কলকাতা, 21 ডিসেম্বর: "তৃণমূলের সঙ্গে জোট করা মানে দুর্নীতির অংশীদার হতে হবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নির্মম শাসক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত তা পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সমর্থকরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন । ফলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলে আদতে কংগ্রেসেরই ক্ষতি হবে ।" 21 ডিসেম্বর সাত সকালে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিকে চিঠি লিখলেন আইনজীবী তথা কৌস্তভ বাগচি । তেলেঙ্গানা, দিল্লি, পঞ্জাবে আপ এবং সমাজবাদী পার্টির মতো পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেসের অন্যতম ক্ষতিকারক তৃণমূল কংগ্রেস, এমনটাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি । বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের ভূমিকা অবস্থান-সহ পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ভূমিকা ও অবস্থান নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মল্লিকার্জুন খাড়গেকে তিনটি পয়েন্ট লিখে অনুরোধ জানিয়েছেন কৌস্তভ ।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, "2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । যেখানে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করে সম্ভাব্য জোট সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে । আপনার পাণ্ডিত্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে । আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা নিম্নলিখিত পয়েন্টগুলি করতে চাই ।"
কৌস্তুভের তিন পয়েন্ট :
1) জাতীয় পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের বিজেপিকে হারাতে হবে । তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গঠনে নিজস্ব ক্ষতি হবে । বিশ্বাসযোগ্য দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের সুনাম নষ্ট হয়েছে ৷ কংগ্রেস যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ার চেষ্টা করে, তাহলে তৃণমূল নেতাদের সমস্ত দুর্নীতির দায় কংগ্রেসকে নিতে হবে । যার বিরুদ্ধে কংগ্রেস সর্বাত্মক লড়াই করেছে ।
2) দেশের অন্যান্য অংশের মতো নয়, পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরেই আবর্তিত হয় । ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের প্রতি কংগ্রেসকে খুব নরম বলে মনে করায় বিজেপি ইদানীং জায়গা পেয়েছে । এই মুহূর্তে, কংগ্রেস যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের একমাত্র বিরোধী হিসেবে ভোটের ভাগ বাড়াবে । 2026 সালে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তনের কোনও ভিত্তি থাকবে না ।
3) পশ্চিমবঙ্গে 42টি লোকসভা আসন রয়েছে । পশ্চিমবঙ্গের মানুষ 2016 সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত করেছিল । কিন্ত, প্রদেশ কংগ্রেসের অক্ষমতার কারণে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি । যা কেসিআর শাসনাধীন তেলেঙ্গানা এবং AAP-এর অধীনে দিল্লি ও পঞ্জাবের পরিস্থিতির মতো । সুতরাং, সাধারণকর্মীরা এবং সমর্থকরা তৃণমূল কংগ্রেসকে বন্ধুত্বপূর্ণ মিত্র বলে মনে করেন না ৷ এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একজন অন্যায় এবং নির্মম শাসক হিসাবে বিবেচনা করা হয় । যিনি নির্বাচনে কারচুপি করেন এবং বিরোধীদের দমন করার জন্য নিপীড়নমূলক সহিংস উপায় ব্যবহার করেন ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট কংগ্রেসের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে । কারণ বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পাবে । শুধু তাই নয় তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে উপহাস করেছে । তারা বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে নির্বাচন লড়েছে । শুধুমাত্র বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগ করার জন্য । যা কংগ্রেস প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ । AAP এবং সমাজবাদী পার্টির মতো, তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের ভিত্তি রয়েছে । যা প্রধানত কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন । এ রাজ্যে তৃণমূল সঙ্কুচিত হলে সেই ভোটব্যাঙ্ক কংগ্রেসে ফিরে যেতে পারে ।"
এরপরেই খাড়গের কাছে কৌস্তভের অনুরোধ, "আমি আশা করি যে আপনি কেবলমাত্র স্বল্পমেয়াদী সম্ভাবনার উপর নয়, একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করে জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন । বিজেপিকে পরাজিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য । কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে আমাদের জায়গা হারানো কোনও বিকল্প নয় । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপিকে সমর্থন ও বিরোধিতার একটি সন্দেহজনক ইতিহাস রয়েছে । তিনি নির্ভরযোগ্য মিত্রও নন । এই ই-মেলটি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একজন কংগ্রেস পার্টির কর্মীর কাছ থেকে আসা নয়, বরং লক্ষ লক্ষ কংগ্রেস কর্মী, সমর্থক এবং সহানুভূতিশীলদের কণ্ঠস্বর হিসাবে বিবেচনা করুন । যারা রাজ্যে একটি শক্তিশালী কংগ্রেস পার্টির স্বপ্ন দেখেন ।"
আরও পড়ুন :