কলকাতা, 17 অগাস্ট: COVID-19-এর চিকিৎসার জন্য একের পর এক ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল রোগীকে। এমনকী প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ-ও করা হয়েছিল। অথচ, ২৪ দিন ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখার পরেও বছর ৪০-এর এই রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। যার জেরে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাঁদের উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছিল কম বয়সি এই রোগীর মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসের কারণে।
রোগীর ফুসফসকে বাঁচানোর জন্য তখন তাঁর ফুসফসকে কার্যত বিশ্রামে রেখে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর জন্য এই রোগীকে তখন ECMO (Extra-corporeal membrane oxygenation)-র সাপোর্টে রাখা হয়। এর পরে এই রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। অবশেষে, এই রোগীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হলেন চিকিৎসকরা, এবং হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন এই রোগী।
জুন মাসে সল্টলেকের বাসিন্দা বছর ৪০-এর এক ব্যক্তিকে ভরতি করানো হয়েছিল ঢাকুরিয়ায় অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে। এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, COVID-19-এ আক্রান্ত এই ব্যক্তিকে যখন এই হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছিল, তাঁর ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ছিল । এর পরে এই রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে একের পর এক প্রয়োজনীয় সব ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল। এই রোগীর উপর প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ-ও করা হয়েছিল। তবে, তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছিল। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাও কমতে থাকে। যার জেরে এই রোগীকে তখন ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখার পরে প্রাথমিক ভাবে এই রোগীর শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছিল। তবে, ফের তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকরা দেখেন, ২৪ দিন ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখার পরেও এই রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট এই রোগীর ক্ষেত্রে তখন কার্যত কাজে আসছিল না।
COVID-19-এ আক্রান্ত মাঝ বয়সি এক রোগীর ক্ষেত্রে এই ধরনের জটিলতা দেখা দেওয়ার জেরে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এই রোগীর ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট কাজে না আসার বিষয়টি চিকিৎসকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। অবশেষে, এই রোগীর ফুসফসকে কার্যত বিশ্রামে রেখে, তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফসকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এর জন্য এই রোগীকে ECMO-র সাপোর্টে রাখা হয়।
রোগীর ফুসফসকে কার্যত বিশ্রামে রেখে শরীরের বাইরে থেকে ফুসফুসের কাজ করে এই ECMO। এই রোগীকে ECMO-র সাপোর্টে রাখার পরে চিকিৎসকরা দেখেন, ধীরে ধীরে এই রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ১০ দিন ECMO-এর সাপোর্টে রাখার পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এই রোগী। গত ১৩ অগাস্ট এই রোগীকে ঢাকুরিয়ায় অবস্থিত বেসরকারি ওই হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে উঠে হাসপাতাল থেকে এই রোগী বাড়িতে ফিরেছেন। এই রোগী এখন ভালো আছেন।এই রোগীর বিষয়ে ঢাকুরিয়ায় অবস্থিত বেসরকারি ওই হাসপাতালের ECMO বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক সোহম মজুমদার বলেন, "এক মাসেরও বেশি সময় আগে COVID-19-এ আক্রান্ত এই রোগী আমাদের ঢাকুরিয়ার হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন। COVID-19-এর পাশাপাশি এই রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই রোগীর বয়স অল্প ছিল, বছর ৪০-এর মতো। দীর্ঘদিন ধরে ICU-তে এই রোগীর COVID-19-এর চিকিৎসা চলছিল। প্রয়োজনীয় সব ধরনের ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি এই রোগীর প্লাজমা থেরাপিও করা হয়েছিল। তার পরেও এই রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তখন তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়।"
এই চিকিৎসক আরও বলেন, "২৪ দিন ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে এই রোগীকে রাখা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে এই রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। তবে, ফের তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এই রোগীর শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইড জমে যায় এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, তখন এই রোগীকে এক্সট্রাকরপোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন (ECMO)-এর সাপোর্টে রাখতে হয়। এই রোগীকে 10 দিন ECMO-র সাপোর্টে রাখতে হয়েছিল। ফুসফুসের অবস্থা উন্নতি হওয়ার কারণে আবার তাঁকে ভেন্টিলেটরের ফুল সাপোর্টে আরও 4-5 দিন রাখা হয়। এর পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। এই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠায় হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।"