বরানগর, 10 অগস্ট: লোককথা, লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে বেঁচে থাকে একটি জনপথের ইতিহাস । যা সাক্ষ্য দেয় অতীতের । তাই লোকসংস্কৃতিকে বলা হয় একটি জাতি ও সভ্যতার শিকড় । ঝুলনযাত্রা হল সেই লোকসংস্কৃতির একটি অংশ । যার মাধ্যমে ধর্ম ও জনজীবনের ছবি ফুটে ওঠে । সময়ের অগ্রগতিতে আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে গিয়েছে । ঝুলনও তার ব্যতিক্রম নয় । বংশপরম্পরায় 50 বছর ধরে বরানগরের দর্জিপাড়ার বক্সী বাড়িতে ঝুলনযাত্রা অনুষ্ঠিত হত ৷ মাঝে তা বন্ধ হয়ে যায় ৷ এরপর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বিগত তিন বছর ধরে একটি ঘরেই পারিবারিক ঝুলনযাত্রা পালন করে আসছেন মৃণালকান্তি বক্সী(Jhulan yatra at home to save 50 years of family tradition at Baranagar)।
বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানিতে একসময় কাজ করতেন মৃণালবাবু । অবসরের পরে নেশা হয়ে ওঠে বাংলার মাটির পুতুল সংগ্রহ । আর তা করতে গিয়ে বাংলার বিভিন্ন গ্রাম জনপথের লোকশিল্পের সঙ্গে পরিচিত হন । নিজে প্রত্যক্ষ করেন কীভাবে বাংলার কৃষ্টি হারিয়ে যাচ্ছে । পুতুল তৈরির কারিগরদের মধ্যেও যে শ্রেণিবিভাগ রয়েছে তা তখন জানতে পারেন । কারিগরদের নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে সেই বিষয়টি পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার একক লড়াইও শুরু করেন । পাশে পেয়েছিলেন পরিবারকে ।
আরও পড়ুন :করোনাকালে দোসর বন্যা, তবু চিরন্তন মাটির দিওয়ালি গড়ছে জঙ্গলমহলের কুমোরপাড়া
500 বছর আগে শ্রীচৈতন্যদেব বরানগর পাঠবাড়িতে এসেছিলেন । আজও তাঁর ছেড়ে যাওয়া খড়ম এবং অঙ্গবস্ত্র জনসাধারণের আকর্ষণের কেন্দ্রে । এই অঞ্চলে শ্রীচৈতন্যের প্রভাব থেকেই বিভিন্ন উৎসব ধুমধাম করে পালিত হত । যার মধ্যে ঝুলনযাত্রা ছিল অন্যতম । সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার ইচ্ছেয় মৃণালবাবু ঘরেই শুরু করেন ঝুলনযাত্রা ৷
তাঁর কথায়, "আমি সেই অতীতকেই ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাইছি । 50 বছর আগে এই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ঝুলন সাজানো হত । সেখানে দেখা যেত মাটির পুতুলের বৈচিত্র্য । গত তিনবছর ধরে আমি ঝুলনের আয়োজন করছি । বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন এই ঝুলন দেখতে । তাঁরা তাঁদের উত্তরপ্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে আসছেন । নিজেরা স্মৃতিমেদুর হচ্ছেন । সঙ্গের ছোট ছেলেমেয়েকে ঝুলনের ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে পরিচিত করাচ্ছেন । এখানেই তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছি ৷"