কলকাতা, 10 জুন : বিশ্ববিদ্যালয়ের সবস্তরে আলোচনার পর অবশেষে এই বছর সমস্ত বিভাগের চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা নো কন্টাক্ট মোডে করার সিদ্ধান্ত নিল যাদবপুর কর্তৃপক্ষ । ইতিমধ্যে সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছে পরীক্ষার নীতি নির্ধারণকারী সর্বোচ্চ সংস্থা এগজ়ামিনেশন বোর্ড । কোরোনা আবহে সশরীরে সিট-ইন পরীক্ষা সম্ভব ছিল না। সেই কারণেই এই বিকল্প পথ বেছে নেওয়া হয়েছে বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে ।
এই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, "এবছর পড়ুয়াদের ক্যাম্পাসে আমরা আনছি না । তাঁদের না এনেই চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষাটা আমরা নেব । এটা অনলাইন পরীক্ষা নয় । এটা ডিস্ট্যান্স মোডে পরীক্ষা । এর মাধ্যমে প্রথাগত সেমেস্টার পরীক্ষার বদলে হোম অ্যাসাইনমেন্ট, হোম প্রোজেক্ট, মিনি প্রোজেক্ট নেওয়া হবে । 8 জুন পরীক্ষার রেগুলেশন সংক্রান্ত সর্বোচ্চ বডি এগজ়ামিনেশন বোর্ডের বৈঠক হয়েছিল । সেখানে কলা, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়রিং ও ইন্টার্ন-ডিসিপ্লিনারি সমস্ত বিভাগের প্রধানরা ছিলেন । সেই বৈঠকেই নো কন্টাক্ট মোডে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে ।"
প্রথমদিকে ইঞ্জিনিয়রিং বিভাগের পড়ুয়াদের জন্যই সশরীরে পরীক্ষার বিকল্প খোঁজা শুরু হয়েছিল । কারণ, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বহু পড়ুয়া ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে চাকরির অফার পেয়েছিলেন । তাঁদের বেশিরভাগেরই জুলাই মাসে কাজে যোগ দেওয়ার কথা । কিন্তু কোরোনা আবহে লকডাউন এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব ছিল না । আবার সময়ের মধ্যে পড়ুয়াদের মার্কশিট না দিলে তাঁদের চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল । তাই সশরীরে পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে নো কন্ট্যাক্ট মোডে কী করে পরীক্ষা নেওয়া যায় তার উপায় খুঁজতে উদ্যত হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় । সব স্তরের অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার পর হোম অ্যাসাইনমেন্ট ও পুরানো সেমেস্টারের ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সেমেস্টারের মূল্যায়ণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের বৈঠকে । সেই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয় এগজ়ামিনেশন বোর্ড ।
চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, "ইঞ্জিনিয়রিং বিভাগ এ ব্যাপারে আগে থেকেই অনেকটা এগিয়ে ছিল । কারণ ইঞ্জিনিয়রিংয়ের 650-র উপর পড়ুয়া চাকরি পেয়ে গেছেন । তাঁদের অনেককেই জুলাই-অগাস্টে কাজে যোগ দিতে হবে । ফলে, ওদের জন্য সময়ে গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ করা খুব দরকার । না হলে তাঁরা চাকরি হারাতে পারেন । বর্তমানে চাকরির বাজার তো খুব একটা ভালো নয় । সেখানে পড়ুয়ারা যদি প্রস্তুত না হয়, কাজে যোগ দেওয়ার মতো অবস্থায় না থাকে তাহলে কোনও কোনও কম্পানি কাজে যোগ দেওয়ার সময়সীমা নাও বাড়াতে পারেন । আবার চাকরির অফারও ফিরিয়ে নিতে পারে । পরীক্ষা নিতে না পারায় কোনও পড়ুয়া যাতে চাকরি না হারান সেই কারণে আমরা ডিসট্যান্স মোডে পরীক্ষাটা করছি । ইঞ্জিনিয়রিংয়ের পরীক্ষার সমস্ত কার্যপ্রণালী শেষ হয়ে যাবে 11 জুলাইয়ের মধ্যে । ওই তারিখের মধ্যেই তাঁদের আমরা কোর্স সম্পূর্ণ করার সার্টিফিকেট দিয়ে দেব ।"
ইঞ্জিনিয়রিংয়ের মতো কলা ও বিজ্ঞান বিভাগেও নো কন্ট্যাক্ট মোডের মাধ্যমে চূড়ান্ত সেমেস্টারের মূল্যায়ণের কথা ভাবা হয় । দুটি বিভাগের তরফেই প্রথমদিকে আপত্তি জানানো হয় । কিন্তু পরে তারাও নো কন্টাক্ট মোডেই মূল্যায়ণের সিদ্ধান্ত নেয় । যা এগজ়ামিনেশন বোর্ডে পাশ হয়ে যায় ।
নো কন্টাক্ট মোডে কীভাবে করা হবে মূল্যায়ণ ? সহ-উপাচার্য বলেন, "হোম অ্যাসাইনমেন্ট আছে । কিছু কিছু বিভাগে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা হয়েছিল । সেই অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ভিত্তিতেও কিছুটা মূল্যায়ণ হবে । আর একটা জিনিস করা হচ্ছে । পুরানো যেসব সেমেস্টার হয়েছে তার মধ্যে যে সেমেস্টারের ভালো ফল হয়েছে সেটাকেও মূল্যায়নের মধ্যে ধরা হবে । পুরানো সেমেস্টারে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি । অতীতের পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে আমরা বেস্ট অ্যগ্রিগেট অন লাস্ট সেমেস্টার করছি । কন্টিনিউয়াস ইভ্যালুয়েশন সিস্টেমে যে সব অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে । তার সঙ্গে আমরা হোম অ্যাসাইনমেন্ট যেগুলো দিচ্ছি তার মাধ্যমে চূড়ান্ত মূল্যায়ণ হবে । সব বিভাগেই মোটামুটিভাবে এই একই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হবে । বিভাগ অনুযায়ী তাতে একটু পার্থক্য থাকতে পারে । ল্যাব প্র্যকটিকাল পরীক্ষাগুলো আমরা বিভাগের উপরই ছেড়ে দিয়েছি । সেগুলোও নন কন্টাক্ট মোডে হচ্ছে । সেখানে টেলিফোনিক ভাইবা নেওয়া হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে ।"
চিরঞ্জীববাবু জানাচ্ছেন, 15 জুন থেকে ইঞ্জিনিয়রিংয়ের হোম অ্যাসাইনমেন্ট পাঠানো শুরু হবে । অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে 20-25 তারিখ নাগাদ অ্যাসাইনমেন্ট পাঠানোর কাজ শুরু হবে । হোম অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হলেও সব পড়ুয়া যাতে সমানাধিকার পায় সেদিকে কড়া নজর রাখছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । স্মার্ট গেজেট বা ইন্টারনেট না থাকার জন্য কোনও পড়ুয়া যাতে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে । প্রয়োজনে গাড়ি পাঠিয়ে পড়ুয়াদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করে আনার পরিকল্পনাও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ।