কলকাতা, 29 জানুয়ারি : NRC, NPR, CAA-র বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে গোটা দেশ । প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দলই এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে । প্রতিবাদের বিভিন্ন ধরনের ভাষা দেখা গেছে গোটা দেশজুড়েই । অবস্থান, বিক্ষোভ, ভাঙচুর, কবিতা, সমাবেশ, গান প্রভৃতির মাধ্যমে এর বিরোধিতা করা হচ্ছে । এবার সরস্বতী পুজোতেও ফুটে উঠল NRC, NPR, CAA নিয়ে বিরোধিতার ছবি । এই বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোর থিম রাখা হয়েছে এটি । আজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে গিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এই প্রতিবাদের ভাষাকে সাধুবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ।
সরস্বতী পুজোর থিম নো NRC, নো NPR, নো CAA । কিন্তু, কেন এই থিম? তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডল বলেন, "আজকে বাগদেবীর পুজো । মা সরস্বতীর কাছে আমাদের একটাই প্রার্থনা যে, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, BJP যাঁরা করে তাঁদের মাথায় শুভ বুদ্ধির উদয় হোক । মা তাঁদের শুভবুদ্ধি দিক । এইসব CAA, NRC, NPR এনে মানুষের মধ্যে যে বিভাজন করতে চাইছেন তা থেকে বিরত থাকুক । মা সরস্বতী কাছে আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের কণ্ঠে প্রতিবাদের ধ্বনি দেন । প্রতিবাদের কণ্ঠে যেন আমাদের সর্বদা সচল থাকে । অন্যায় দেখলে যেন আমরা গর্জে উঠতে পারি ।"
আজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে সরস্বতী পুজোকে সামনে রেখে NRC, NPR, CAA-র বিরুদ্ধে TMCP-র প্রতিবাদের ভাষাকে সাধুবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । TMCP-এর এই প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে তিনি বলেন, "এখানে প্রতিবাদের ভাষাও আছে । এখন নতুন নতুন অনেক ফরম্যাটে আন্দোলনের ধারা বহিত হচ্ছে । এখানে NRC-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে । মানুষের পাশে থাকার লড়াইয়ে ছাত্র রাজনীতি নতুন করে একটা দিক নির্দেশ করছে । আমরা শক্তি, আমরা বল, আমরা ছাত্রদল । এটা আর শুধু কবিতায় নেই । এটা আজ বাস্তবে পরিণত হচ্ছে ।"
আজ বেশ কয়েকটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ঘোরেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । তিনি প্রথমে আশুতোষ কলেজ, তারপরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আলিপুর ক্যাম্পাস হয়ে কলেজ স্ট্রিটে আসেন । সেখানে প্রথমে IISWBM-এ যান তিনি । তারপরে আসেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে । সেখানে তিনি বলেন, "আশুতোষ কলেজে আমার স্নাতক । স্নাতকোত্তর অনেক মূল্যবান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি ছুঁয়ে যাওয়াটা অনেকটাই গর্বিত হওয়া, গরিমার কাজ । ছাত্র আন্দোলনের কত সাক্ষী এটা । রাখালদার ক্যান্টিনের সাক্ষী এটা । কত ঘটনার ঐতিহাসিক দলিল তৈরি হয়েছে এখানে । আমি এখনকার ছাত্রদের সেই ইতিহাসটাকে স্মরণ করতে বলব । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ণ যাতে আরও বেশি উন্নত ধারায় চলে, তার জন্য সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে ।"
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোর থিমের প্রশংসায় শিক্ষামন্ত্রী আজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের বকাবকিও করেন শিক্ষামন্ত্রী । কারণ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ক্যাম্পাসে আশুতোষ বিল্ডিংয়ের সামনে খোলা আকাশের নিচে সরস্বতী প্রতিমা রাখা ছিল । ছিল না কোনও শেড । তাই সকালে বৃষ্টিতে প্রতিমা ভিজে যায় । প্রতিমার মাথার মুকুট বৃষ্টিতে ভিজে বেঁকে যায় । আর তা নজরে পড়তেই শিক্ষা মন্ত্রী অসন্তুষ্ট হন । তবে, প্রথমে অসন্তুষ্ট হলেও পরে একের পর এক পড়ুয়াদের সঙ্গে সেলফি, খিচুড়ি ও বেগুনি দিয়ে ভোগপ্রসাদ খেতে দেখা যায় তাঁকে । শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "যদিও একটু মনটা খারাপ । খোলা আকাশের নিচে পুজোটা হচ্ছে । বৃষ্টি হয়েছে । মায়ের প্রতিমার যেরকমভাবে সংরক্ষিত থাকার কথা ছিল বৃষ্টি তাতে বাদ সেধেছে । কিন্তু, আমাদের উৎসাহ উদ্দীপনা এতটুকু কমেনি ।"
তাঁকে ঘিরে সেলফি তোলার হিড়িক ছিল আলিপুর ক্যাম্পাসেও । আজ একদিকে যেমন সরস্বতী পুজোকে সামনে রেখে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ NRC, CAA, NPR-এর বিরোধিতা করছিল, অন্যদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে রাস্তায় গ্র্যাফিটি এঁকে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ । একদিকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, অন্যদিকে ছাত্র পরিষদ । এটা কি পরবর্তীকালে বৃহত্তর কোনও জোটের বার্তা দিচ্ছে? শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "আমি জোর করে কাউকে ইনজেকশন দিয়ে বড় করতে চাই না । আমাদের সংগঠন এমনিতেই বড় হচ্ছে । এমনি সুস্থভাবেই বড় হবে । তার থেকে বড় কথা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চিরকাল পথ দেখিয়েছে, এবারও পথ দেখাবে । যারা দেশকে টুকরো টুকরো করতে চায়, যারা সমাজকে টুকরো করতে চায়, যারা ধর্ম নিয়ে খেলতে চায়, তার বিরুদ্ধে সকলে একত্রিত হয়ে এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং জানাবে । তার নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছেন এবং আগামীদিনেও দেবেন ।"