কলকাতা, 20 জানুয়ারি : উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ প্রতিটি উচ্চমাধ্যমিক স্তরের স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দিয়েছিল, নিজ নিজ দায়িত্বে বিষয় নির্বাচন করে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নিতে । যা নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছিল শিক্ষক মহল । তারপরই আজ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে উচ্চমাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণির প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার পাঠ্যক্রম পাঠিয়ে দেওয়া হল প্রধান শিক্ষকদের কাছে। কিন্তু, গতবছরের মার্চ থেকে বন্ধ স্কুল । ক্লাস হয়নি একদিনও । তা সত্ত্বেও প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার দিন ও পাঠ্যক্রম প্রকাশ করতেই আবারও স্কুল খোলার দাবিতে সরব হল শিক্ষক মহল ।
মঙ্গলবার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ দ্বারা জারি করা প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার পাঠ্যক্রমের 'সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি'তে বলা হয়েছে, "সকল বিদ্যায়তনের প্রধানদের জানানো হচ্ছে যে 2021 সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা এবং একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সূচি প্রকাশিত হয়েছে । 2021 সালের 15 জুন থেকে শুরু করে 2021 সালের 3 জুলাই পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা চলবে । ব্যবহারিক তথা প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা 10 মার্চ থেকে 31 মার্চের এর মধ্যে বিদ্যায়তনগুলিকে নিতে হবে । প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে করানোর প্রেক্ষিতে বিদ্যায়তনগুলি নিজ নিজ দায়িত্বে ও ব্যবস্থাপনায় সংসদ প্রেরিত তালিকাভুক্ত বিষয়গুলি থেকে নির্বাচন করে পরীক্ষা সম্পূর্ণ করবেন এবং পরীক্ষা শেষে 20 এপ্রিলের মধ্যে প্র্যাকটিক্যালের নম্বর ও উত্তরপত্র সংসদে জমা দেবেন।"
নির্দিষ্ট সময়ে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পাঠ্যক্রম কী হবে তাও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে । সূত্রের খবর, অন্যান্য বছরের তুলনায় সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে প্র্যাকটিক্যালের পাঠ্যক্রম । কিন্তু ক্লাস না করিয়ে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে? সেই আশঙ্কায় অবিলম্বে স্কুল খোলার দাবি তুলছে শিক্ষক মহলের একাংশ ।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বিজ্ঞপ্তি স্টেট ফোরাম অফ হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি বলেন, "বিদ্যায়তন না খুললে এই পাঠ্যক্রম অর্থহীন। প্র্যাকটিক্যাল তো আর বাড়িতে বসে করানো যায় না। তার জন্যে তো স্কুলে আসতে হবে । প্রথমে স্কুল খুলতে হবে । তারপরে সব করা যাবে । না হলে পুরোটাই আইওয়াশ হয়ে যাবে । মার্চ মাসে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নিতে বলেছে । মাঝে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসটা রয়েছে । প্র্যাকটিক্যাল তো একদিনে হয় না । টানা করাতে হয়। অবিলম্বে স্কুল খোলার দাবি জানাচ্ছি । স্কুল না খুললে এগুলোর কোনও অর্থ নেই । গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে যাবে । হাতে কলমে না করলে তারা শিখবে কী করে?"
পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, "ছাত্রদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস তো করানোই হল না । আগে তো স্কুল খোলা হোক, ক্লাস করানো হোক, তারপর তো পরীক্ষা । কিছুই তো হল না। ক্লাস হল না তো কী পরীক্ষা নেবে? আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য, আগে স্কুল খুলে প্র্যাকটিক্যাল করাও । প্র্যাকটিক্যাল তো বাড়িতে বসে বা অনলাইনে হবে না । প্র্যাকটিক্যাল তো ফিজ়িক্যালি শেখাতে হয়। হাতে ধরে না শিখিয়ে পরীক্ষা কী নেব?"
আরও পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিকের সূচিতে পরিবর্তন, 30 জুনের বদলে পরীক্ষা শেষ 2 জুলাই
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, "গতবছরের 24 ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে ব্যবহারিক বিষয়সমূহের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল । তাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তার বিরোধিতা করে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির কাছে দাবি জানিয়েছিল । ব্যবহারিক পরীক্ষার বিষয় তথা টপিক নির্ধারণ করার দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে গ্রহণ করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষার যে মূল্যায়ন করা হয় সেই পরীক্ষার খাতা সংসদে পাঠানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে । মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উভয় দাবিকে মান্যতা দেওয়ার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি, সরকারের কাছে সমিতির বিনীত অনুরোধ, অন্তত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চের 10 তারিখে প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা শুরুর আগে পর্যন্ত দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের ব্যবহারিক বিষয় সমূহের ক্লাস হাতে-কলমে আয়োজন করার জন্য যথাযথ নির্দেশিকা সরকার প্রকাশ করলে অসংখ্য পরীক্ষার্থী উপকৃত হবে ।"