পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

আমায় রাজভবনে খাঁচায় ভরে রাখা যাবে না : জগদীপ ধনকড়

আপনাদের রাজ্যপাল এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে একটা অনুষ্ঠানেরও আমন্ত্রণ পাননি । পুরো দেশে এখনও পর্যন্ত আমি একা এমন রাজ্যপাল যাকে মুখ্যমন্ত্রী দীপাবলিতে শুভেচ্ছা জানাননি । আমি কষ্ট পেয়েছি । তবে আমায় রাজভবনে একটা খাঁচায় ভরে রাখা যাবে না : রাজ্যপাল

Govornor

By

Published : Nov 3, 2019, 10:27 PM IST

Updated : Nov 4, 2019, 4:26 PM IST

কলকাতা, 3 নভেম্বর : সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । তিনি আজ একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে জানান, পশ্চিমবঙ্গে হিংসা দেখলে তিনি ব্যথিত হন । পাশাপাশি, সন্দেশখালির ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন ।

রাজ্যের সাম্প্রতিক কিছু হিংসাত্মক ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল বলেন, "আমি কোনো একটি ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিইনি । যদি আমি মুর্শিদাবাদের ঘটনাকে হাইলাইট করি তাহলে তার মানে একজন শিক্ষক, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও পুত্রসন্তানকে হত্যা করার বিষয়টি হাইলাইট করছি । কে তাঁকে হত্যা করল, কেন তাঁকে হত্যা করা হল, কী উদ্দেশ্য ছিল এসব নিয়ে আমি ভাবিনি । আমি শুধু বলেছি, আমি ব্যথিত । আমাদের যথাসাধ্য করা উচিত । আমি যা রিপোর্ট পাচ্ছি তা খুবই উদ্বেগজনক । তদন্ত নিরপেক্ষ হওয়া উচিত । "

কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিক খুন হওয়ার ঘটনার পর সেখানে থাকা বাঙালি শ্রমিক যারা রাজ্যে ফিরতে ইচ্ছুক তাঁদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই বিষয়ে রাজ্যপাল বলেন, "এ বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে । মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সবাই পড়েছেন । আমি তো এটাই মনে করি, জঙ্গিরা যাকেই হত্যা করুক সে ভারতের নাগরিক । না তাঁর কোনও ধর্ম আছে, না এলাকা । আমরা ব্যথিত । জঙ্গিদের এই কাজের নিন্দা করা উচিত । যদি কেউ জঙ্গিদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন, বলতে শুরু করেন যে, এখানে ব্যর্থতা ছিল, তাহলে আমরা এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুডকে উপেক্ষা করছি ।"

রাজ্যপাল আরও বলেন, "পুরো বিশ্ব জঙ্গি কার্যকলাপ ইশুতে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে । গোটা বিশ্ব । যাদের পাশে পাওয়ার আশা ছিল না, তাঁরাও দাঁড়িয়েছে । বিশ্বে এমন দেশ খুব কম আছে যারা বলছে না কাশ্মীরে ভারত যা করছে সেটা ঠিক করছে । কাশ্মীরে ৭০ বছর পুরনো একটা রোগকে শেষ করার চেষ্টা হয়েছে । তা নিয়ে কেউ রাজনীতি করলে সেটা বেদনাদায়ক । আর রাজনীতি করলে নিজের দিকেও দেখতে হবে । আমি ব্যথিত হই যখন আমি পশ্চিমবঙ্গে ভায়োলেন্স দেখি । রাজনৈতিক রং খুঁজবেন না । জঙ্গি জঙ্গিই হয় । জঙ্গিদের জন্য কী তদন্ত করা হবে? জঙ্গিদের দমন করতে হবে । যে জঙ্গিরা টুইন টাওয়ারকে নিচে নামিয়েছিল, তাঁদের কি কিছুই করা হয়নি ? ওবামা তাঁদের মেরে ফেলেছিল । ট্রাম্পও একই জিনিস করেছেন । এই প্রথমবার ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের ধ্বংস করার উদ্যোগ নিয়েছে । গোটা দেশ সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে । আমি নিশ্চিত যে, প্রত্যেকের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানানো উচিত ।"

