গেরের ওই ইঞ্জিনিয়ারদের হাতের কাজের ।
সম্প্রতি বিহার প্রশাসন কড়া মনোভাব নেওয়ায় ওইসব ইঞ্জিনিয়ার ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে । গোয়েন্দাদের কাছে এসেছে এমনই তথ্য । সেটা প্রথম সামনে আসে কাঁকিনাড়া অস্ত্র কারখানার পর্দা ফাঁসের পর । 2018 সালের 30 জুলাই সুকু শেখ নামে মালদার কালিয়াচকের এক জালনোট কারবারিকে STF পাকড়াও করে । তাদের সঙ্গেই ধরা পড়ে আমজাদ রায়ান এবং আবদুল্লাহ নামে মুঙ্গেরের দুই বাসিন্দা । তাদের কাছে উদ্ধার হয় 1 লাখ টাকার জালনোট এবং 40 টি সেমি ফিনিসড 9 mm পিস্তল । তাদের জেরা করেই জানা যায়, কাঁকিনাড়ার লাড্ডু কারখানার আড়ালে অস্ত্র কারখানার কথা । পরে আগরপাড়া উষুমপুর এবং রাজারহাটে একই কায়দায় অস্ত্র কারখানা গজিয়ে ওঠার খবর মেলে । গতবছর 10 সেপ্টেম্বর উত্তর 24 পরগনার মিনাখাঁয় শফিকুল গাজির অস্ত্র কারখানার খোঁজ পায় পুলিশ । সেখানেও অস্ত্র বানাচ্ছিল দু'জন ইঞ্জিনিয়ার । তাদের নাম শামসের আলম এবং মহম্মদ ফিরোজ় ।
এবার কুলটির নিয়ামতপুরেও কি তাহলে ইঞ্জিনিয়াররাই কাজ করছিল ? তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ।