পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Jhulan Yatra 2022: 50 বছরের পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঘরেই ঝুলনযাত্রা মৃণালের - বরানগরের ঝুলনযাত্রা

গ্রামের রাস্তাঘাটে ঝুলন সাজানো প্রায়ই চোখে পড়লেও শহরে তা বিরল বলাই যায় ৷ তবে বংশপরম্পরায় চলে আসা 50 বছরের পুরনো ঝুলনকে তিন বছরে নিজ প্রচেষ্টায় বাঁচিয়ে রেখেছেন বরানগরের বাসিন্দা মৃণাল বক্সি ৷ তাঁর হাত ধরেই বক্সী বাড়ির একটি ঘরে বেঁচে রয়েছে পারিবারিক এই ঝুলন ঐতিহ্য ৷ নাম দিয়েছেন বক্সী বাড়ির ঝুলন(Jhulan Yatra 2022)৷

Jhulan Yatra
বক্সী বাড়ির ঝুলনযাত্রা

By

Published : Aug 11, 2022, 4:24 PM IST

বরানগর, 10 অগস্ট: লোককথা, লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে বেঁচে থাকে একটি জনপথের ইতিহাস । যা সাক্ষ্য দেয় অতীতের । তাই লোকসংস্কৃতিকে বলা হয় একটি জাতি ও সভ্যতার শিকড় । ঝুলনযাত্রা হল সেই লোকসংস্কৃতির একটি অংশ । যার মাধ্যমে ধর্ম ও জনজীবনের ছবি ফুটে ওঠে । সময়ের অগ্রগতিতে আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে গিয়েছে । ঝুলনও তার ব্যতিক্রম নয় । বংশপরম্পরায় 50 বছর ধরে বরানগরের দর্জিপাড়ার বক্সী বাড়িতে ঝুলনযাত্রা অনুষ্ঠিত হত ৷ মাঝে তা বন্ধ হয়ে যায় ৷ এরপর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বিগত তিন বছর ধরে একটি ঘরেই পারিবারিক ঝুলনযাত্রা পালন করে আসছেন মৃণালকান্তি বক্সী(Jhulan yatra at home to save 50 years of family tradition at Baranagar)।

বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানিতে একসময় কাজ করতেন মৃণালবাবু । অবসরের পরে নেশা হয়ে ওঠে বাংলার মাটির পুতুল সংগ্রহ । আর তা করতে গিয়ে বাংলার বিভিন্ন গ্রাম জনপথের লোকশিল্পের সঙ্গে পরিচিত হন । নিজে প্রত্যক্ষ করেন কীভাবে বাংলার কৃষ্টি হারিয়ে যাচ্ছে । পুতুল তৈরির কারিগরদের মধ্যেও যে শ্রেণিবিভাগ রয়েছে তা তখন জানতে পারেন । কারিগরদের নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে সেই বিষয়টি পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার একক লড়াইও শুরু করেন । পাশে পেয়েছিলেন পরিবারকে ।

আরও পড়ুন :করোনাকালে দোসর বন্যা, তবু চিরন্তন মাটির দিওয়ালি গড়ছে জঙ্গলমহলের কুমোরপাড়া

500 বছর আগে শ্রীচৈতন্যদেব বরানগর পাঠবাড়িতে এসেছিলেন । আজও তাঁর ছেড়ে যাওয়া খড়ম এবং অঙ্গবস্ত্র জনসাধারণের আকর্ষণের কেন্দ্রে । এই অঞ্চলে শ্রীচৈতন্যের প্রভাব থেকেই বিভিন্ন উৎসব ধুমধাম করে পালিত হত । যার মধ্যে ঝুলনযাত্রা ছিল অন্যতম । সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার ইচ্ছেয় মৃণালবাবু ঘরেই শুরু করেন ঝুলনযাত্রা ৷

তাঁর কথায়, "আমি সেই অতীতকেই ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাইছি । 50 বছর আগে এই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ঝুলন সাজানো হত । সেখানে দেখা যেত মাটির পুতুলের বৈচিত্র্য । গত তিনবছর ধরে আমি ঝুলনের আয়োজন করছি । বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন এই ঝুলন দেখতে । তাঁরা তাঁদের উত্তরপ্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে আসছেন । নিজেরা স্মৃতিমেদুর হচ্ছেন । সঙ্গের ছোট ছেলেমেয়েকে ঝুলনের ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে পরিচিত করাচ্ছেন । এখানেই তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছি ৷"

ঘরেই ঝুলনযাত্রা মৃণালের

আরও পড়ুন :টিভিতে এবার পুতুল বানানোর গল্প, আসছে নতুন ধারাবাহিক 'খেলনা বাড়ি'

কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণি, উল্টোডাঙার দক্ষিণদাড়ি, বেলঘরিয়ার নিমতা, কুমোরটুলি-সহ এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও শহর থেকে পুতুল সংগ্রহ করে বেড়ান মৃণালবাবু । ঝুলনের জন্য বিশেষ অর্ডারও দিয়ে থাকেন । সেই মতো শিল্পীরাও তৈরি করে দেয় । এই জন্যই পুতুলরানি, আরতি ও মধুসূদন পালদের হাতে ঝুলনের পুতুল তৈরির শিল্প ক্ষীণ হলেও বেঁচে রয়েছে ।

এই বিষয়ে মৃণালবাবু বলেন, "প্রায় তিনশো পুতুল এবার আমার ঝুলনে ব্যবহার করেছি । এইসব পুতুল বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েই সংগ্রহ করেছি । তা করতে গিয়ে শিল্পীদের সুখদুঃখের কথা জেনেছি । আমার ঝুলনে রাধাকৃষ্ণ যেমন রয়েছে তেমনই গ্রাম থেকে শহরের জীবনযাপনের ছবিও পুতুলের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি ৷"

তাঁর মতে ঝুলন শুধু উৎসব নয় । এই উৎসবকে ঘিরে গড়ে ওঠা শিল্প এবং শিল্পীর শ্বাসপ্রশ্বাসকে চালু রাখার প্রয়াসও বটে ।

আরও পড়ুন :মোবাইল নয়, শিশুর মানসিক বিকাশে ভরসা পুতুল নাচ

ABOUT THE AUTHOR

...view details