শনিবার ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ অমান্য করে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো হয়েছে । গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । আজ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "প্রথমত, আমি ভারতের সব নাগরিককে আহ্বান জানাচ্ছি নিজের অধিকারের সঙ্গে দায়িত্বের প্রতি খেয়াল রাখুন । খেয়াল রাখুন আইনের গণ্ডি যেন কেউ পার না করে । এতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয় । দ্বিতীয়ত, ভারতের গণতন্ত্র একটা বিষয়ের উপরই বেঁচে আছে সেটা হল আইনের প্রতি সন্মান । আমার কাছে কিছু বিষয় এসেছে, যেখানে মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বেশ কয়েকবছর ধরে মানা হয়নি । আমি রাজ্যপাল, ভারতের সংবিধান রক্ষা করার শপথ নিয়েছি । উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের নির্দেশ নিশ্চিতভাবে মানা হচ্ছে কি না এটা দেখা আমার কর্তব্য । যদি দেশের কোথাও আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করা হয় সেটা দুঃখজনক ।"

ছটপুজোর বিষয়ে রাজ্যপাল আরও বলেন, "আমাদের সবসময় আদালতের নির্দেশ মেনে চলা উচিত । আমাদের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত । কলকাতা হাইকোর্টের এবং অন্যান্য ট্রাইবুনালেরও নির্দেশকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত । NGT-র নির্দেশ লঙ্ঘন করার বিষয়ে আমি সংবাদপত্র থেকে জানতে পেরেছি যে, ট্রাইবুনাল রাজ্য সরকারের সচিবকে এই বিষয়ে বক্তব্য জানাতে বলেছে । যেহেতু মামলাটি এখন ট্রাইবুনালে বিচারাধীন তাই এনিয়ে কোনও মন্তব্য করা আমার উচিত হবে না ।"

ভিডিয়োয় শুনুন রাজ্যপালের বক্তব্য...

শনিবার মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল এবং বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার জানত । সেই বিষয়ে আজ রাজ্যপাল বলেন, "মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তার প্রমাণ হিসেবে ওনার কাছে কী তথ্যপ্রমাণ আছে সেটা উনি জানেন । আমি একটাই কথা বলতে পারি, বহু মানুষ আমার সঙ্গে দেখা করেছেন । প্রত্যেক রাজ্যের মানুষ দেখা করেছেন । রাজনীতির বড় বড় ব্যক্তিত্ব দেখা করেছেন । ব্যবসা জগতের বড় বড় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দেখা করেছি । বড় বড় আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে । তাঁরা বলেছেন, তাঁদের প্রাইভেসি এখানে কম্প্রোমাইজড । এটা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়, আত্মবিশ্লেষণের বিষয় । আমার কাছে কোনও তথ্য তো নেই । কিন্তু, যেটা বলেছেন সেটা তাঁরা অনুভব করেছেন বলেই বলেছেন । "

পাশাপাশি, আজ ফের রাজ্য সরকারের কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করেন রাজ্যপাল । তিনি বলেন, "আপনাদের রাজ্যপাল এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে একটা অনুষ্ঠানেরও আমন্ত্রণ পাননি । পুরো দেশে এখনও পর্যন্ত আমি একা এমন রাজ্যপাল যাকে মুখ্যমন্ত্রী দীপাবলিতে শুভেচ্ছা জানাননি । আমি কষ্ট পেয়েছি । তবে আমায় রাজভবনে একটা খাঁচায় ভরে রাখা যাবে না । একটা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে । অনেক দেশ আসছে অথচ বাংলার রাজ্যপাল নেই কোথাও । আমায় জায়গায় এসে দেখুন । জানতে পারবেন কী হয় । এটা কোনও পথ নয় । কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয় ।"

Last Updated : Nov 4, 2019, 4:26 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details