কলকাতা, 20 অক্টোবর : ইনিংসের শুরুটা ভালো ছিল না । অগাস্টের শেষ পর্যন্ত কেনাকাটা করতে দেখা যায়নি কলকাতাবাসীকে । ফলে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ে ছিল । কিন্তু যতদিন গেছে অবস্থা একটু একটু করে পালটেছে । স্লগ ওভারে শুরু হয়েছে ঝোড়ো ব্যাটিং । নিউ মার্কেট চত্বরে শুধুই মাথার সারি । দেখলে বোঝাই যাবে না যে রাজ্যে বেড়েই চলেছে কোরোনা সংক্রমণ ।
অক্টোবরের শুরু থেকেই নিউ মার্কেট-এসপ্ল্যানেড চত্বরে ফিরে এসেছে পুরোনো দৃশ্য । সেখানে অনেককেই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করতে দেখা যাচ্ছে । পুজোয় কেনাকাটার ভিড় দেখে প্রমাদ গুনছেন চিকিৎসকরা । চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন । OC-দের নগরপাল নির্দেশ দিয়েছেন, কেনাকাটার ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানা হয় তা প্রবলভাবে দেখতে হবে । প্রয়োজনে মাইকে চালাতে হবে প্রচার । যারা কেনাকাটা করতে আসছে তারা যাতে মাস্ক পরে থাকে সেদিকেও রাখতে হবে নজর । একজায়গায় কোনওভাবেই যাতে অতিরিক্ত ভিড় না জমে তা দেখতে হবে পুলিশকে । সেই নির্দেশিকা বেশ কয়েকদিন আগেই চলে গেছে প্রতিটি থানায় । সেইমতো পদক্ষেপ করছে পুলিশ । বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে চালানো হচ্ছে প্রচার । চলছে পুলিশের কড়া নজরদারি । কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার বাঙালির ।
পুজোর শেষ বাজারে ঝোড়ো ব্যাটিং কলকাতাবাসীর
এদিকে হাইকোর্টের তরফে নেওয়া হয়েছে কড়া সিদ্ধান্ত । সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে এবার পুজো মণ্ডপগুলিকে করা হয়েছে নো-এন্ট্রি জ়োন । ছোটো মণ্ডপগুলির ক্ষেত্রে পাঁচ মিটার, বড় মণ্ডপগুলির ক্ষেত্রে দশ মিটারের বেশি দূর পর্যন্ত যেতে পারবেন না দর্শনার্থীরা । দর্শনার্থীদের মণ্ডপে ঢোকার প্রবেশাধিকার নেই । কিন্তু তাতে কী? বাঙালি মশগুল রয়েছে পুজোর সাজে নিজেকে সাজাতে । শাড়ি, সালোয়ার,কুর্তা-পাজামা, নতুন জুতো, জুয়েলারি থেকে কস্টিউম- সবই চাই । আর তাতেই ভিড় । হাওড়ার শিবপুর থেকে নিউ মার্কেট চত্বরে পোশাক কিনতে এসেছিলেন বছর একুশের ঋদ্ধিমা দত্ত । মাস্ক থুতনির নিচে । এভাবে রাস্তায় বেরিয়েছেন, ভয় করছে না ? একগাল হেসে যুবতির জবাব, “ভুল হয়ে গেছে । এমনিতে আমি মাস্ক পরি ।" পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন বরানগরের সুজয় পাল । তাঁর মাস্কও সঠিক অবস্থানে নেই । কেন ? উত্তর আসে, “ঘেমে গেছি তাই..।"
এই ভিড় দেখে সক্রিয় হয়েছে পুলিশ । ভিড়ের মাঝে মাস্কহীনদের চিহ্নিত করে নিয়ে আসা হচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গায় । সেখানে তাদের জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে । পুলিশের ধরপাকড়ের মাঝেও নির্বিকার চিত্তে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে চলেছে অনেকেই । মাথায় রয়েছে পুজোর জন্য বিশেষ প্ল্যানিং । কলেজ পড়ুয়া এক যুবতি বলছিলেন, “পুজোয় প্ল্যানিং রেডি । প্যান্ডেল হপিংয়ের ইচ্ছা আছে বন্ধুদের সঙ্গে । পুজোয় ঠাকুর দেখব না তাও কি হয় !" ঠাকুর দেখার এই বাহানায় ভাইরাস সংক্রমণ হলে ? না, কোনো উত্তর আসেনি । ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে তা বুঝেছেন অনেকেই । বলছেন, মাস্ক পরেই বাইরে বের হওয়া উচিত । কিন্তু কাজের কাজ করছেন না । বেড়েই চলেছে সংক্রমনের আশঙ্কা ।