কলকাতা, 5 মে:কলকাতা পৌরনিগমে ফের বেতন বিভ্রাট ৷ অভিযোগ, বেতন পাচ্ছেন না কলকাতা পৌরনিগমের একাংশ ঠিকা কর্মীরা । তাও আবার কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের হাতে থাকা জল সরবরাহ বিভাগের ঠিকা কর্মীদের বেতনের এই অবস্থা। যার জেরে ক্ষোভ বাড়ছে ঠিক কর্মীদের মধ্যে ৷
সম্প্রতি কলকাতার পৌর কমিশনার এক নির্দেশিকা জারি করেছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল কোনওভাবেই ঠিকা কর্মীদের বেতন আটকানো যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশিকাকে কার্যত আমলই দিলেন না কলকাতা পৌরনিগমের কর্তারা ৷ শুধু তাই নয়, বেতন আটকে থাকার ঘটনা ঘটল খোদ জল সরবরাহ বিভাগেই । জানা গিয়েছে, কলকাতা পৌরনিগমের গুরুত্বপূর্ণ শাখা পলতা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের ঠিকা কর্মীরা এই বেতন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকা সংস্থা নোটিশ দিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে কলকাতা পৌরনিগম তাদের কোনও টাকা না-দেওয়াতে তারাও কোনও ঠিকা কর্মীকে বেতন দিতে পারছেন না । কলকাতা পৌরনিগম সূত্রে খবর, জল সরবরাহ বিভাগের পলতা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ঠিকা কর্মীরা করোনার পর থেকেই এক মাস অন্তর টাকা পাচ্ছিলেন । কিন্তু বেশ কয়েক মাস যাবত সেই টাকাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রায় দু'মাসের বেশি সময় ধরে একাধিক ঠিকা কর্মী কোনও বেতনের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। ফলে পরিবার চালাতে চরম সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে প্রায় কম-বেশি 50টি পরিবারকে।
পৌরনিগম সূত্রে খবর, দক্ষ কর্মীদের বেতন 14 হাজার টাকার কাছাকাছি। অদক্ষ কর্মীদের বেতন প্রায় 9 হাজার টাকা। এই সামান্য টাকা দিয়েই সংসার চালাতে হয় ঠিকা কর্মীদের ৷ আর সেই টাকা বন্ধ হওয়াতে চোখে অন্ধকার দেখছেন কর্মী ও তার পরিবাররা । সম্প্রতি কলকাতা পৌর কমিশনার বিনোদ কুমার একটি নির্দেশ জারি করেছিলেন, তাতে বলা হয়েছিল সরাসরি চুক্তভিত্তিক বা ঠিকা সংস্থার কর্মীদের যাতে কোনওভাবেই বেতন পেতে সমস্যা না হয়, সেদিকটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ঠিকা কর্মীরা যাতে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পান তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল বিজ্ঞপ্তিতে ৷ যদি বেতন নিয়ে কোনও সমস্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে সেই বিষয়টি পৌর কমিশনারের নজরে আনতে হবে।
টাকা দিতে গাফিলতি করা হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকের বিরুদ্ধে নিয়মমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন খোদ পৌর কমিশনার। তবে সেই নির্দেশিকার পরও এই ঘটনা সামনে আসায় হতবাক সকলেই। কর্মীদের দাবি, ঠিকা সংস্থা স্পষ্ট লিখিতভাবে জানিয়েছে পৌরনিগম থেকে তাদের কোন টাকা দেওয়া হচ্ছে না, তাই তারাও এই বেতন দিতে পারছেন না। দীর্ঘদিন ধরে নীচের তলা থেকে উপরতলার আধিকারিকদের জানিয়ে আসা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। জরুরী পরিষেবা এবং নাগরিকদের স্বার্থের কথা ভেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকা কর্মীরা ৷ তবে দীর্ঘদিন টাকা না পেলে এই কাজ করা আর সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছে ঠিকা কর্মীরা।
অন্যদিকে, যদি সত্যিই কর্মবিরতি শুরু করেন ঠিকা কর্মীরা তবে পানীয় জলের পরিষেবা নিয়ে ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা গোটা কলকাতাবাসীর। এই প্রসঙ্গে কলকাতা পৌরনিগমের এক আধিকারিক জানান, কী ঘটনা ঘটেছে তা সবটাই নীচের তলার আধিকারিকদের থেকে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে যাতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয় বলেও দাবি করেছেন তিনি। বেতন বন্ধের বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। বিরোধীদের প্রশ্ন পৌর কমিশনারের নোটিশ জারির পরও এমন ঘটনা ঘটছে তাহলে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে? পাশাপাশি অবিলম্বে বকেয়া মিটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন কর্মীরা ৷
আরও পড়ুন: সুকন্যার নির্দেশেই দিল্লি যাওয়ার পথে শক্তিগড়ের দোকানে বৈঠক করেন অনুব্রত, দাবি ইডির