কলকাতা, 22 সেপ্টেম্বর : অবশেষে পাওয়া গেল অনুমতি ৷ ভগ্নস্তূপের মাঝেই স্যাঁকরা পাড়া লেনে হবে দুর্গাপুজো ৷ একাধিক বিধিনিষেধ থাকলেও তাতে অবশ্য আক্ষেপ নেই স্যাঁকরা পাড়া লেনের বাসিন্দাদের ৷ কারণ পুজোটা তো অন্তত হচ্ছে ৷ আর "মহাপ্রলয়ে ধ্বংসস্তূপে, মা আসুক শান্তি রূপে", এই আশা নিয়ে পুজোর তোড়জোড় শুরু করেছেন তাঁরা ৷
57 বছর ধরে ধুমধাম করে পাঁচ নম্বর স্যাঁকরা পাড়া লেনের সামনে দুর্গাপুজো করে আসছেন স্থানীয়রা ৷ 58 তম বছরেও শুরু হয়েছিল পুজোর প্রস্তুতি ৷ কিন্তু, 31 অগাস্ট রাতেই বদলে যায় ছবিটা ৷ বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাঁকরা পাড়া লেনের কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা যায় । রাত থেকেই সেই বাড়িগুলির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়তে শুরু করে । ধসে পড়ে কয়েকটি বাড়ি । ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও অনেক । ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । জরুরি ভিত্তিতে খালি করে দেওয়া হয় বাড়িগুলি । অনেকেরই ঠাঁই হয় হোটেলে । পরে এলাকার আরও কয়েকটি বাড়ি ভেঙে যায় ৷ সেই পরিস্থিতিতে পুজো হবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তার মেঘ তৈরি হয় বাসিন্দাদের মনে ৷ মেট্রো কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, কলকাতা পৌরনিগমের কাছে পুজোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন স্থানীয়রা ৷ কিন্তু, নিরাপত্তার কারণে সেখানে পুজো আয়োজনের অনুমতি দেওয়া নিয়ে দোটানায় ছিল সব পক্ষই ৷ বাধ্য হয়ে বিকল্প জায়গা দেওয়ার আবেদন করেন স্থানীয়রা ৷ প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছিল, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের উলটো দিকের ফুটপাথে পুজো করা যেতে পারে ৷ কিন্তু, সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায় ৷ ফলে দীর্ঘদিনের পুজো এবছর আদৌও করা যাবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন স্থানীয়রা ৷ পাড়ার দুর্গাপুজোর মধ্য দিয়েই ঘরভিটে হারানোর যন্ত্রণায় কিছুটা প্রলেপ লাগাতে চেয়েছিলেন তাঁরা ৷ তাই বারবার পুজো আয়োজনের জন্য দরবার করতে থাকেন ৷
এই সংক্রান্ত আরও খবর :বউবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও মেট্রোর টানেল পরীক্ষা করলেন বিশেষজ্ঞরা
এরপর আজ সকালে এলাকা পরিদর্শনে যান স্থানীয় কাউন্সিলর সত্যেন্দ্রনাথ দে, মেট্রো রেলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথ দেওয়ানজি সহ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা ৷ একাধিক জায়গা ঘুরে দেখেন তাঁরা ৷ শেষপর্যন্ত আগের জায়গাতেই পুজোর অনুমতি দেওয়া হয় ৷ তবে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ৷ চলবে বাড়তি নজরদারি ৷ স্যাঁকরা পাড়া লেনে ঢোকার যে মূল পথ সেখানে কয়েকটি বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে ৷ তাই কোনওরকম ঝুঁকি এড়াতে সেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যাবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷ গৌর দে লেনের একটি ছোটো গলি দিয়ে ঢুকতে হবে ৷ শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দা ও কমিটির সদস্যরাই পুজোয় আসতে পারবেন ৷ দর্শনার্থীদের ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে না ৷ উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন, 14 নম্বর স্যাঁকরা পাড়া লেনের ক্লাব ঘরে পুজোর বাসন ও প্রতিমার গয়না রাখা আছে ৷ সেগুলি বের করার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে ৷ কমানো হচ্ছে প্রতিমার উচ্চতাও ৷ 12 ফুটের পরিবর্তে এবার দেড় ফুটের প্রতিমাতেই পুজো হবে ৷
এই সংক্রান্ত আরও খবর :মেট্রোর কাজে বাড়িতে ধস, কাল নবান্নে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর
পুজোর খবর যেন আজ স্যাঁকরা পাড়া লেনে কিছুটা খুশির হাওয়া বয়ে এনেছে ৷ দীর্ঘদিনের একটা গুমোট, আতঙ্কের পরিবেশ থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছেন বলে বক্তব্য স্থানীয় বাসিন্দাদের ৷ স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "আমাদের একান্ত অনুরোধ কাজ এসেছে ৷ এটা তো শুধু স্যাঁকরা পাড়ার পুজো নয়, তিনটি পাড়ার পুজো ৷ তাই আমরা ছোটো করে হলেও পুজো করব ৷ স্যাঁকরা পাড়ার অস্তিত্ব আজ বিপন্ন ৷ এটা আমাদের অস্তিত্বের লড়াই ৷" আর পুজোটার জন্য কতটা যে স্থানীয়রা হাপিত্যেশ করে বসেছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেল গৌর দে লেনের ঢোকার মুখের বড় একটা হোর্ডিংয়েই ৷ তাতে লেখা "মহাপ্রলয়ে ধ্বংসস্তূপে, মা আসুক শান্তি রূপে ৷" আর সেই ধ্বংসস্তূপের মাঝে দুর্গাপুজোকেই সম্বল করেই আশার আলো খুঁজছেন স্যাঁকরা পাড়া লেনের বাসিন্দারা ৷
এই সংক্রান্ত আরও খবর :"কাগজে কোনও স্ট্যাম্প ছাড়াই ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি, কীভাবে বিশ্বাস করব"