কলকাতা, 16 নভেম্বর: সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে শুরু করে লকআপে মৃত্যু-এরকম ঘটনায় একাধিকবার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে কলকাতা পুলিশকে ৷ বুধবার সন্ধ্যায় উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় চুরির ফোন জমা দিতে এসে রহস্য মৃত্যু হল এক ব্যক্তির ৷ এই ঘটনায় যথেষ্ট কালিমালিপ্ত হয়েছে লালবাজার ৷ এমন ঘটনা আগেও একাধিকবার ঘটেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, নিচু তলার এক সংখ্যক পুলিশকর্মীর অদক্ষতা এবং বাজে ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানুষ থানায় আসতে কিছুটা কুণ্ঠাবোধ করেন ৷ এদিকে লালবাজারের তরফে শহরের প্রত্যেকটি থানাকে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া থাকলেও নিচু তলার এক সংখ্যক পুলিশকর্মী তার তোয়াক্কা করেন না ৷ আর তাঁদের জন্যই বিপাকে পড়তে হয় সমগ্র বাহিনীকে ৷ এর আগেও থানায়, লকআপে রহস্য মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৷
2015 সালে বটতলা থানার লকআপে মৃত্যু হয় ভূষণ দেশমুখ নামে এক ব্যক্তির ৷ তিনি মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা হলেও কলকাতার সোনাগাছি এলাকায় একটি গুলি চালানোর ঘটনায় তাঁর নাম উঠে আসে ৷ সিঁথি এলাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন ভূষণ ৷ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল বটতলা থানার পুলিশ ৷ কিন্তু আদালতে পেশ করার আগেই থানার লকআপেই তাঁর রহস্য মৃত্যু হয় ৷ সেবারও অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশ কর্মীরা লকআপের মধ্যেই তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ৷ পরে দেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হয়, পুলিশ কর্মীদের একাংশ ওই ব্যক্তিকে মারধর করেছিল ৷
2017 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহিলাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে স্নেহময় দে নামে এক ব্যক্তিকে সিঁথি থানায় ডেকে পাঠিয়েছিল পুলিশ ৷ থানায় ডিউটি অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই অভিযুক্ত ৷ এরপরই জানা যায়, ওই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৷ পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন ৷ এই ঘটনাতেও পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনেছিল মৃতের পরিবার ৷ এছাড়া 2017 সালের 26 ফেব্রুয়ারি পুলিশের বিরুদ্ধে স্বামীকে থানায় ডেকে পিটিয়ে মারধরের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন মৃতের স্ত্রী শিপ্রা দে ৷ এই ঘটনাটি বর্তমানে বিচারাধীন ৷
বুধবারের ঘটনায় বেনিয়াটোলা লেনের বাসিন্দা মৃত অশোক কুমার সাউকে থানায় ভিতরে পিটিয়ে হত্যা অভিযোগ উঠেছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ৷ ওই ঘটনার সময় সংশ্লিষ্ট থানায় যে অফিসার ইনচার্জ, অতিরিক্ত অফিসার ইনচার্জ-সহ যে ক'জন পুলিশকর্মী ছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করেছে লালবাজার ৷ কলকাতা পুলিশের একজন অতিরিক্ত নগরপাল পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক এই ঘটনাটি খতিয়ে দেখছেন ৷ লালবাজার সূত্রে খবর, ঘটনার দিন স্থানীয় থানায় হাজির থাকা সব পুলিশ কর্মীকে পৃথক পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ৷ অভিযোগ, বেনিয়াটোলা লেনের বাসিন্দা মৃত অশোক কুমার সিংয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ছিল চুরির ৷ এই ঘটনাতেই তাঁকে ডেকে পাঠায় পুলিশ। তিনি মাত্র 200 টাকা দিয়ে সেই ফোনটি কিনেছিলেন ৷
আরও পড়ুন:
- থানায় ব্যবসায়ীর রহস্য-মৃত্যু, পুলিশ কর্মীদের নামের তালিকা তৈরি করল লালবাজার
- জিজ্ঞাসাবাদের মাঝে ব্যবসায়ীর রহস্য মৃত্যু, কাঠগড়ায় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা
- ধর্ষণের চেষ্টা ! যুবকের গোপনাঙ্গ কেটে পলিথিনে ভরে থানায় গেলেন গৃহকর্ত্রী