কলকাতা, 27 জুন : শেষ দেখা হয়েছিল 1977 সালে ৷ তারপর 44 বছরের কেটে গিয়েছে ৷ বন্ধু চলে গিয়েছিলেন ওড়িশায় ৷ আর দেখা হয়নি তাঁর সঙ্গে ৷ তখন মোবাইলও ছিল না ৷ ঠিকানা যা ছিল, তাও হারিয়ে গিয়েছে ৷ খোঁজাখুঁজি অনেক করেছেন ৷ ওড়িশায় গিয়েছেন ৷ ফেসবুকে খোঁজাখুঁজি করেছেন ৷ লাভ কিছুই হয়নি ৷ প্রতিবারই নিরাশ হয়েছেন ৷ অবশেষে সঙ্কটমোচনে এল হ্যাম রেডিও ৷ চার দশক পেরিয়ে বাঁশদ্রোণীর চিকিৎসকের সঙ্গে আবার যোগাযোগ হল ওড়িশার চিকিৎসক বন্ধুর ৷
কোচবিহারের মাথাভাঙা মহকুমার অন্তর্গত ঘোকসাডাঙা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন শল্যচিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন নিত্যানন্দ পান্ডা । এর আগে তিনি ছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে ৷ সেইসময় ঘোকসাডাঙার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুৎ পরিষেবা ছিল না ৷ প্রসূতিদের মুখে ইথার ঢেলে সন্তান প্রসব করাতেন নিত্যানন্দ পান্ডা ৷ এলাকায় যথেষ্ট নামডাকও ছিল ৷ এরপর 1977 সালের শেষ দিকে নিজের জন্মস্থান ওড়িশায় চাকরি পেয়ে যান নিত্যানন্দবাবু ৷ নিজের রাজ্যে ফিরতে পারার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাননি তিনি ৷ দায়িত্ব ছাড়েন ঘোকসাডাঙা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৷ আর তাঁর থেকে যিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তিনি বিপ্লবানন্দ দাস ৷ কলকাতার চিকিৎসক ৷ বাড়ি বাঁশদ্রোণী এলাকায় ৷
এদিকে নিত্যানন্দবাবু দায়িত্ব ছাড়ার পরও বেশ কিছুদিন থেকে যান ঘোকসাডাঙায় ৷ খুব অল্প সময়েই দুই ডাক্তারের মধ্যে ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে ৷ এলাকায় নিত্যানন্দ পান্ডার যে নামডাক রয়েছে, সেই কথাও লোকমুখে বিপ্লববাবুর কানে পৌঁছায় ৷ বন্ধুত্ব ক্রমে আরও গাঢ় হয় ৷ কিন্তু এর মধ্যেই নিত্যানন্দের বাড়ি ফেরার সময় এসে যায় ৷ কটকের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি ৷ তারপর থেকে আর দেখা হয়নি দুই বন্ধুর ৷
তখন মোবাইলও ছিল না ৷ ঠিকানা যা ছিল, তাও হারিয়ে গিয়েছে ৷ তবে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা ক্রমে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে বিপ্লববাবুর ৷ শুধু জানতেন ওড়িশার কটকে থাকেন তাঁর বন্ধু ৷ ব্যাস, ওইটুকুই ৷ এত বড় শহরে কীভাবে খুঁজে পাবেন নিত্যানন্দ পান্ডাকে ? তিনি এখন কী করছেন, কোথায় থাকছেন, আদৌও এখনও কটকেই রয়েছেন কি না... কিছুই জানা নেই ৷ শুধু আশা ছিল বুকে, বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকই হবে ৷ আর ছিল বন্ধুত্বের টান ৷ সেই টানেই বার বার ছুটে গিয়েছেন ওড়িশায় ৷