পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কমানো হচ্ছে বেড, কোরোনা যুদ্ধ থেকে সরে আসছে সরকার; বলছেন চিকিৎসকরা

স্বাস্থ্য দপ্তরের সাম্প্রতিক এক নির্দেশে জানানো হয়েছে, এ রাজ‍্যে কোরোনার সংক্রমণ এখন কমছে । যে কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে কোরোনা রোগীদের ভরতির সংখ‍্যাও কমছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ‍্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের যে সব বেড কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছিল, তা হাসপাতালগুলিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে ।

By

Published : Dec 22, 2020, 7:42 AM IST

covid
corona

কলকাতা,22 ডিসেম্বর: স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে, কোরোনার সংক্রমণ কমছে, যার জেরে হাসপাতালে ভরতির সংখ্যাও কমছে । তাই রাজ‍্যজুড়ে 13টি বেসরকারি হাসপাতালের 748টি বেডকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলিকে ফিরিয়ে দেওয়া হল । কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই বেডগুলি নিয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তর । এই বিষয়ে রাজ‍্যের সরকারি চিকিৎসকরা বলেন, কোরোনার সংক্রমণ কমে গিয়েছে কি না তা বোঝা মুশকিল। কারণ কোরোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। কোরোনা আর এখন সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা । কারণ কোরানার বিরুদ্ধে জারি যুদ্ধ থেকে সরকার ক্রমশ সরে আসছে বলে তাঁরা মনে করছেন ।

কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে রাজ‍্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বেড নিয়ে ওই হাসপাতালগুলিকে কোরোনা হাসপাতাল হিসেবে চিহ্ণিত করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। জেনারেল বেডের পাশাপাশি ওই বেডগুলির মধ্যে সিসিইউ এবং এইচডিইউ-এর বেডও রয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য দপ্তরের সাম্প্রতিক এক নির্দেশে জানানো হয়েছে, এই রাজ‍্যে কোরোনার সংক্রমণ এখন কমছে। যে কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে কোরোনা রোগীদের ভরতির সংখ‍্যাও কমছে । এই পরিস্থিতিতে রাজ‍্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের যে সব বেড কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছিল ওই সব বেড হাসপাতালগুলিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে । ফলে ফিরিয়ে দেওয়া ওই বেডগুলি নিজেদের কাজে লাগাতে পারবে ওই হাসপাতালগুলি । এই নির্দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে কলকাতা সহ রাজ‍্যের বিভিন্ন প্রান্তের মোট 13টি বেসরকারি হাসপাতালের 748টি বেডকে হাসপাতালকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । এই 13টি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট 1448টি বেড নেওয়া হয়েছিল। 748টি বেড ফিরিয়ে দেওয়ার ফলে এখন এই 13টি হাসপাতালের 700টি বেডে কোরোনা রোগীদের চিকিৎসা হবে । স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী, এই 700 টি বেডকেও পর্যায়ক্রমে ফেরানো হবে । তবে, একই সঙ্গে ওই নির্দেশে জানানো হয়েছে, যদি প্রয়োজন দেখা দেয়, তা হলে তিন দিনের নোটিশে ফিরিয়ে দেওয়া এই বেডগুলিকে আবার কোরোনা চিকিৎসার জন্য নেবে স্বাস্থ্য দপ্তর । স্বাস্থ্য দপ্তরের এই নির্দেশের বিষয়ে সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "এরাজ‍্যে কোরোনার সংক্রমণ কমছে কি না তা বোঝা মুশকিল। কারণ কোরোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। তার উপর কোরোনা সংক্রমণের হার পরিকল্পিতভাবে 8 শতাংশের বেশি দেখানো হবে না, তার জন্য কোরোনা পরীক্ষার রিপোর্টে কোথায় কতটা পজ়িটিভ, কোথায় কতটা নেগেটিভ আসবে সেটার সংখ্যা নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে যেভাবে পরীক্ষা করানো হচ্ছে, সেটা কখনই বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন নয় । বাস্তব অবস্থা আলাদা । বাস্তবে যদি সত‍্যিই টেস্টের হার কমে যেত, তা হলে খুবই ভালো হত ।" তিনি বলেন, "কিন্তু, বাস্তব অবস্থা যেহেতু বুঝতে পারছি না, সেই জন্য কোরোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র আমাদের জানা নেই ।"

এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন :রাজ্যে কমছে দৈনিক সংক্রমণ

এই নির্দেশের বিষয়ে রাজ‍্যের সরকারি চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "আমাদের একটাই কথা, কোরোনা কি আর সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে ? এটাই আমাদের সন্দেহ। কারণ, প্রতিদিন দিনের শেষে সরকারি একটি বুলেটিন বাদে আমরা আর অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি না ।" এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সব-ই নর্মাল হয়ে গিয়েছে । নিউ নর্মাল নয়, ট্রেন-বাস থেকে শুরু করে মিটিং-মিছিল থেকে শুরু করে সর্বত্র বিশেষ নর্মাল হয়ে গিয়েছে । বিশ্বে কোরোনা সংক্রমণের যে প্রবণতা বিশেষ করে এই সময়ে, তাতে কোনও দেশে কোরোনা সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ চলছে, কোনও দেশে থার্ড ওয়েভ চলছে। ওই সব দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা দিশেহারা । ভ‍্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং সুরক্ষা নির্ধারণ হওয়ার আগেই ভাবা হচ্ছে ভ‍্যাকসিন দিয়ে দেওয়া হবে । তার মানে, ওই সব দেশের অবস্থা কতটা গুরুতর, তা বোঝা যাচ্ছে। এ কথা জানিয়ে মানস গুমটা বলেন, "আমাদের দেশে, প্রকৃতপক্ষে কোরোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে আমরা কোন স্টেজে দাঁড়িয়ে আছি , এটা বুঝতে গেলে সবার আগে আরও বেশি সংখ্যক পরীক্ষা করাতে হবে। কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে হবে, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সার্ভে করতে হবে। এই কাজ যদি আমরা করতে না পারি, তা হলে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না ।"

অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, এ রাজ‍্যে এখন কোরোনা টেস্টের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে । গত এক মাসে টেস্টের সংখ্যা একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল । এখন দেখা যাচ্ছে টেস্টের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, টেস্ট হলেও ফল আসতে ৩-৪ দিন সময় লাগছে । টেস্ট করা হলেও সেসব গ্রিন জ়োনে হচ্ছে, যেখানে সংক্রমণের সংখ্যা কম । অথচ, কন্টাক্ট ট্রেসিং হবে অর্থাৎ যাঁরা সংক্রমিত হচ্ছেন, তাঁদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের পরীক্ষা করানো হবে। যে সব রোগী হোম আইসোলেশনে রয়েছেন, তাঁদের পরিচর্যা যাঁরা করছেন, এবং, ওই রোগীদের পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা করানো হবে, এ সব কাজ না করে শুধুমাত্র সরকারি বুলেটিনের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ হয়ে যাচ্ছে এ রাজ‍্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে।

আরও পড়ুন : কোরোনার নতুন স্ট্রেন নিয়ে আশঙ্কা, আজ জরুরি বৈঠক স্বাস্থ্য মন্ত্রকের

কোরোনা মোকাবিলায় যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, তা যথাযথ না হলেও একটা প্রস্তুতি তো ছিল । এই প্রস্তুতিগুলি এত দ্রুত প্রত‍্যাহার করে নেওয়া হয় যে, তাতে আবার নতুন করে ওই পরিকাঠামো গড়ে তোলাও একটি কঠিন ব‍্যাপার । এ কথা জানিয়ে মানস গুমটা বলেন, "সরকার ক্রমশ বেড কমিয়ে দিচ্ছে, বিভিন্ন সেফ হোম বন্ধ করে দিচ্ছে । আমাদের মনে হয়েছে, কোরোনার বিরুদ্ধে জারি যুদ্ধ থেকে সরকার ক্রমশ সরে আসছে। সরকারের মধ্যে এই যুদ্ধের আর কোনও অগ্রাধিকার, ভাবনা রয়েছে বলে মনে হয় না।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details