কলকাতা, 9 জুলাই: ঘরের এককোণে সারি সারি রাখা দেবদেবীর মূর্তি ৷ যাঁরা মূর্তি গড়ছেন তাঁরা একজন মাকসুদ আলম ও অন্যজন মুজাম্মিল হক ৷ তাঁদের সঙ্গে আরও একজন রয়েছেন নাম কল্পনা সিং ৷ এই তিনের সমাহারে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি প্রাণ পাচ্ছে (Kolkata Gouri Bari Idol Maker) ৷
মহম্মদ আলি পার্ক এবং প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির মাঝ দিয়ে কলুটোলা স্ট্রিট ও মহাত্মা গান্ধী রোডকে জুড়ে রাখা রাস্তার পাশে আছে কলকাতা পুলিশের মর্গ । তারই পিছনে মীর মসজিদ । আর এর ঠিক উল্টো দিকে গৌরীবাড়ি। সেখানেই দ্বিতলের ছোট্ট ঘরে প্রতিদিন হিন্দু দেবদেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন মাকসুদ আলম, মুজাম্মিল হকেরা ।
তবে, এই ঠিকানায় খুব সহজেই পৌঁছনোর সাধ্যি আছে কম জনের । কারণ, গৌরীবাড়ির পাশের লোকজনই ঠিক করে জানেন না মাকসুদ আলম, মুজাম্মিল হকদের 'কীর্তি'। অথচ, গত পনেরো-কুড়ি বছর ধরে নিরলস ভাবে এ কাজ করে চলেছেন তাঁরা । তাঁদের এই শিল্পশৈলী প্লাস্টিকের ফ্রেমবন্দি হয়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । কলকাতার ক্যানিং স্ট্রিট, বাগবাজার আর সবশেষে এই দেবদেবীরা জায়গা পান আমার-আপনার ঘরে। পুজো মণ্ডপে।
আরও পড়ুন :চালতাবেড়িয়া মৃৎশিল্পী ক্লাস্টারের উদ্যোগে কর্মশালা
কেন এই বাড়ির নাম গৌরীবাড়ি ? কারণ এই বাড়ির মালিক গৌরীভাই ৷ তিনি বিহারী ৷ বাড়িটার সদর দরজা ঠেলে ঢুকলে সামনে রয়েছে চার-পাঁচটি গরু ৷ তাদেরকে পেরিয়েই দেখা মিলবে একটি সিঁড়ি। বেয়ে উঠলেই ডান হাতে আট ফুট বাই সাত ফুটের ছোট্ট ঘর। বারান্দায় রান্না করছেন এক মহিলা। পাশের মসজিদে চলছে পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ ৷ এর মাঝেই মাকসুদ ও মুজাম্মিলরা তৈরি করছেন দেবদেবীর মূর্তি ৷ এ কাজ করতে তাঁদের কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি তো ? জিজ্ঞাসা করা হলে, এর উত্তরে হাসি মুখে মুজাম্মিল বলেন, "সবাই মূর্তি কিনে নিয়ে যান। পড়শিরাও বোঝেন ধান্দাই সবসে বড়া ধর্ম। কিসিকো ফারাক নাহি পড়তা। যো ভি হ্যায় ইমান সে করনা চাহিয়ে।"
ঘরের এককোণে সারি সারি রাখা দেবদেবীর মূর্তি কীভাবে বানান তাঁরা দেবদেবীর মূর্তি ? উত্তর 24 পরগনার অশোকনগর, দত্তপুকুর, নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে পুরনো দিনের ছোট-ছোট মূর্তি সংগ্রহ করেন। ওই মূর্তির গায়ে ঢালাই করে ছাঁচ বানানো হয়। ছাঁচে প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে তৈরি হয় প্লাস্টারকাস্টের মূর্তি। পরে রং করে প্লাস্টিকের খোলে বন্দি হয়ে পৌঁছে যায় বাজারে। প্রতিটা মূর্তির রং করতে হয় সূক্ষ্ম হাতে, বলছেন মাকসুদ আলম ওরফে মিন্টু।
আরও পড়ুন :কোজাগরীর আরাধনার আগে বাজারে মন্দা, লক্ষ্মীলাভের আশা ছেড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে মৃৎশিল্পীরা
তিনি আরও জানান, কোথাও ভুল হয়ে গেলে আর মুছে ফেলার উপায় নেই। প্রায় 19-20 বছর ধরে কাজ করছেন তাঁরা। আগে যাঁরা কাজ করতেন, তাঁরাও তাঁদের মতোন এই কাজই করতেন। মাকসুদ আলমদের সঙ্গে কাজ করেন কল্পনা সিং। তিনি বেলুড়ের বাসিন্দা। গত 10-12 বছর ধরে রোজ সকাল সাড়ে দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করেন। মাকসুদ, মুজাম্মিলদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, চা-পান তো চলতে থাকে কল্পনার।