কলকাতা , 28 মে : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকতে গেলেই নজরে পড়ে বিশালাকৃতির গাছগুলি । পুরো ক্যাম্পাসটাই মোড়া সবুজে । এমনকী , মূল্যবান গাছগুলির হিসেব রাখতে কয়েকমাস আগেই অডিট শুরু করেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । কিন্তু, একের পর এক ঝড়ে নষ্ট হতে শুরু করেছে সেই গাছগুলি । আমফানের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় 140 টি গাছ উপড়ে বা ভেঙে গেছিল । গতকাল রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে আবারও বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়েছে বলে জানা গেছে ।
একের পর এক ঝড়ের তাণ্ডবে নষ্ট হচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবুজায়ন
প্রথমে আমফান ৷ গতকাল আবার কালবৈশাখী ঝড় ৷ এই দুইয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ৷ প্রচুর গাছ ভেঙে পড়েছে ৷ সবুজায়ন নষ্ট হচ্ছে ৷ শুধুমাত্র যাদবপুর নয় , রবীন্দ্রভারতী ,পশ্চিমবঙ্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে ৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন , "কাল ভালো ঝড় হয়েছে । কালকের ঝড়ে আরও গাছ পড়েছে । আমফানে 140 টি-র মতো গাছ পড়ে গেছিল । এবার আরও 10 টার মতো পড়ে গেছে । আমাদের আবার বৃক্ষরোপণ করতে হবে । প্রচুর সবুজ নষ্ট হয়ে গেছে । অনেক পূর্ণবয়স্ক গাছ ছিল । দামী দামী গাছ ছিল ।" আমফানের তাণ্ডবে আগেই তছনছ হয়ে গেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় । সবমিলিয়ে প্রাথমিকভাবে এক কোটির উপর ক্ষয়ক্ষতির হিসেব উচ্চশিক্ষা দপ্তরকে পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে । ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে চিরঞ্জীববাবু বলেন , " আর্থিক মূল্য ওভাবে বলা যাবে না । কিন্তু, গাছের অসীম মূল্য আছে । যাদবপুরে যে পরিমান গাছ পড়েছে তা টাকা দিয়ে বিচার করা যাবে না । চারটে-পাঁচটা জায়গায় পাঁচিল ভেঙেছে । অন্যান্য ক্ষতি নিয়ে সরকারকে এক কোটির উপর আনুমানিক খরচের হিসেব দেওয়া হয়েছে ।"
একইভাবে প্রচুর পরিমাণে গাছ পড়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে । রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুবীর মৈত্র বলেন , "আমাদের তিনটে ক্যাম্পাস । প্রধান ক্যাম্পাসে প্রচুর গাছ ভেঙেছে । গাছ পড়ে পাঁচিল , রেলিং ভেঙেছে বহু জায়গায় । ঝড়ের দাপটে কিছু ঘরের কাঁচের জানালা ভেঙেছে । প্রায় 70 টার মতো গাছ ভেঙেছে । নেটওয়ার্কিংয়ের তার বা অন্যান্য ওভারহেড তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । জোড়াসাঁকোতে কয়েকটা গাছ পড়েছে । তবে , বড় কোনও ক্ষতি হয়নি । সল্টলেক ক্যাম্পাসে প্রচুর জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে । জল ঢুকে লিফ্ট অকেজো হয়ে গেছে । BT রোডেও লিফ্ট অকেজো হয়ে গেছে । অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । আমরা প্রাথমিকভাবে 50 লাখ টাকার কাছাকাছি হিসেব করেছি । আমাদের অনেক গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । 25-30 বছরের পুরানো গাছ পড়ে গেছে । এখনও সব গাছ সরানো সম্ভব হয়নি । সরানো হলে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যাবে । ক্যাম্পাস পরিষ্কার করতেও সময় লাগবে ।" এমনকী , আমফানের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পড়ুয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সুবীরবাবু । তিনি বলেন , "যানবাহন চালু না হলে ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । ক্যাম্পাস কবে খুলবে সেটাও নিশ্চিত নয় । আমাদের অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা থেকে আসেন । তাঁরা অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত । বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলেও তাঁরা তো আসতে পারবেন না ।"
কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্টেট ইউনিভার্সিটির । স্টেট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য বাসব চৌধুরি বলেন , "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গোটা কয়েক বড় গাছ পড়ে গেছে । বেশ কিছু জানলার কাঁচ পড়ে গেছে । দরজার ক্ষতি হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিংয়ের উপর সুন্দরভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা ছিল । সেটা ভেঙে পড়েছে । তবে , ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়নি ।" সবমিলিয়ে প্রায় কয়েক লাখ টাকা লাগবে ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসগুলির পুনর্নির্মাণে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ক্যাম্পাসও আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । কর্তৃপক্ষের অনুমান , প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার , আলিপুর , বালিগঞ্জ , বিহারীলাল , বারুইপুর ক্যাম্পাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । বহু জায়গায় গাছ পড়েছে , ভেঙেছে সীমানা পাঁচিল , কাঁচের জানালা ভেঙেছে , জল ঢুকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে । সবমিলিয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও ।