পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কফিন বন্দী দেহটার কথা মনে পড়লে আজও চোখ ছলছল করে ওঠে ! - Lieutenant

আজ সকালেও মালা দেওয়া হয়েছে গলায়। সযত্নে রক্ষিত আবক্ষ মূর্তি ঘিরে হয়েছে চেনা আবেগের বিস্ফোরণ । শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে টালাবাসী। কারগিল জয় দেখে যেতে পারেননি ক্যাপ্টেন কণাদ ভট্টাচার্য। তাতে কি! কণাদের রক্তঝরা বলিদানেই তো এসেছিল যুদ্ধ জয়ের গৌরব। সেটাও ছিল 26 জুলাই। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্গিল বিজয় দিবস।

কণাদ ভট্টাচার্য

By

Published : Jul 26, 2019, 11:26 PM IST

Updated : Jul 26, 2019, 11:46 PM IST

কলকাতা, 26 জুলাই : সে দিনের সেই বিকেলটার কথা আজও ভুলতে পারেননি কেউ !

সালটা 1999৷ আগের দিনও বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল 24 বছরের ছেলেটার ৷ খোঁজ নিয়েছিলেন বোনেদের ৷ কিন্তু, 21 মে বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না ৷ বুকে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে ছটফট করছিলেন বাবা কমলাকান্ত-মামা বিমানবিহারীরা ৷ ফোনের শব্দ শুনে আশায় মুখ জ্বলজ্বল করলেও, ক্ষণিকেই যেন তা মলিন হয়ে যাচ্ছিল মা পূর্ণিমার ৷ দু'চোখের পাতা এক করতে পারেনি বোনেরাও ৷

এ ভাবেই কেটে ছিল প্রায় মাস দুয়েক৷ 17 জুলাই, অবশেষে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছিলেন, কিন্তু, কফিন বন্দী হয়ে ৷ তেরঙ্গায় মোড়া দেহটা ঢেকে গেছিল তাজা ফুলে ৷

সত্যিই শহিদের গর্বে বুক বেঁধেছে টালার মানুষজন

কণাদ ভট্টাচার্য ৷ কারগিল যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন 3/2 ডি বিটি রোডের এই যুবক ৷ ছেলের কফিন বন্দী দেহ আঁকড়ে ধরে যেন পাথর হয়ে গেছিলেন পূর্ণিমা ৷ সে দিনের কথা মনে পড়তেই আজও অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠেন, “তুই যে বাবা কথা দিয়েছিলি যুদ্ধ জিতে আমায় মেডেল এনে দিবি...৷"

কুড়িটা বছর পেরিয়ে গেলেও পাড়া-প্রতিবেশীদের মন থেকে বিন্দুমাত্র মলিন হননি কণাদ ভট্টাচার্য

দেখতে দেখতে কেটে গেছে কুড়িটা বছর ৷ পাড়া-প্রতিবেশীদের মন থেকে বিন্দুমাত্র মলিন হননি কণাদ ভট্টাচার্য ৷ ছোটো থেকে মামার বাড়িতেই বড় হয়েছিলেন ৷ এলাকাটা টালা বারোওয়ারি দুর্গাপুজো কমিটির এক্কেবারে পাশে । টালা ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে ক্যারাটে শিখতেন । ভালো ক্রিকেটও খেলতেন । কলকাতা ক্রিকেট লিগের প্রথম ডিভিশনের হয়ে মাঠে নামতেও দেখা গেছিল তাঁকে ৷ পাড়ার কেউ সমস্যায় পড়েছেন, কানে এলে সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে বিন্দুমাত্র সময় নিতেন না কণাদ ৷

দেখুন ভিডিয়ো

মাস দু'য়ের খবর না পাওয়ায় মনের মধ্যে কোথাও যেন কু-ডাকছিল ৷ যদিও আমল দিতে চাননি কেউই ৷ কিছু ভালো ঘটে, আশায় বুক বাঁধছিলেন সবাই ৷ কিন্তু, সেই আশা পূরণ হয়নি ৷ 15 জুলাইয়ের ফোনটা সব আশা ভেঙে দিয়েছিল ৷ সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছিল, শহিদ হয়েছেন কণাদ ভট্টাচার্য ৷ দাবানলের মতো মুহূর্তে খবরটা ছড়িয়ে পড়েছিল ৷ বিমানবন্দরে কণাদের দেহ আনতে হাজির ছিলেন এলাকার মানুষজন থেকে রাজনৈতিক নেতারাও৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ৷ উপস্থিত ছিলেন তিনিও ৷

কণাদ ভট্টাচার্য

কুড়িটা বছর কেটে গেছে । কিন্তু সেদিনের স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে টালা । সে দিনের সেই টিনের চালের ক্লাব ঘর এখন তিন তলা বিল্ডিং । এই ক্লাবেই ক্যারাটে শিখে ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছিলেন কণাদ । তাঁর স্মৃতিতে আজকের পাকা বিল্ডিংয়ের নাম দেওয়া হয়েছে কণাদ ভবন । ক্লাবের সামনে বসেছে আবক্ষ মূর্তি । ক্লাবের গ্রন্থাগারের নামও শহিদ কণাদের নামেই । টালা ব্রিজের উপরের বাস স্টপটাও তাঁর নামে, তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে । সম্পাদক অনুজিৎ নান বলছিলেন, “কণাদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমরা রক্তদান শিবির করি । কোনও উপহার দেওয়া হয় না রক্তদাতাদের । নামটুকুই যথেষ্ট । একশোরও বেশি মানুষ সেই রক্তদান শিবিরের রক্ত দেন ।"

কারগিল যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন 3/2 ডি বিটি রোডের এই যুবক

চোখের জলে আজও পাড়ার ছেলেটাকে সম্মান জানায় টালার মানুষজন ৷ কণাদের নামে আজও গর্ববোধ করে তারা ৷ সে দিন ছেলের কফিন বন্দী দেহ আঁকড়ে কমলাকান্ত ভট্টাচার্য বলেছিলেন, “কাঁদবেন না কেউ । ও দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে । এ মৃত্যু গর্বের ।"

সত্যিই শহিদের গর্বে বুক বেঁধেছে টালার মানুষজন ৷

Last Updated : Jul 26, 2019, 11:46 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details