কলকাতা, 6 জুন:পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণের ঘটনায় মুখ খোলায় কলকাতা পুলিশের ডিসি (ডিডি) পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল ডিআইজি ট্রেনিং করে । এবার ফের একবার এক গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল দাপুটে পুলিশ আধিকারিকের নাম দময়ন্তী সেনকে ৷ কলকাতা পুলিশের বিশেষ নগরপালের পদ থেকে সরিয়ে এবার তাঁকে পাঠানো হল এডিজি ট্রেনিং পদে । এদিন তিনি কলকাতা পুলিশের স্পেশাল বা বিশেষ নগরপাল 2 পদে কর্মরত ছিলেন ৷
কিন্তু আচমকাই কলকাতা পুলিশের বিশেষ নগরপালের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে কেন রাজ্য পুলিশের ট্রেনিং পদে পাঠানো হল দময়ন্তী সেনের মতো দক্ষ অফিসারকে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ সম্প্রতি কালিয়াগঞ্জের ঘটনায়, আলিপুরের রসিকা জয়েন নামে এক গৃহবধূর খুনের ঘটনা থেকে শুরু করে একাধিক ধর্ষণকাণ্ডের তদন্ত করেছেন দময়ন্তী সেন ৷ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বিভিন্ন তদন্তের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি ৷ 2018 সালে কাকদ্বীপে খুন হয় সিপিএম সমর্থক এক দম্পতি ৷ চলতি বছরে হাইকোর্ট সিট গঠন করে ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্বও দেয় দময়ন্তী সেনকে ৷
রাজ্যের আইপিএস মহলের একাংশের কার্যত অভিযোগ, দময়ন্তী সেনের এই অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় গতি আনা মোটেও ভালো চোখে দেখা হচ্ছে না। অতীতেও বিভিন্ন তদন্ত নিয়ে উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের সরকারের চাপের মুখে পড়ার অভিযোগ উঠেছে ৷ মনে করা হচ্ছে, সেইরকম কোনও কারণেই কার্যত কলকাতা পুলিশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল দময়ন্তীকে ৷ তাঁকে পাঠানো হল রাজ্যে পুলিশের এডিজি ট্রেনিং পদে, যেটি তুলনামূলক অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ পদ ।
এই বিষয়ে লালবাজারের কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিক মন্তব্য করতে চাননি । প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে আবার দাবি করা হচ্ছে এটা রুটিন বদলি ৷ উল্লেখ্য, 2015 সালে পার্কস্ট্রিটে সুজেট নামে এক মহিলাকে গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয় শহর ৷ সেই সময়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি ডিডি পদে ছিলেন দময়ন্তী সেন । তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ঘটনাটিকে ধর্ষণ হিসেবে মানতে চাননি ৷ এরপরে তৎকালীন কলকাতা পুলিশের নগরপাল আরকে পছনন্দা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছিলেন এটি ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ঘটনা নয় । কিন্তু সেই সময় কলকাতা পুলিশের ডিসি ডিডি পদে ছিলেন দময়ন্তী সেন । তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, কোনও একটি ব্যাপার তো আছেই ।
আরও পড়ুন: সিপিএম কর্মী মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে সিট গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের
এরপরই তড়িঘড়ি দময়ন্তী সেনকে কলকাতা পুলিশের ডিসি ডিডি পদ থেকে সরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কম গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং ডিআইজি ট্রেনিং পদে। বেশ কয়েক বছর পর যখন দার্জিলিং অর্থাৎ পাহাড় উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং সেখানে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে সেই সময়ে রাজ্য পুলিশে ফের একবার দময়ন্তী সেনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরিয়ে আনা হয় এবং দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বেই পাহাড় ফের একবার শান্ত হয় । এরপরই কলকাতা পুলিশের বিশেষ নগরপাল 2 পদে বসানো হয় তাঁকে । কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে রাজ্যের একাধিক নারী নির্যাতনের ঘটনা থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনার তদন্ত ভার গিয়ে পড়ে দময়ন্তী সেনের উপর । অনেকের দাবি কার্যত সে কারণেই ফের একবার তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল ৷