কলকাতা, 11 অক্টোবর:মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি ঘুম উড়েছিল কলকাতা পুলিশের ৷ দিনকয়েক আগেই আঁটোসাটো নিরাপত্তার বেড়াজাল ভেঙে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েন এক ব্যক্তি ৷ সেই রেশ কাটতে না কাটতেই অস্ত্র-সহ একটি গাড়ি মমতার বাড়ির গলিতে ঢোকার চেষ্টা করে ৷ এ সব ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয় ৷ তারই অংশ হিসেবে তাঁর সুরক্ষায় ডগ স্কোয়াডকে কাজে লাগিয়েছে কলকাতা পুলিশ ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে 24 ঘণ্টা পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুই সারমেয়কে ৷ কাজের ফাঁকে নতুন এই সঙ্গীদের নিয়েই অবসর সময় কাটান মমতা ৷ তাদের আদরের নামও দিয়েছেন তিনি ৷
তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই ল্যাব্রাডরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী একটির নাম রেখেছেন স্ট্রং ৷ আর অপরটির নাম রেখেছেন স্মাইল ৷ কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডের দুই সৈনিককে আদর করে এই নামেই ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর সঙ্গেই দিন-রাত থাকে এই দুই কুকুর ৷ সূত্রের খবর, এরা দুজনেই বোমা বা বিস্ফোরক খুঁজে বের করতে সিদ্ধহস্ত । প্রায় এক বছর ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি)-র মতো বিশেষ বাহিনীর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে স্ট্রং ও স্মাইল । লালবাজার সূত্রের খবর, কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেই বোমা কিংবা বোমার মশলা মজুত থাকলে তার গন্ধ পেয়ে যায় তারা ৷
রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হওয়ার দরুণ জেড প্লাস ক্যাটাগরির সুরক্ষা পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু তাও সম্প্রতি দু'বার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এবং বাড়ির বাইরে থেকে একবার আগ্নেয়াস্ত্র ও আর একবার লোহার রড-সমেত গ্রেফতার করা হয়েছে দুই ব্যক্তিকে । এই দুই ঘটনার পর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায় নিরাপত্তা কর্মীদের ৷
আরও পড়ুন:মমতার বাড়ি নাকি লালবাজার ! ধৃত হাফিজুলের বয়ান শুনে মনস্তত্ত্ববিদদের শরণে গোয়েন্দারা
কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ও বাড়ির ভিতরে প্রায় রোজই একাধিক সমস্যা নিয়ে আসেন একাধিক লোকজন । আবার কখনও কখনও দলীয় বৈঠক কালীঘাটের বাড়িতেই করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ফলে কোনও ভাবেই যাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না-হয় তার জন্যই, কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াড থেকে বাছাই করা দুটি সারমেয় এবং তাদের হ্যান্ডলারদের মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবনে নিরাপত্তার কাজে লাগানো হয়েছে । এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "মানুষের থেকেও বেশি বিশ্বস্ত প্রশিক্ষিত এই সারমেয়রা ৷ সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্ব এই দুই সারমেয়র উপর দেওয়া হয়েছে ৷"
সূত্রের খবর, মমতা নিজেই ওই দুটি সারমেয়কে দেখে ভালোবেসে তাদের নাম রেখেছেন । অবসর সময়ে এই স্ট্রং ও স্মাইলের সঙ্গেই সময়ও কাটাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ৷
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ভিতর থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ । মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির বাইরে ও ভিতরে আঁটোসাটো সুরক্ষা পেরিয়ে রাত একটার পর ওই ব্যক্তি পাঁচিল টপকে 34বি হরীশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে, অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়েছিলেন । অভিযোগ, সে দিন তিনি সারারাত মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির প্রাঙ্গণের ভিতরেই ছিলেন । সকালে তাঁকে দেখতে পান নিরাপত্তারক্ষীরা । সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় কালীঘাট থানায় । কিন্তু ততক্ষণে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা পুলিশকর্মীরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে ফেলেন । পরে কালীঘাট থানার পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ।
এছাড়াও চলতি বছরের গত 21 জুলাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে সকালে একটি কালো গাড়ি দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পান সেখানে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরা । অভিযোগ, সে দিন গাড়িটি বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির গলিতে ঢোকার চেষ্টা করছিল । সেই সময় গাড়িটি দেখেই আটকায় পুলিশ । এরপরই গাড়ির ভিতরে অস্ত্র দেখতে পায় তারা । এ দিকে গাড়ির ভেতরে থাকা যুবক প্রথমে নিজেকে পুলিশকর্মী বলে পরিচয় দেন । পরে ওই ব্যক্তি একাধিক আই কার্ডও পুলিশকে দেখান । সেই আই কার্ডগুলির মধ্যে ছিল বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের আই কার্ডও । পরে তদন্তে জানা যায় গোটা বিষয়টি ভুয়ো । এরপরই আটক করা হয় তাঁকে ।
এই সব ঘটনা ঘটার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ির সামনে এবং বাড়ির ভিতর নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশের ভরসাযোগ্য দুই সারমেয়কে ৷ মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে থাকলে তাঁকে দিনরাত চোখে চোখে রাখছে স্ট্রং ও স্মাইল ৷