পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

"হাজার পরিবহ হওয়ার রাস্তা তৈরি হচ্ছে", আন্দোলনের হুঁশিয়ারি জুনিয়র ডাক্তারদের - NRS

NRS-র জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে জামিন দেওয়ার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন জুনিয়র ডাক্তাররা ।

ফাইল ফোটো

By

Published : Jul 3, 2019, 2:39 AM IST

Updated : Jul 3, 2019, 6:09 AM IST


কলকাতা, 3 জুলাই : NRS-র জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনায় ফের বাড়ছে উত্তাপ । অভিযুক্ত পাঁচজনকে জামিন দেওয়ার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন জুনিয়র ডাক্তাররা । ইতিমধ্যেই জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে এবিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি ছিল, মুখ্যমন্ত্রী পরিবেশ দিন, তাঁরা পরিষেবা চালিয়ে যাবেন। লক্ষ্য ছিল, দ্বিতীয় পরিবহ মুখোপাধ্যায় যাতে তৈরি না হয়। অথচ, হাজার হাজার পরিবহ তৈরি হওয়ার রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এই পরিস্থিতিতে, কাজের জন্য সুস্থ পরিবেশ এবং নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তাঁরা । জুনিয়র ডাক্তারদের হুঁশিয়ারি, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না হলে, আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবেন তাঁরা । বিচার পাওয়ার জন্য যতদূর যেতে হয়,ততদূর যাবেন। তাঁদের কথায়, "উই ওয়ান্ট জাস্টিস"।

গত মাসে NRS-এ বিক্ষোভকারীদের হামলায় গুরুতর আহত হন পরিবহ মুখোপাধ্যায় । তারপরেই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হন জুনিয়র ডাক্তাররা । মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরে আসেন তাঁরা । একেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করবেন । কিন্তু, পাঁচ অভিযুক্ত জামিন পাওয়ার পরেই হঠাৎ ছবিটা পালটে গেল ।

গতকাল স্বাস্থ্য ভবনে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকের পরে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। এই বৈঠকের শেষে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়েছে, গত 17 জুন মাননীয়া (মুখ্যমন্ত্রী)-র সঙ্গে বৈঠকের পর, 15 দিন পরে তাঁরা পর্যালোচনা বৈঠকে এসেছিলেন। এই বৈঠকে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা, DC (কমব‍্যাট) সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা ছিলেন। কিন্তু, 1 জুলাই শিয়ালদহ কোর্টৈর রায় শোনার পর এই বৈঠকে শুধুমাত্র 2টি বিষয়ে হয়। এক, পরিবহ এবং বাকি অ্যাসল্ট কেসগুলির প্রশাসনিক এবং বিচারবিভাগীয় ব‍্যবস্থা। দুই, হাসপাতালে নিরাপত্তা বৃদ্ধির ব‍্যবস্থার বিষয়। আলোচনার পরে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তাঁদের। কোন ধরনের আশ্বাস? জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর তৈরি হবে। কলকাতার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে পুলিশের নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে। গ্রিভ‍্যান্স সেল তৈরি করা হচ্ছে যাতে রোগী এবং তাঁদের বাড়ির লোকজনদের অভিযোগের পাশাপাশি ডাক্তারদের সুরক্ষার বিষয়টিও যাতে দেখা যায়। এবিষয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, "মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও শতাধিক অভিযুক্তের মধ্যে NRS-র ঘটনায় মাত্র 5 জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্তরা বাকি এখনও অধরা। হয় প্রশাসনিক উদাসীনতায় বা অপদার্থতায়। এটা আধিকারিকরা ঠিক করবেন। তবে, ওই 5 জনও এখন জামিনে মুক্ত।"

স্বাস্থ্য ভবনে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের পরে জুনিয়র ডাক্তারদের নিজেদের বৈঠকের শেষে তাঁদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাতে গিয়ে তাঁরা বলেন, "আমাদের দাবি ছিল আপনি পরিবেশ দিন, আমরা পরিষেবা চালিয়ে যাব। আমাদের লক্ষ্য ছিল দ্বিতীয় পরিবহ যাতে তৈরি না হয়। সেখানে হাজার পরিবহ তৈরি হওয়ার রাস্তা আজ খুলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কাজে সুস্থ পরিবেশের অভাব এবং সুরক্ষার অভাব বোধ করছি আমরা । দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আগামী দিনে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।"

ভিডিয়োয় শুনুন জুনিয়র ডাক্তারদের এক প্রতিনিধির বক্তব্য

একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, "আমরা যে দাবিগুলি পাঠিয়েছিলাম তার প্রথম তিনটির মধ্যে এগুলি ছিল। ওনারা এই দাবিগুলির গুরুত্ব হয়তো বুঝতে পারেননি। এগুলি প্রতিরোধের জন্য ওনারা পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু যেটা নিয়ে এত কিছু হল, সেটাকে ওনারা সরিয়ে দিয়েছেন।" এর পরে আপনারা কী করবেন? জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের একজন বলেন, "আমরা এখন আশাবাদী। আমরা আশা করছি, আমরা যে দাবিগুলি তুলে ধরেছি সরকার অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে । কলকাতা পুলিশ অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে। তারপর আমরা পর্যালোচনা করে দেখব কতটা স্যাটিসফায়েড হতে পেরেছি ।" সরকার এবং জুনিয়র ডাক্তার, এই দুই পক্ষকে দুই জায়গায় দাঁড় করিয়ে কোনও সমস্যার মধ্য দিয়ে তাঁরা যেতে চাইছেন না। এ কথা জানিয়ে তাদের তরফে বলা হয়, "আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাইছি, আমাদের কিছু বক্তব্য ছিল। সেই বক্তব্যগুলির ভিত্তিতে 12 টি দাবি নিয়ে আমরা নবান্নে গেছিলাম। ওই মিটিংয়ের বক্তব্যগুলির সারসংক্ষেপের কিছু স্বল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তিন দিনের মধ্যে বিস্তারিত দেওয়া হবে। কিন্তু তিন দিনের মধ্যে সঠিকভাবে বিস্তারিত আমরা পাইনি। সব থেকে বড় গুরুত্বপূর্ণ যে পয়েন্ট তা হচ্ছে, পরিবহ।"

জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের একজন বলেন, "আমাদের অনেক দাবি আছে। অনেক বক্তব্য আছে। সে সব নিয়ে অনেক কথা আজ হয়েছে। এক পরিবহ আজও সুস্থ হয়নি, বাড়িতে গেছে। শত শত পরিবহ তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি কিন্তু তৈরি হয়েছে। যেভাবেই হোক আমরা এই পরিস্থিতি রুখবই। সরকার,পারিপার্শ্বিক সোসাইটি, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, যে যেভাবে ভাবে ভাবুক। আমরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে একসঙ্গে ছিলাম, একসঙ্গে থাকব। ডাক্তার ফ্যাটারনিটির পক্ষ থেকে একটা কথাই বলতে পারি, সবার পক্ষ থেকে আমরা পরিবহর এই ঘটনাটাকে ভুলতে দেব না। পরিবহর বিচার দিতেই হবে। এই বিচার শুধুমাত্র পরিবহর বিচার নয়। এই বিচার পুরো ডাক্তার ফ্যাটারনিটির উপর হওয়া অন্যায়ের বিচার।"

তিনি আরও বলেন, "কীভাবে হবে, কী করে করবে, সরকার কতটা করবে, কী করবে, সেটা পরের কথা। আমরা প্রতিটি বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করেছি। সরকারের তরফ থেকে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবার কাছে আমরা পরিষ্কার ভাষায় দ্ব্যর্থহীন একটি কথা বলেছি, ১০ থেকে ১৫ দিন হয়ে গিয়েছে, '200 জন এসেছিল', তাঁদের মধ্যে থেকে ৫ জন অ্যারেস্ট হয়েছিল। সেই ৫ জনকেও ২০ দিনের মধ্যে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জামিন অযোগ্য সেকশন দেওয়ার পরেও জামিন দেওয়া হয়েছে। আমরা টেকনিক্যাল পার্সোনাল নই। কিন্তু এটা হতে পারে না। আমরা সবাই মিলে যেভাবে হোক জাস্টিস পাবই। জাস্টিস পাওয়ার জন্য আমাদের যতদূর যেতে হয় আমরা সর্বসম্মতভাবে ততদূর এগোব। "

জুনিয়র ডাক্তারদের তরফের এ দিন বলা হয়েছে, "ওনারা আমাদের কাছ থেকে সময় চেয়েছেন। আমরা সময় দিয়েছি। কিন্তু এই আন্দোলন থামছে না। আন্দোলন চলতে থাকবে।" কতদিন সময় দিয়েছেন? বলা হয়, "উনি কিছু দিন সময় নিয়েছেন।" একই সঙ্গে বলা হয়, "স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরি করা এত সহজ কাজ নয়। কারণ, RGKAR বা NRS বা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের যে সমস্যা, নিশ্চয়ই সেটা নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ বা কল্যাণী মেডিকেল কলেজ বা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ বা বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজের সমস্যা নয়। প্রতিটি মেডিকেল কলেজের সমস্যা আছে। সেগুলিকে নিয়ে আলোচনা করতে হবে। নিজস্ব নিজস্ব দাবিদাওয়াগুলি পূরণ করতে হবে। এই পয়েন্টের উপর দাঁড়িয়ে ওনারা কিছুটা সময় চেয়েছেন। আমরা ওনাদের আরও কিছুটা সময় দিতে চাই। আমরা আশাবাদী। কিন্তু এর পরেও বলতে পারি, আমরা এই আন্দোলন থামাব না। একটাই বক্তব্য, উই ওয়ান্ট জাস্টিস।"

ভিডিয়োয় শুনুন প্রদীপকুমার মিত্রের বক্তব্য

বৈঠকের বিষয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপকুমার মিত্র বলেন, "আগের দিন নবান্নর বৈঠকে ওদের বলাই ছিল বৈঠক করব। এর জন্য সরকারের তরফ থেকে আমরা বলে দিয়েছি, কী, কী অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলির বিষয়েও বলে দেওয়া হয়েছে।" জুনিয়র ডাক্তাররা এতে খুশি। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বলেন, "কিন্তু তাঁদের একটা চিন্তার বিষয় রয়েছে, যারা ধরা পড়েছিল, তারা সকলে বেল পেয়েছে। কীভাবে বেল পেয়ে গেল, নন বেলেবেল অফেন্স দেওয়া হয়েছিল। আইনি বিষয়টা আমরা বলতে পারব না। স্বরাষ্ট্র বিভাগের সঙ্গে কথা বলতে হবে।"

তিনি বলেন, "গতকাল ডক্টরস ডে ছিল। জুনিয়র ডাক্তারদের কনসার্ন হচ্ছে, ডক্টরস ডে-তে সবাই জামিন পেয়ে গেল। এতে সাধারণ মানুষ কী মেসেজ পেলেন। ওদের সঙ্গে আমরা একমত। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের জানাব, এই বিষয়ে কী করা হচ্ছে।"

Last Updated : Jul 3, 2019, 6:09 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details