কলকাতা, 15 জুন:পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নকে কেন্দ্র করেই রক্ত ঝড়েছে বাংলায় । মনোনয়ন পেশের প্রথমদিনই হিংসার বলি হয়েছিলেন বিরোধী শিবিরের কর্মী । সেই ধারা কার্যত অব্যাহত থেকেছে মনোনয়নের শেষদিনও । বৃহস্পতিবার অবশ্য রাজ্যের দুই প্রান্তে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে মৃত্যু হল দুই তৃণমূল কর্মীরও । রেহাই পেলেন না বিরোধীরাও । ভাঙড় এবং চোপড়ায় মৃত্যু হয়েছে তিন বিরোধী দলের কর্মীর । আর তাতেই নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা হাইকোর্ট । আর তারপরই চাপ বাড়ালেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস । শুক্রবারই ভাঙড়ে যাচ্ছেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস । জানা গিয়েছে, হিংসা কবলিত এলাকাও পরিদর্শন করবেন তিনি।
সারা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোট করানের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর আদালতের নির্দেশের পরই এদিন রাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক কমিশন কাজ করবে। সুত্রের খবর, এদিন রাতেই স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ রাজ্যে কোথায় ও কত স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে তার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে ৷
অন্যদিকে, এদিন রাজ্যে পা দিয়েই ফের কড়া মনোভাব ব্যক্ত করতে দেখা গেল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । তিনি কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়েই জানিয়ে দেন, কোনও অবস্থাতেই এই অবস্থা বরদাস্ত করা যাবে না । কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান রাজ্যপাল। একই সঙ্গে, ভোটের আগেই হিংসার ঘটনায় রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দেখে যে তিনি হতবাক, তাও এদিন সাফ জানিয়েছেন রাজ্যপাল । তার কথায়, "আমি পদক্ষেপ করলে তা অত্যন্ত কড়া পদক্ষেপ হবে ।"
ভোটে অশান্তি এবং হিংসা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কেবলমাত্র স্পর্শকাতর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট । কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশই সার । বাহিনী নিয়ে কোনও সদর্থক ভূমিকা দেখা যায়নি রেজ্য নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে । এমনকী মনোনয়নের শেষদিনও যেখানে ফের একের পর এক জেলা থেকে মৃত্যুর খবর আসছে সেদিন পর্যন্ত বাহিনী মোতায়েন নিয়ে আদালতের নির্দেশকে কোনও রকম তোয়াক্কাই করল না নির্বাচন কমিশন । এরপরই কড়া পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় হাইকোর্টকেও । এদিন হাইকোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সারা রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ভোট করাতে হবে রাজ্যে । সেই সঙ্গে, আদালতের নির্দেশ, আগামী 48 ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে রাজ্য জুড়ে। বিরোধীদের দাবি, আদালতের এই নির্দেশে কার্যত মুখ পুড়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ।
আরও পড়ুন:মনোনয়নের শেষদিনেও রণক্ষেত্র ভাঙড়, গুলিতে মৃত 3
আর এরপরই এদিন রাতে প্রতিক্রিয়া দিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা বলেন, "আদালতের নির্দেশ কমিশন মেনে চলবে ।" অন্যদিকে, সামগ্রিক বিষয় নিয়ে রীতিমতো কড়া মনোভাব দেখালেন রাজ্যপাল আনন্দ বোসও । কেরলে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল । এদিন রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নকে ঘিরে ঘটে চলা হিংসা নিয়ে তিনি যে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন তা গোপন রাখেননি রাজ্যপাল । তিনি বলেন, "কথা নয়, এবার সরাসরি কাজ করার সময় । এসব বরদাস্ত করা হবে না । এক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে । আদালতের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে ।" এর আগেও অবশ্য একদফা রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে ডেকে নিজের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল । সেবারও তিনি অবাধ, সুস্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষেই জোড়াল সওয়াল করেছিলেন । এদিনও তার ব্যত্যয় দেখা গেল না রাজ্যপালের মধ্যে ।