পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ভেরিফিকেশন করাচ্ছে পড়ুয়ারাই, অভিযোগ চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যাপকদের একাংশের - proffessors alligation

জায়গা পাচ্ছেন না শিক্ষকরা, BA অনার্স ও জেনেরালের ভেরিফিকেশন করাচ্ছেন পড়ুয়ারাই । এমনই অভিযোগ চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যাপকদের একাংশের ।

ফাইল ফোটো

By

Published : Jul 8, 2019, 10:37 PM IST

কলকাতা, 8 জুলাই : চারুচন্দ্র কলেজে BA অনার্স ও জেনেরালে ভরতি হওয়া পড়ুয়াদের ভেরিফিকেশন ছিল গতকাল । এই ভেরিফিকেশনকে ঘিরে একাধিক অভিযোগ তুলছেন কলেজের অধ‍্যাপকদের একাংশ । তাঁদের অভিযোগ, কলেজের সিনিয়র ও প্রাক্তন ছাত্ররা ভেরিফিকেশন করাচ্ছেন‌ । তাঁরা গেলে ঘর থেকে নাকি বের করে দেন ওই ছাত্ররা । যদিও, কলেজের ছাত্র সংসদের বক্তব্য, তাদের ভেরিফিকেশনে সাইন করার কোনও অথরিটি নেই । শুধু ভেরিফিকেশনে থাকা অধ‍্যাপক-অধ‍্যাপিকাদের সাহায্য করতে ওখানে ছিল । একই বক্তব্য চারুচন্দ্র কলেজের টিচার ইনচার্জ অনুরাধা ঘোষেরও ।

চারুচন্দ্র কলেজের কমার্সের বিভাগীয় প্রধান সমীর বেরা এবিষয়ে বলেন, "গত শনিবার থেকে ভেরিফিকেশন চলছে । সেটা করাচ্ছে কারা ? যারা করাচ্ছে তারা পুরোনো ছাত্র নয় । এখনকার কিছু স্টুডেন্ট আছে তারা ভেরিফিকেশন করাচ্ছে । মাঝে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে কিছুদিন বন্ধ ছিল । আমিও গভর্নিং বডিতে রয়েছি । কিন্তু, বারবার বিষয়গুলি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও তারা কোনও ব‍্যবস্থা নিচ্ছে না । পড়ুয়ারা বহাল তবিয়তে কলেজে আসছে এবং তাদেরকে প্রোমোটও করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে । না হলে অ্যাডমিশনে এই রকমের অনিয়ম হয় কী করে ? অথরিটি কিছু বলছে না । অথরিটি এগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে দিনের পর দিন ।" কলেজের ফিজিক্সের অধ‍্যাপক রতনকুমার দাস বলেন, "আমি দেখলাম দু'টো ঘরে বসে স্টুডেন্টরা ভেরিফিকেশন করছে । আমি, প্রফেসর সমীর বেরা যাঁরা দেখতে গেছিলাম, আমাদেরকে তাড়িয়ে দিল । স্টুডেন্টরা যারা বাইরে থেকে আসছে, আগে এই কলেজের স্টুডেন্ট ছিল তারা জোর করে আমাদের বের করে দিল । তারাই তো পরিচালনা করছে, তারাই তো অ্যাডমিশনের ব্যাপারটা দেখছে । আমি তো দু'বছর অ্যাডমিশন কমিটিতে ছিলাম । এটা করতে পারে না ‌। একজন টিচার থাকা উচিত ভেরিফিকেশনের সময় ।"

যদিও, ভেরিফিকেশন করে বেরিয়ে আসা পড়ুয়ারা বলে, ভেরিফিকেশনের সময় স্যার ছিলেন । তবে, সঙ্গে 'দাদারাও' ছিলেন । BA জেনেরালে ভরতি হওয়া পড়ুয়া আবির অধিকারী বলেন, "স্যাররা ছিলেন । দাদারাও সঙ্গে ছিলেন । ইউনিয়নের দাদারা । ওরা আমাদের ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছিল কী কী করতে হবে ।" BA জেনেরালের ছাত্র সুবোধ দত্ত বলেন, "ভিতরে স্যারেরা ছিলেন । ম‍্যাডামরাও ছিলেন । ইউনিয়নের দাদা-দিদিরাও আমাদের কাজে সাহায্য করছিল ।" কারা করাচ্ছে ভেরিফিকেশন? উত্তরে BA জেনেরালের আর এক নতুন ছাত্রী বলেন, "স্যাররা আর ছেলেরা । মানে সিনিয়র দাদারা ।" পলিটিক্যাল সায়েন্সের এক ছাত্রী পায়েল বলেন, "স্যাররা আছেন । আর সিনিয়র দাদা-দিদিরাও আছেন ।"

