কলকাতা, 23 জুলাই : বিশ্ব বিখ্যাত বাংলার মৃৎশিল্প৷ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মূর্তির অর্ডার আসে বাংলার শিল্পীদের কাছে ৷ বাংলার পাশাপাশি সারা বছরই দেশে-বিদেশের মাটির বা ফাইবারের মূর্তি রপ্তানি করে কলকাতার বিভিন্ন শিল্পীরা ৷ কিন্তু কোরোনা ভাইরাস জেরে বদলে গেছে দেশে-বিদেশের সামাজিক চিত্র ৷ সংক্রমণ রুখতে তৎপর প্রতিটি দেশ ৷ জারি করা হয় লকডাউন ৷ বাংলায় প্রায় চারমাসের উপরে চলছে লকডাউন ৷ বন্ধ আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা ৷ এই পরিস্থিতিতে বরাত না থাকায় মাথায় হাত বাংলার ফাইবার শিল্পীদের ৷
বনমালী সরকার স্ট্রিটের ফাইবার মডেল শিল্পী খোকন পাল বলেন, "কোরোনা পরিস্থিতির পর থেকে বদলে গেছে ব্যবসার চিত্র ৷ একটা সময় দিল্লি, ত্রিপুরা, শিলিগুড়ি প্রায় সব জায়গায় মডেল রপ্তানি হত ৷ কিন্তু কোরোনা ভাইরাস, লকডাউনে ব্যবসার পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ একটা সময় 20 থেকে 25 শিল্পী প্রতিদিন কাজ করত ৷ কিন্তু, কারখান তো বন্ধ রাখতে পারি না ৷ তাই এখন দুই থেকে তিনজন শ্রমিক নিয়ে কারখানাটা খুলে রেখেছি ৷ পাইকারি ক্রেতারাও এখন বিক্রি নেই বলে কিনতে চাইছে না ৷" খোকনবাবুকে ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ক্ষতির কোনও হিসেব নেই ৷ আমরা শেষ হয়ে গেছি ৷"
মাথায় হাত ফাইবার মডেল শিল্পীদের সকলের মুখে এখন একটাই কথা ৷ পরিস্থতি খারাপ ৷ আরেক ফাইবার শিল্পী সনাতন বাড়ুই বলেন, "বিক্রি এখন একদম হচ্ছে না ৷ এক সময় সৌদি আরব, অ্যামেরিকা, সিঙ্গাপুর, নেপাল সব জায়গায় মডেল গেছে ৷ কিন্তু এবছর অর্ডার নেই ৷ বন্ধ আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা ৷ যে কটা অর্ডার ছিল তাও লকডাউনের জেরে বাতিল হয়ে গেছে ৷" কিন্তু, কারখানার কাজ তাও থেমে নেই ৷ শিল্পীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ এনিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, " বসে খাব ! বসে খেয়ে লাভ কী? পরিস্থিতি একদিন ঠিক হবে ৷ সেই আশায় কাজ করছি ৷ কাজ বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা কী করবে ৷ বসে থাকবে ৷"
চারমাসের এই লকডাউনে জেরে একপ্রকার বন্ধ সামাজিক অনুষ্ঠান, পুজো-পার্বন ৷ যার জেরে বন্ধ অর্ডার ৷ এই পরিস্থিতিতে কাজ না থাকায় বাড়িতেই দিন কাটছে মৃৎশিল্পী থেকে ফাইবার শিল্পীেদর ৷ এমনই এক ফাইবার শিল্পী বাপী পাল বলেন, সদ্য পুনরায় কাজে যোগ দিয়েছি ৷ বাজার খুব খারাপ ৷ কাজ নেই ৷ প্রায় তিন মাস বসে ছিলাম, এই দুই তিন দিন হল কাজ করছি ৷ খুব সমস্যার মধ্যে দিক কাটছে ৷ মহিলা মৃৎশিল্পী লক্ষ্মী বাড়ুই বলেন, "বসে থাকলে তো চলবে না ৷ কাজ তো করতেই হবে ৷ গত বছর যা মডেল বানিয়েছিলাম তার চার ভাগের মাত্র একভাগ মডেল তৈরি হয়েছে ।" পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে এখন সেই দিকেই তাকিয়ে দিন গুনছেন তাঁরা ৷