কলকাতা, 24 মে: অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা ৷ মঙ্গলবারই নবান্নে তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং ভগবন্ত মান সাংবাদিক বৈঠকে তাঁদের রাজ্যে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৷ তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যপালের মাধ্যমেই দেশ শাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি সরকার ৷
এই প্রশ্নটি ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল বাংলায় ৷ রাজ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রাজীব সিনহাকে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁর নিয়োগের পথেও কি বাধা হবেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান ? এই দুটি প্রশ্ন নিয়ে বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, আজ বুধবার নয়া নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ নিয়ে ঘোষণার শেষ দিন ৷
বুধবার নতুন নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণা না-হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে রাজ্যে ৷ কারণ, নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ শেষের সাত দিন আগে নতুন নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণা করতে হয় ৷ আগামী 31 মে রাজ্যের বর্তমান নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের শেষ দিন ৷ তাই ইতিমধ্যে রাজীব সিনহাকে নয়া নির্বাচন কমিশনার করতে চেয়ে আগেই রাজ্যপালের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রাজ্য ৷ তবে এ বিষয়ে এখনও নীরব রাজভবন ৷
আরও পড়ুন: ব্যক্তি মোদির অনুষ্ঠান ! নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন বয়কট তৃণমূলের
তাহলে কি আরও একবার এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল-রাজ্য সরকার সংঘাত সামনে আসবে ? এই প্রশ্ন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে ৷ মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে দেশে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর অভিযোগ, রাজ্যপালের মাধ্যমে রাজ্য (বিরোধী দল শাসিত রাজ্য) শাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন দিল্লি ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীরাও ৷
বাম আমল থেকে রাজ্যপালের পদ থাকা নিয়ে বারে বারে প্রশ্ন উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে ৷ কখনও বামেরা কখনও আবার তৃণমূল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজ্যপালের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে । পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের অভিযোগ, পঞ্জাবে বাজেট অধিবেশনের সম্মতি দেননি রাজ্যপাল বানওয়ারিলাল পুরোহিত ৷ এর জন্য পঞ্জাব সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছে ৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালত অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যপাল কোনওভাবে বাজেট অধিবেশন আটকাতে পারেন না ।
আরও অভিযোগ, দিল্লিতে দিল্লি সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতা কেড়ে নিতে অর্ডিন্যান্স জারি করছে বিজেপি সরকার ৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে উপেক্ষা করে এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র ৷ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্টালিনও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিল পাশ না-করার অভিযোগ তুলেছেন ৷ এদিন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, 30-35 জন রাজ্যপাল এবং প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েই দেশ চালানো গেলে নির্বাচনের প্রয়োজন কী ? ভগবন্ত মানের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে গণতন্ত্রের ঢাক পেটান ৷ প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে সদর্পে ঘোষণা করেন, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র ৷ এদিকে দেশের মধ্যে তিনিই রাজ্য সরকারগুলিকে গণতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করতে না-দেওয়ার সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যান ৷
এদিন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, এই মুহূর্তে লেফটেন্যান্ট গভর্নমেন্ট বা রাজ্যপালের মাধ্যমে রাজ্য সরকারগুলিকে হেনস্থার ঘটনা শুধুমাত্র দিল্লিতে ঘটছে না ৷ একইরকম ঘটনায় ভুক্তভোগী বাংলা, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কেরল, তেলেঙ্গানা ৷ এই সব রাজ্যগুলিতেই সরকার গড়েছে বিজেপি-বিরোধী দল ৷
আরও পড়ুন: সময়ের আগেই পড়ে যেতে পারে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, দাবি মমতার