কলকাতা, 17 এপ্রিল : ভাষা আমাদের মৌলিক অধিকার । জন্মের পর থেকেই একজন শিশু যা দিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে, তাই হল ভাষা । কিন্তু অতীত ইতিহাস বলছে, ভাষা হল সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক । তাই যেকোনও সংস্কৃতিকে উপস্থাপিত করতে গেলে সেই ভাষায় তার ব্যুৎপত্তিই প্রধান দেখার বিষয় ।
আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা মুখে বাংলা ভাষায় কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে ইংরেজদের শেখানো ভাষাকেই বাড়তি গুরুত্ব দিই । আবার আমাদের মধ্যে একজন ভারতীয় হিসাবে হিন্দি ভাষা ব্যবহারের চর্চাও রয়েছে (Hindi as National Language) । কিন্তু রাইট টু চয়েজ অর্থাৎ বেছে নেওয়ার অধিকার বাঙালির জন্মগত হলেও বারবার রাষ্ট্র নামক যন্ত্র তাঁদের উপর কখনও ইংরেজি কখনও বা হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে । এখন প্রশ্ন বাংলার মাটিতে ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষার আগ্রাসনে শেষ পর্যন্ত কি হারিয়ে যাবে বাঙালির মাতৃভাষা ।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গোটা দেশে একটি ভাষাকে পরস্পরের মধ্যে ভাব আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে মাধ্যম করে তোলার কথা বলেছেন । তাঁর মতে, সেই ভাষাটি হওয়া উচিত হিন্দি । কোনও সন্দেহ নেই হিন্দিকে কেন্দ্র করে একটা জাতীয় আবেগ তৈরি করতে চেয়েছেন তিনি । তবে তাঁর এই বক্তব্য বিভিন্ন রাজ্যের নিজস্ব ভাষা থাকলেও হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস হিসাবে দেখছেন কেউ কেউ । আর এই বিতর্ক নিয়েই জোরদার আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে ।
বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো বাংলা ভাষাভাষি প্রধান রাজ্যের মানুষ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই উদ্যোগে বিভাজনের লুকানো বিষ দেখতে পাচ্ছেন । এমতাবস্থায় রাজনীতির কারবারিরা এর মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মানুষের দুর্দশা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর একটা কৌশল হিসেবেই দেখছে ।
আরও পড়ুন : Babul on Asansol Victory : "আসানসোল প্রমাণ করল, তারা আমাকেই ভোট দিত", মন্তব্য বাবুলের
সাধারণত এই রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের নেতারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, সেই স্বাধীনতার আগে থেকে উপনিবেশিক শক্তি তাঁদের ভাষাকে ভারতীয়দের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্যোগ আদতে দেশবাসীর নিজস্ব সত্ত্বা, নিজস্ব ভাষাকে ব্যবহারের উদ্যোগ মাত্র । কাজেই এটা একটা আন্দোলন ।
প্রয়াত হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেবের কন্যা, সুস্মিতা দেব বিভিন্ন ভাষাগত সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন ৷ জন্মসূত্রে একজন বাঙালি এবং প্রধানত অসম এবং ত্রিপুরায় তাঁর অ্যাকাডেমিক এবং রাজনৈতিক কর্মজীবন । তিনি এখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সদস্য । তিনি অমিত শাহের এই বক্তব্য সম্পর্কে বলেছেন, "এটি কিছুটা অযৌক্তিক প্রস্তাব । এই হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা লোকেদের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় বিভাজন নিয়ে আসতে পারে । আমি নিশ্চিত যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হিন্দিকে ইংরেজির বিকল্প হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস শেষ পর্যন্ত অন্যান্য ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষার বিকল্প হিসেবে হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসাবে তুলে ধরবে । প্রতিটি মানুষ তাঁর নিজের মাতৃভাষা বলতে গর্বিত। সেক্ষেত্রে কেউ স্বেচ্ছায় হিন্দি শিখলে ক্ষতি নেই । তবে হিন্দিকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হবেই ।"