কলকাতা, 25 ফেব্রুয়ারি : দিল্লি সংঘর্ষের প্রতিবাদে সরব শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি । হিংসা বিরোধী স্লোগান তোলেন যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা । আজ ক্যাম্পাস থেকে প্রতিবাদ মিছিল করেন । পোস্টার হাতে, স্লোগানের সঙ্গে শহরের রাস্তায় নামেন তাঁরা । মিছিল থেকে দাবি ওঠে, দিল্লিতে মানুষ হিংসার স্বীকার । কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই ওঠে অভিযোগের আঙুল । পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অভিযোগ করেন এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (FETSU) তরফেই দিল্লির পরিস্থিতির প্রতিবাদে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল । বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সেই মিছিলে অংশগ্রহণ করেন । FETSU-র ইউনিয়ন রুমের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাস ঘুরে 4 নম্বর গেট থেকে বের হয় । প্রায় 10 মিনিট ধরে তাঁরা অবরোধ করে রাখেন 4 নম্বর গেটের সামনে রাস্তা । স্লোগান তোলেন ।
প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন ছাত্র-ছাত্রীরা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা আজ প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থির করেন । প্রথমে কলেজের পোর্টিকোতে জমায়েত হন । তারপর মিছিল করে কলেজ স্ট্রিটে হাঁটেন তাঁরা । প্রায় 10 মিনিটের জন্য কলেজ স্ট্রিট মোড় অবরোধ করা হয় ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে FETSU-র চেয়ারপার্সন অরিত্র মজুমদার বলেন, "আজ 2-3 মাস ধরে দিল্লির বুকে শান্তিপূর্ণভাবে NRC, CAA, NPR-এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ । কিন্তু, বারবার করে আমরা দেখতে পাচ্ছি, কেউ বন্দুক নিয়ে ঢুকে গুলি চালিয়ে দিচ্ছে, কোনও সময় স্টেট মেশিনারি দিয়ে, পুলিশ দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা হচ্ছে । জামিয়ার পড়ুয়াদের উপর প্রথম চড়াও হয় । আমরা তারই একটা চরম পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি আজ । পুলিশের সামনে তাঁরা গুলি চালাচ্ছে । ইটবৃষ্টি হচ্ছে । এইভাবে পরিকল্পিতভাবে দিল্লিজুড়ে আগুন লাগাবার চেষ্টা করা হচ্ছে । দিল্লি সরকার ও পুলিশ প্রত্যেকে দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দেখছে । তাঁরা নিয়ন্ত্রণ না করে বিষয়টিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন । তীব্র ধিক্কার জানাই । প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ করতে না পারলে জনগণের হাতে ছেড়ে দিন । জনগণ বুঝিয়ে দেবে কীভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে হয়, প্রতিরোধ করতে হয় । আজ ছাত্র-ছাত্রীরা পথে নেমেছি এই বার্তা নিয়ে যে, প্রত্যেকের যে কোনও বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার আছে । সেই প্রতিবাদের উপর যদি এই ধরনের কোনও হামলা হয় তার কিন্তু যোগ্য জবাব দেবে জনগণ, জনসমাজ, শিক্ষিত সমাজ ।"
দিল্লি সংঘর্ষের বিরোধিতায় যাদবপুর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের তরফ থেকে সায়ন চক্রবর্তী বলেন, "দিল্লিতে যে ছবি আমরা দেখছি, একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে এটা হচ্ছে । এটা দাঙ্গা নয়, এটা সংগঠিতভাবে তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে । সেখানে পুলিশের ভূমিকাও থাকছে দাঙ্গাবাজদের পক্ষে । তাঁরা পাথর ছুড়ছে । রাস্তায় যারা গুলি চালাচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করছে না । যেভাবে বেছে বেছে বিশেষ কোনও সম্প্রদায়ের ঘরে আগুন লাগানো হচ্ছে, আক্রমণ হচ্ছে তাতে গোটা দেশ ভীত । কাল একটা ভিডিয়োয় দেখলাম, পুলিশের বুটের তলায় কয়েকজনকে রেখে তাঁদের মেরে ভয় দেখিয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে বলা হচ্ছে । এর থেকে ঘৃণ্য দিন আগে দেশ দেখেনি । দেশের ছাত্র-ছাত্রী সমাজ প্রতিবাদ করেছে। তার অংশ হিসেবে আমরা প্রেসিডেন্সির ছাত্র সমাজ এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানালাম । আমরা এই ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনের সামনে, সংগঠিতভাবে হিংসা ছড়ানোর যে পরিকল্পনা, তার সামনে মাথা নোয়াব না । আমরা রাস্তায় থাকব, প্রতিবাদ জানাব ।"