কলকাতা, 3 এপ্রিল: হিংসার ঘটনায় ফের শিরোনামে বাংলা ৷ তবে এই ধরনের ঘটনা বঙ্গবাসীর কাছে নতুন নয় ৷ গত কয়েক বছরে এই ধরনের একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বাংলা ৷ এমনই কয়েকটা হিংসার ঘটনা ফিরে দেখা -
2023, রিষড়া:রবিবার রাতে হুগলির রিষড়ায় রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ আহত হন বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষ-সহ 15 জন ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ৷ বিজেপি এই ঘটনায় কাঠগড়ায় তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে ৷ তৃণমূলও বিজেপির বিরুদ্ধে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করেছে ৷
2023, শিবপুর:গত বৃহস্পতিবার রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় হাওড়ার শিবপুরে ৷ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা ৷ পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ তদন্তে নেমেছে সিআইডি ৷ এই ঘটনার দায় রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের উপর চাপিয়েছে বিজেপি ৷ তৃণমূলও পালটা আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে ৷
2022, নুপূর শর্মা ইস্যু: বিজেপি নেত্রী নুপূর শর্মার একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ব্যাপক বিতর্ক ৷ সেই বাংলার বিভিন্ন অংশে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ আন্দোলন দেখা গিয়েছে ৷ এই নিয়ে বাংলার বিভিন্ন অংশের পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন ধরে উত্তপ্ত ছিল ৷
2019, নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা: কেন্দ্রের তরফে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার পর দেশের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ হয় ৷ সেই তালিকায় বাংলাও ছিল ৷ বাংলার বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ, ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে ৷ পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷
2019, আসানসোল:2019-এর 3 এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে রাম নবমী শোভাযাত্রা করা হয়েছিল, বরাকর মারোয়ারি বিদ্যালয় থেকে। এদের মধ্যে সবাই মোটর বাইকে ছিল। তারা বরাকর বাজারের মধ্য দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। তারা পাল্টা গুলি চালালে সংঘর্ষ বেধে যায় ৷
2018, রানিগঞ্জ ও আসানসোল: 2018 সালের মার্চে আসানসোলে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে রাম নবমীর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল যা পরবর্তীকালে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। সহিংসতায় পাঁচজন নিহত হয়েছে এবং কয়েক ডজন গাড়ি ও বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ৷ রানিগঞ্জেও রাম নবমী মিছিল ব্যাহত হয়েছিল যখন ওপর একটি সম্প্রদায়ের লোকেরা লাউডস্পিকার ব্যবহারে আপত্তি জানায় । শীঘ্রই উত্তপ্ত বিতর্ক হিংসাত্মক রূপ নেয় এবং পুলিশ কর্মীদের উপর ইট-পাথর দিয়ে আক্রমণ করা হয়। উত্তেজিত জনতা সহিংস হয়ে উঠতেই বোমাবর্ষণ শুরু হয়। অরিন্দম দত্ত চৌধুরী ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (হেডকোয়ার্টার), যিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন, তিনি বোমা হামলায় আহত হন এবং বিস্ফোরণে তার ডান হাত প্রায় উড়ে যায়।
2018, হুগলির তেলিনিপাড়া: রবিবার, 10 মে সন্ধ্যায়, এখানে একটি ছোট আন্তঃ-সম্প্রদায়িক ঝগড়া শুরু হয়, যা পুলিশের হস্তক্ষেপে সমাধান করা হয়। সোমবার, 11 মে কোনও ঘটনা ছাড়াই কেটে যায়। মঙ্গলবার অর্থাৎ 12 মে বিকেলে একটি বড় জনতা লোকালয়ে নেমে আসে এবং বড় আকারের লক্ষ্যবস্তু সহিংসতা শুরু হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একই দিনে 144 ধারা জারি করেছিলেন এবং হুগলি জেলার পার্শ্ববর্তী চন্দননগর এবং শ্রীরামপুর মহকুমাতে ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করেছিলেন, যার মধ্যে ভদ্রেশ্বর এবং তেলিনিপাড়া রয়েছে।
2017, বাদুড়িয়া: উত্তর 24 পরগনার এই অংশে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ৷ বাদুড়িয়া থানায় ভাঙচুর হয় ৷ থানায় আগুন ধরানো হয় ৷ পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ৷ এলাকার বাসিন্দাদের একটি অংশের বাড়ি-দোকানে ভাঙচুর হয় ৷ পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ৷ কেন্দ্রের তরফে এলাকায় বিএসএফ মোতায়েন করা হয় ৷ 144 ধারাও জারি করা হয় ৷ অশান্তি ঠেকাতে ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয় বেশ কয়েকদিন ৷
2016, ধূলাগড়: একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয় ৷ বিভিন্ন বাড়িতে, দোকানে ভাঙচুর হয় ৷ অগ্নিসংযোগ করা হয় ৷ বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান ৷ পরে পুলিশ ও প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ৷
2013, ক্যানিং: দক্ষিণ 24 পরগনার এক ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগে এই হিংসা ছড়িয়েছিল ৷ ক্যানিংয়ের নালিয়াখালিতে ওই খুনের ঘটনা ঘটে ৷ প্রতিবাদে এলাকার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ৷ অনেকের বাড়িতে ভাঙচুর হয় ৷ এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ কার্যত প্রাণ হাতে করে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসেন বলে অভিযোগ ৷ লোকাল ট্রেনের পরিষেবা বিঘ্নিত হয় ৷ পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ 144 ধারা ও কারফিউও জারি করে ৷
আরও পড়ুন:'সত্য চাপতেই আমাদের আটকানো হচ্ছে' ! রিষড়ায় ঢুকতে না পেরে তোপ সুকান্তর