কলকাতা, 20 মার্চ: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে হুগলির সদ্য বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পেশায় প্রোমোটার অয়ন শীল প্রায় 55 থেকে 60 কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। এমনই মনে করছে ইডি। ইতিমধ্যেই অয়নের ফ্ল্যাট এবং অফিসে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে অয়নের নামে বেশ কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য ঘেঁটেই গোয়েন্দারা দাবি করছেন যে প্রায় 55 থেকে 60 কোটি টাকার লেনদেন করেছেন অয়ন শীল (WB Recruitment Scam)।
এছাড়াও হুগলির চুঁচুড়ায় যগুদাস পাড়ায় শান্তর একটি ফ্ল্যাটও প্রমোটিং করেছেন অয়ন। একইসঙ্গে শান্তনুর বিভিন্ন রিসর্ট থেকে শুরু করে অফিস এবং বিভিন্ন কাজের বরাত পেয়েছেন অয়ন। এরপরই শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যত ডান হাত বলে পরিচিতি হন অয়ন শীল ৷ রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শান্তনুকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন এই প্রোমোটার। আর তাই প্রায় 30 ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও সল্টলেকের এফটি ব্লকের অয়নের অফিস-সহ ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন ইডির তদন্তকারীরা।
আগেই তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, ওএমআর শিটের বারকোডের বরাত দেওয়া হত অয়নের সংস্থাকে। তাঁর ফ্ল্যাটে ঢুকতেই গোয়েন্দারা দেখতে পান বিভিন্ন আলমারিতে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন কাগজপত্র। এই সকল কাগজপত্র খুলতেই গোয়েন্দারা চমকে ওঠেন। একজন প্রোমোটারের বাড়িতে রাজ্য সরকারের একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে শুরু করে ওএমআর শিট এবং বিভিন্ন পৌরসভার বিজ্ঞপ্তি-সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এল কী করে তাই তারা বোঝার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা ৷
আরও পড়ুন:প্রযোজনা ব্যবসায় যুক্ত হয়ে টলিউডে পসার জমিয়েছিল অয়ন, দাবি ইডি'র
ফলে তদন্তকারীদের অনুমান শুধুমাত্র যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড শান্তনু এবং অয়নের হাত ধরে হয়েছে তেমন নয় বরং পৌরসভাতেও বিভিন্নভাবে বেআইনিভাবে নিয়োগ করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে অয়ন-শান্তনু জুটি। গোয়েন্দাদের অনুমান এই জুটির সঙ্গে কুন্তল ঘোষও জড়িত থাকতে পারেন। এই কুন্তল ঘোষের নাম প্রথম শোনা যায়, বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত তাপস মণ্ডলের গলায়। তিনি জানান, হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অতপ্রোতভাবে যুক্ত এবং ভালোভাবে তদন্ত করলে দেখা যাবে তিনি প্রায় একশো কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। গ্রেফতারির পর পালটা তাপসকেই দুষেছেন কুন্তল।
এরপরই কুন্তলকে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠায় সিবিআই। বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে কুন্তলের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। পরে সেখান থেকেই কুন্তলকে গ্রেফতার করেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা। শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলকে গ্রেফতারের পর জেরা করছে ইডিও ৷ যদিও তাঁর বাড়িতে কীভাবে এই বিপুল পরিমাণের ওএমআর শিট এবং চাকরিপ্রার্থীদের খাতা এসে পৌঁছল সেই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কোনও উত্তর দিতে চাননি অয়ন শীল। তদন্তকারীদের অনুমান অয়নের অফিস এবং ফ্ল্যাট থেকে যে চাকরিপ্রার্থীদের তথ্য পাওয়া গিয়েছে তাঁরা প্রত্যেকেই শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে সেই চাকরি আদায় করেছেন। বর্তমানে তারা বিভিন্ন জায়গায় চাকরিরত অবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের তরফ থেকে সেই সকল চাকরিপ্রার্থীর নাম তালিকা নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে তাঁদেরকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন:শান্তনু ঘনিষ্ঠ প্রোমোটারের ভাড়া বাড়িতে ইডি অভিযান, ফের প্রকাশ্যে টলিউড যোগই