পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Kali Puja 2022: কন্যাহারা পিতার আর্তিতে সাড়া দিয়েছিলেন মা করুণাময়ী !

সামনেই কালীপুজো (Kali Puja 2022) ৷ আলোর উৎসবে মেতে উঠবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ৷ তার আগে কালীক্ষেত্রগুলি নিয়ে দু-এক কথা এই কলামে ৷ আজ পড়ুন করুণাময়ী কালীমন্দিরের (Karunamoyee Kali Temple) 'কাহিনি' ৷

Kali Puja 2022 Legends behind Karunamoyee Kali Temple
Kali Puja 2022: কন্যাহারা পিতার আর্তিতে সাড়া দিয়েছিলেন মা করুণাময়ী !

By

Published : Oct 21, 2022, 8:20 PM IST

কলকাতা, 21 অক্টোবর: কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর মোড় থেকে যে রাস্তা প্রাচীন আদিগঙ্গা (সাধারণের কাছে 'টালি নালা' নামে পরিচিত) পেরিয়ে হরিদেবপুর হয়ে ঠাকুরপুকুর চলে গিয়েছে, সেই রাস্তার ডান দিকে মা করুণাময়ী কালীমন্দির (Karunamoyee Kali Temple) ৷ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন রায় চৌধুরীদের কুলতিলক নন্দদুলাল রায়চৌধুরী ৷

কেশবরাম রায়চৌধুরীর দ্বিতীয় পুত্র কৃষ্ণদেব রায়চৌধুরীর একমাত্র পুত্র নন্দদুলালের জন্ম 1722 সালে ৷ নন্দদুলালের পর পর তিনটি পুত্রসন্তান হয় ৷ এঁরা হলেন যথাক্রমে রাঘবেন্দ্র, রামচরণ ও জগন্নাথ ৷ তিন পুত্র সন্তানের পর নন্দদুলালের একটি কন্যা সন্তান লাভের ইচ্ছা ছিল ৷ এবং তাঁর ইচ্ছা মতোই একটি কন্যা সন্তানের জন্মও হয় ৷ তাঁরই নাম করুণাময়ী ৷ কিন্তু মাত্র সাত বছর বয়সে করুণাময়ীর অকালপ্রয়াণ ঘটে ৷ কন্যার মৃত্যুতে নন্দদুলাল ভেঙে পড়েন ৷

আরও পড়ুন:বালিকা রূপে দেখা দিয়েছিলেন দেবী ! জেনে নিন ময়দা কালীবাড়ির নেপথ্যের কাহিনি

জীবনের এই মানসিক বিপর্যয়ে একদিন রাতে নন্দদুলাল স্বপ্নে দেখেন, তাঁর মৃতা কন্যা করুণাময়ী তাঁকে বলছে, "বাবা তুমি কেঁদো না ৷ আমি তোমায় কোনও দিনই ছেড়ে যেতে পারব না ৷ কাল ভোরে তুমি আদিগঙ্গার ঘাটে যেও ৷ সেখানে একটা বটগাছের তলায় একটা কষ্টিপাথর দেখতে পাবে ৷ সেই পাথর দিয়ে তোমার ইষ্টমূর্তি গড়ে প্রতিষ্ঠা করো ৷ আমি ওই মূর্তির মধ্যেই চিরদিন চিন্ময়ী রূপে বিরাজ করব ৷"

পরদিন ভোরবেলা নন্দদুলাল গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বটগাছের তলায় সত্যিই কষ্টিপাথর দেখতে পান ! চোখের জলে ভাসতে ভাসতে সেই শিলা তুলে নিয়ে আসেন তিনি ৷ তারপর শুভদিন দেখে জনৈক ভক্ত ভাস্করকে দিয়ে নির্মাণ করান মায়ের স্বপ্নাদিষ্ট সেই অপূর্ব নয়নাভিরাম করুণাময়ী মূর্তি ৷ 1760 সালের কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয় সেই বিগ্রহের ৷ নির্মিত হয় নবচূড়া সহযোগে মা করুণাময়ীর নবরত্ন মন্দির ৷ কিন্তু, কালের স্রোতে ও সংরক্ষণের অভাবে 140 বছরের মধ্যেই মা করুণাময়ীর সেই নবরত্ন মন্দির ধ্বংস হয়ে যায় ৷ তবে, পুরনো মন্দির ধ্বংস হলেও নন্দদুলালের প্রতিষ্ঠিত করুণাময়ী এবং মহাকালের মূর্তি আজও অম্লান রূপে বিরাজমান ৷

কালীপুজোর দিন রাজবেশে সাজানো হয় মা করুণাময়ীকে ৷ সকালে কুমারীপুজো এবং রাতে দেবীর বিশেষ পুজো সম্পন্ন হয় ৷ কালীপুজোর দিন বহু ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে ৷ করুণাময়ী কালীমন্দিরের বৈশিষ্ট্য হল, কালীপুজোর দিন এই মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় কুমারীপুজো ৷ এই দিনে মাকে নানা অলংকারে সাজানো হয় ৷ রাতে মায়ের জন্য সমস্ত রকমের ভোগের পদ থাকে ৷ তাতে 11 রকমের মাছ, সাত রকমের ভাজা, সাত রকমের তরকারি, সাদা ভাত, পোলাও, লুচি, ছোলার ডাল, দই, মিষ্টি, পায়েস ইত্যাদি নানা আয়োজন থাকে ৷ ভক্তি ও মহাসমারোহে আজও মায়ের পুজো হয়ে আসছে টালিগঞ্জের এই করুণাময়ী কালীমন্দিরে ৷

তথ্য সহায়তা: শুভদীপ রায়চৌধুরী, আঞ্চলিক গবেষক তথা সাবর্ণ রায়চৌধুরীর ৩৬তম বংশধর ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details