কলকাতা, 15 মে : বহুতল আবাসনের নিচে খালি জায়গায় বসে পরীক্ষকদের থেকে মাধ্যমিকের উত্তরপত্র জমা নেওয়ার কাজ করছিলেন । যা করতে গিয়ে হেনস্থার সম্মুখীন হলেন এক প্রধান পরীক্ষক । তাঁর আবাসনের বাসিন্দারা ওই শিক্ষিকাকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ । এমনকী, স্থানীয় পুলিশে খবর পর্যন্ত দেন তাঁরা । যদিও পুলিশ এসে প্রধান পরীক্ষকের কাজে কোনও বাধা দেননি । কিন্তু, পুলিশ চলে যাওয়ার পর তাঁকে ফের হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ ।
কয়েকদিন আগেই রাজ্যের গ্রিন জ়োনের জেলাগুলির প্রধান পরীক্ষকদের থেকে মাধ্যমিকের নম্বর সংগ্রহের কাজ চালু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ । তারপর ধীরে ধীরে অরেঞ্জ ও রেড জ়োনেও নম্বর সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালু হয় । দু-তিনদিন আগে নম্বর সংগ্রহ করার জন্য পর্ষদের তরফে কলকাতার প্রধান পরীক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়, পরীক্ষকদের কাছে থাকা উত্তরপত্র ও নম্বর জমা নেওয়ার কাজ শুরু করতে । নির্দেশ অনুযায়ী, কলকাতার প্রধান পরীক্ষকরা তাঁদের অধীনস্থ পরীক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তরপত্র ও নম্বর সংগ্রহের কাজ করছেন । সেই কাজ করতে গিয়েই বুধবার সোনারপুর থেকে কসবার ফ্ল্যাটে গেছিলেন ওই প্রধান পরীক্ষক । তিনি জানান, ব্যক্তিগত কারণে সোনারপুরে থাকেন । তবে, কসবার একটি আবাসনে তাঁর ফ্ল্যাট রয়েছে বহুদিন থেকে । সেখানেই বিগত চার বছর ধরে মাধ্যমিকের উত্তরপত্র মূল্যায়ন সম্পর্কিত কাজগুলি করেন ।
নির্দেশ অনুযাযী, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য নিয়ম মেনে উত্তরপত্র ও নম্বর ওই প্রধান পরীক্ষকের কাছে জমা করে যাওয়ার জন্য তাঁর অধীনস্থ 35 জন পরীক্ষককে দু'দিন সময় দিয়েছিলেন তিনি । যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায় এবং কোনও জমায়েত না হয় । জানা গেছে, ভিড় এড়াতে সোনারপুর থেকে কসবায় আসার পথে কয়েকজন পরীক্ষকের থেকে উত্তরপত্র ও নম্বর সংগ্রহও করে নিয়েছিলেন তিনি । তারপর কসবার ওই আবাসনে এসে নিচের খালি জায়গায় টেবিল চেয়ার পেতে কাজ শুরু করেন । ধীরে ধীরে আসতে থাকেন পরীক্ষকরা । তাঁর অভিযোগ, "আমি নিচে যেখানে বসে কাজ করছিলাম সেটা একটা বিশাল ওপেন স্পেস । আমি ফ্ল্যাটে নিজেও উঠিনি কাউকে উঠতেও দিইনি । আমার ছেলে ও ড্রাইভার খাতাগুলি উপরে তুলে দিচ্ছিল । ওই ফ্ল্যাটে একজন চিকিৎসক থাকেন । তিনি হঠাৎ করে এসে আমার উপর চড়াও হন । বলতে থাকেন, আপনি এখানে এটা করতে পারবেন না । অন্য জায়গায় যান । আমি তখন প্রতিবাদ করি ।"
ওই প্রধান পরীক্ষক জানাচ্ছেন, এরপর দীর্ঘক্ষণ তাঁর সঙ্গে ও উপস্থিত পরীক্ষকদের সঙ্গে ওই চিকিৎসকের বচসা হয় । তারপরে ওই চিকিৎসক কসবা থানায় অভিযোগ জানিয়ে সেখান থেকে চলে যান । অভিযোগ পেয়ে কসবা থানার থেকে পুলিশ আসেন । সবকিছু দেখে ওই শিক্ষিকাকে জানান, উনি কাজ চালিয়ে যেতে পারেন । তবে, যাতে জমায়েত না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে । অভিযোগ, পুলিশ তাঁর কাছে বাধা না দিয়ে চলে যাওয়ার পরে আর একজন বাসিন্দা এসে ওই শিক্ষিকাকে হেনস্থা করা শুরু করেন । তাঁকে ওখানে বসে উত্তরপত্র জমা নেওয়ার কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকিও দেন । এবিষয়ে শিক্ষিকা বলেন, "পুলিশ চলে যাওয়ার পর ফ্ল্যাটের আর এক বাসিন্দা এসে বলা শুরু করেন, এখানে আপনি এই কাজ করতে পারেন না ইত্যাদি ইত্যাদি । আমি তখন বলি, আপনারা বাধা দিলে আমি এবার পুলিশে খবর দেব । এটা আমার ব্যক্তিগত কাজ নয়, এটা সরকারি কাজ । আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছিলাম ।" তারপর আজ কোনও সমস্যা করেননি কেউ ।
গোটা ঘটনা নিয়ে ওই প্রধান পরীক্ষক বলেন, "আমার বক্তব্য, আজ আমার সঙ্গে হয়েছে । কাল অন্য কোনও প্রধান পরীক্ষকের সঙ্গে হবে । যাঁরা ফ্ল্যাটে থাকেন বা নিজের বাড়িতে থাকেন না । এই ধরনের হেনস্থা ঠিক নয় । আর যিনি এই ঘটনাটা ঘটালেন আশ্চর্যজনকভাবে তিনি একজন চিকিৎসক । যেটা হয়েছে সেটা রীতিমতো মানসিক চাপ আমার জন্য । যেখানে আমার 35 জন পরীক্ষক দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন, সেখানে সমস্যা হয়নি । অথচ, আমার এখানে সমস্যা হল । এটা অপ্রত্যাশিত। এই কাজটা না করতে পারলে তো মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের কাজ আটকে যেত । সেটা তো মানুষের বোঝার দরকার আছে । আমার অবাক লাগছে, যাঁরা মদের দোকানে, বাজারে গিয়ে লাইনে দিতে পারেন, তাঁদের সমস্যা শুধু উত্তরপত্র জমা দিতে এলে ?"