কলকাতা, 13 নভেম্বর : বছরের বিভিন্ন সময়ে এই অসুখে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা । তবে, এ রাজ্যে বসন্ত এবং শরৎকালে এই অসুখে আক্রান্তদের সংখ্যা বেশি দেখা যায় । শরীরের বিরুদ্ধে শরীর লড়াই করে এই অসুখে । এর নাম, কাওয়াসাকি । চোখে দেখেই নির্ণয় করা যায় এই অসুখ । চিকিৎসা রয়েছে । তবে, এই অসুখে আক্রান্তের চিকিৎসা দেরিতে শুরু হলে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে হৃদযন্ত্র । এমন কী আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুও হতে পারে ।
কাওয়াসাকি অসুখ আসলে কী?
পার্ক সার্কাসে অবস্থিত বেসরকারি একটি শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "কাওয়াসাকি, অসুখটি এক ধরনের ভাসকুলাইটিস । শরীরে যে বিভিন্ন রক্তবাহী নালী রয়েছে, প্রধানত আর্টারি, তার মধ্যে যে প্রদাহ হয়, তাকে বলা হয় কাওয়াসাকি । এটা রেয়ার ডিসঅর্ডার ।" এই অসুখে আক্রান্তদের সংখ্যা আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে । এ কথা জানিয়ে বেসরকারি ওই হাসপাতালের অধিকর্তা, চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, "সারা বছরই দুই একজন করে এই অসুখে আক্রান্তের খোঁজ আমরা পাচ্ছি । আগের তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে । তবে, আগের তুলনায় এই অসুখ এখন বেশি চিহ্নিত হচ্ছে বলে সংখ্যাটা এমন বেশি হতে পারে ।"
এই অসুখের ক্ষেত্রে কোন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয় শিশুরা?
চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "এই অসুখের কারণে প্রধানত প্রচন্ড জ্বর হয় । জ্বর কমতে চায় না । অ্যান্টিবায়োটিক দিলেও কাজ করে না । জ্বরের সঙ্গে চোখ লাল হয়ে থাকে । ঠোঁট, জিভও লাল হয়ে যায় । গলা মুখের ভিতরে লাল হয়ে যায় । গায়ে হামের মত লাল লাল র্যাশ বের হয় । হাত-পা লাল হয়ে ফুলে যায় । গলার পাশে থাকা গ্ল্যান্ডও অনেক সময় ফুলে যায় ।" এর ফলে কিছু সমস্যা তো দেখা দেয় । একথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "তবে, এই অসুখ প্রধানত হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে । হৃদযন্ত্রের মধ্যে যে রক্তবাহী নালী রয়েছে, যেগুলি হৃদযন্ত্র থেকে বের হয়, সেই করোনারি আর্টারিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এই অসুখ ।"
যদি রোগ নির্ণয় করে এই অসুখের যথাযথ চিকিৎসা দেরি না করে শুরু করা যায়, তাহলে এই অসুখ করোনারি আর্টারিকে ক্ষতি করতে পারে না । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "কিন্তু, চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয়ে গেলে করোনারি আর্টারি ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এই অসুখ । এর ফলে আর্টারিগুলির মধ্যে প্রদাহ হয়, আর্টারিগুলি ফুলে যায়, রক্ত জমাট বেঁধে যায় । এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে ।" তিনি বলেন, "5 থেকে 14 দিনের মধ্যে এই অসুখ চিহ্নিত করে, এর যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা যদি সম্ভব হয়, তাহলে হৃদযন্ত্রে ততটা প্রভাব ফেলতে পারে না কাওয়াসাকি । প্রভাব ফেললেও আক্রান্তকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় ।"
কীভাবে নির্ণয় হয় এই অসুখ?
চিকিৎসক বলেন, "এই অসুখ নির্ণয়ের জন্য কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই । বেসিক্যালি এটা চোখে দেখে নির্ণয় করতে হয় । এর সঙ্গে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয় । কিছু পরিবর্তন তাতে ধরা পড়তে পারে ।" উপসর্গগুলির পাশাপাশি হৃদযন্ত্রে যদি কোনও পরিবর্তন ধরা পড়ে, তাহলে এই অসুখ চিহ্নিতকরণের বিষয়ে চিকিৎসকরা আরও কিছুটা নিশ্চিত হতে পারেন । গোটা পৃথিবী জুড়ে এই অসুখের জন্য চিকিৎসা হিসাবে রয়েছে দামি এক ইনজেকশন। চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি বলেন, "এই ইঞ্জেকশনের সাফল্যের হার 86 থেকে 90 শতাংশ । সাধারণত একটি ইনজেকশন এই অসুখে আক্রান্তকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় । যদিও 10 থেকে 20 শতাংশ আক্রান্তের ক্ষেত্রে একটিমাত্র ইনজেকশনে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠে না । তখন আরও একটি ইনজেকশন দিতে হয় । অথবা,অন্য একটি ওষুধ দিতে হয় ।"
যে কোনও বয়সি শিশুর ক্ষেত্রেই কি এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়?
চিকিৎসক বলেন, "ছয় মাস বয়স থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়স, এমন শিশুদের ক্ষেত্রে এই অসুখ দেখা যায় । তবে, ছয় মাসের কম অথবা, পাঁচ বছরের বেশি বয়স, এমন শিশুদেরও কাওয়াসাকি দেখা যাচ্ছে । এক্ষেত্রে এই অসুখের কারণে সমস্যা মারাত্মক হয়ে ওঠে । পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে ।" কোনও কারণে এই অসুখ দেখা দিতে পারে? তিনি বলেন, "এই অসুখের কারণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি । এটা অটো ইমিউন ডিজিজ় অর্থাৎ, শরীরের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীর ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমে সমস্যার কারণে এই অসুখ হতে পারে । অনেকে বলেন, কোনও সংক্রমণ থেকে এই অসুখ হতে পারে । তবে সেটা প্রমাণিত হয়নি । আসল কারণ এখনও জানা যায়নি ।"
বছরের কোন সময় এই অসুখ দেখা দিতে পারে?
চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, "বছরের যে কোনও সময়ে এই অসুখে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। তবে, কোনও কোনও সময় একসঙ্গে অনেক আক্রান্তকে আমরা দেখতে পায়। যেমন, আমাদের এখানে বসন্ত এবং শরৎকালে আমরা এই অসুখে আক্রান্তদের বেশি দেখি। এই অসুখ বছরের যে কোনও সময় হতে পারে। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে এই অসুখে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।"