প্রাক্তন, বর্তমান ছাত্র ও ইউনিয়নের সদস্যরা ভেরিফিকেশন করাচ্ছে কোনও অধ‍্যাপক-অধ‍্যাপিকার উপস্থিতি ছাড়াই । অধ‍্যাপকদের একাংশের এই অভিযোগের ভিত্তিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চারুচন্দ্র কলেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট অনিন্দ‍্য মালাকার বলেন, "যে অধ‍্যাপকরা এই ধরনের কথা বলছেন ওনাদের একটাই কথা বলব । ওনারা তো শিক্ষিত । ওনাদের এইটুকু জানার কথা যে আমাদের কাছে ওই অথরিটি নেই যে আমরা কোনও ভেরিফিকেশনে সই করব বা ভেরিফিকেশন করব । আমরা ওই জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে আছি শুধুমাত্র আমাদের TIC-র অনুরোধে । দু'জন দু'জন করে টিচার থাকে । তাঁদের অনেক রকম হেল্প লাগে । এত বড় ঘর, অনেক স্টুডেন্ট থাকে, শুনতে পায় না । আমরা আওয়াজ দিই যে, আয় তোরা । এটুকুতেই গল্প শেষ । আমাদের কোনও অথরিটি নেই যে আমরা সাইন করব বা ম‍্যামদের বলব যে, ম‍্যাম আপনি দাড়ান, আমরা সই করছি । কোনও প্রাক্তন পড়ুয়া নেই এখানে । আমরা সবাই সাহায‍্য করছি । TIC রিকোয়েস্ট করছেন যে বাবা প্রচণ্ড ভিড়, একটু সাহায‍্য কর । আমরা শুধু সেই সাহায‍্যটাই করছি ।"

চারুচন্দ্র কলেজের টিচার ইনচার্জ অনুরাধা ঘোষ বিষয়টি নিয়ে বলেন, "নতুন যারা আসছে তারা এই কলেজের সঙ্গে পরিচিত নয়। তারা তো জানে না 214 নম্বর ঘর 215 নম্বর ঘর কোথায়। তাদেরকে কি আমি নিয়ে গিয়ে বসাব। তাই ইউনিয়নের ছেলেমেয়েরা তাদের নিয়ে গিয়ে বসাচ্ছে। ভেরিফিকেশন কখনও বাইরের ছেলে বা বাইরের লোক দিয়ে হয়? যে বলেছে সে কী করে এটা বলছে আমি জানি না। তারা খালি নতুন ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে বসাচ্ছে। প্রাক্তন ছাত্র ছিল কি না আমি জানি না। মোট কথা ইউনিয়নের ছেলেরা তাদের রুমে নিয়ে গিয়ে দেখাচ্ছে। কিন্তু, ভেরিফিকেশনটা আমাদের স্টাফরা করছে, আমি রাউন্ড দিচ্ছি, আমাদের টিচাররাও অনেকে রাউন্ড দিচ্ছেন। কাজেই ভেরিফিকেশন কখনও স্টুডেন্ট বা এই সমস্ত যে কথা হচ্ছে, তারা কখনও করছে না। সই তো করছে না। সাহায্য করছে ওদের বসানোর জন্য। এতো ছেলেমেয়ের ভেরিফিকেশন হচ্ছে। অন‍্যদিকে পরীক্ষা চলছে। যদি সব স্টাফরা করতে যান তাহলে তো প্রচুর সময় লাগবে।" চারুচন্দ্র কলেজের অভিযোগ নিয়ে আজ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমার কাছে যদি কোনও অধ‍্যাপক বা কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে তাহলে উপযুক্ত ব‍্যবস্থা নেব।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details