কলকাতা, 15 ডিসেম্বর: শহরের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য ট্রাম (Kolkata Tram Service) যখন প্রায় আইসিইউতে চলে গিয়েছে, ঠিক তখনই 'মৃতপ্রায়' এই ট্রামের টানে হাজার হাজার মাইল উজিয়ে কলকাতায় ছুটে এলেন জার্মান গবেষক (German Researcher) মার্টিন স্নাইডার ৷ তাঁর বিশ্বাস, সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে ট্রামের থেকে ভালো সওয়ারি আর হতে পারে না ৷ তবে তার জন্য সবথেকে জরুরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ৷ কলকাতার ট্রামও এর ব্যতিক্রম নয় বলেই মনে করেন মার্টিন ৷ গবেষণার কাজে শহরে এসে ইটিভি ভারতকে দিলেন একান্ত সাক্ষাৎকার ৷
সময়ের সঙ্গে গতি বেড়েছে শহর কলকাতার ৷ আর সেই কারণেই নাকি প্রসঙ্গিকতা হারিয়েছে ট্রাম ! সরকারি ও প্রশাসনিক মহলে এমন কথা হামেশাই শোনা যায় ৷ অথচ, ট্রামের মতো পরিবেশবান্ধব যান খুঁজে পাওয়া মুশকিল ৷ ট্রামের লাইনে কোনও সমস্য়া না থাকলে দুই কামরার এই গাড়িতে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বহু মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায় ৷ যে কারণে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ফের একবার ট্রাম পরিষেবার উপর গুরুত্ব আরোপ করছে ৷ কিন্তু, আমাদের শহরে এখনও সেই উলট পূরাণ !
আরও পড়ুন:ট্রাম বাঁচাতে সমীক্ষা, আশার আলো দেখছেন গবেষকরা
এই প্রেক্ষাপটে শহরে এসে সেই ট্রাম নিয়েই আস্ত গবেষণাপত্র লেখার কাজ শুরু করেছেন মার্টিন ৷ তিনি বলেন, "বিশ্বের একাধিক দেশে, বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে পরিবেশবান্ধব এই যান এখন নগর সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে ৷ 1950-60 সালে অটোমোবাইল লবিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যেসব শহর থেকে ট্রাম কার্যত উঠে গিয়েছিল, সেইসব শহরে আবারও ফিরছে এই যান ৷ এমনকী, তৎকালীন সরকার যে ভুল পদক্ষেপ করেছিল, তাও এখন বলা হচ্ছে ৷ আমি যে দেশে থাকি, সেই জার্মানির বেশিরভাগ শহরেই ট্রাম চলাচল করে এবং সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ট্রাম পরিষেবাকে আরও উন্নত করার উপর জোর দেওয়া হয় ৷"
কলকাতার ট্রাম প্রসঙ্গে মার্টিন বলেন, "গবেষণা করতে গিয়ে আমি দেখেছি, পুরনো দিনে কলকাতাজুড়ে যেভাবে ট্রামের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, তা সত্যিই প্রশংসনীয় ৷ এখানে এখনও বহু পুরনো ট্রাম চলাচল করে ৷ তাই কলকাতার ট্রাম পরিষেবা ও পরিকাঠামোকে যদি আরও উন্নত করে সময়োপযোগী করে তোলা যায়, তাহলে নিঃসন্দেহে এটি নগর সভ্যতার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠবে ৷ তবে শুধুমাত্র কয়েকজনের ইচ্ছে থাকলেই তো হবে না ৷ সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে ৷"
গবেষণার কাজ করার সময় মার্টিন স্নাইডার যোগাযোগ করেছিলেন ট্রাম গবেষক ও ট্রামপ্রেমী ডক্টর দেবাশিস ভট্টাচার্যের সঙ্গে ৷ দেবাশিস এই প্রসঙ্গে জানান, "1990 সালে বাম আমলে যখন কলকাতা থেকে ট্রাম তুলে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তখন আমি দেশ, বিদেশের বিভিন্ন নাগরিক ফোরাম, যাঁরা মূলত পরিবহণ নিয়ে কাজ করে, তাদের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করি ৷ এমনই একটি ফোরামের মাধ্যমে মার্টিন আমার খোঁজ পান ৷ এরপর মার্টিন ওঁর গবেষণাপত্র লেখার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ যেহেতু কলকাতা ট্রাম পরিষেবা নিয়ে খুঁটিনাটি তথ্য ওঁর কাছে ছিল না, তাই সেগুলি দিয়ে আমি যথাসম্ভব মার্টিনকে সহযোগিতা করেছি ৷ যতবার গবেষণার কাজে মার্টিন এই শহরে এসেছেন, ট্রামের দুর্দশা দেখে হতাশ হয়েছেন ৷"