দমদম, 11 নভেম্বর: কলকাতা শহরের অন্যতম ব্যস্ত রেল স্টেশন দমদম ৷ অফিসযাত্রী থেকে ব্যবসায়ী এবং নানান লোকজনের চলাচলের কারণে সারাক্ষণ ভিড়ে ঠাঁসা থাকে এই স্টেশন ৷ তবে, সেই ব্যস্ততার মাঝেও স্টেশন চত্বরে কান পাতলেই শোনা যায় বাঁশির এক মনোরম সুর ৷ এক ব্যক্তি তাঁর বাঁশিতে বিভিন্ন গানের সুর তুলছেন ৷ তিনি বাঁশিওয়ালা অনিল বিশ্বাস (Dum Dum Flute Artist Anil Biswas ) ৷ আর তাঁর বাঁশির সেই সুর শুনতে শুনতে কেউ এগিয়ে যান গন্তব্যের দিকে ৷ তো আবার স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষার মাঝেই বাঁশির সুর উপভোগ করেন যাত্রীরা ৷
বাঁশিকে ঘিরেই জীবনের 65টা বছর কাটিয়ে ফেলেছেন বর্ধমানের অনিল বিশ্বাস ৷ ছোট থেকে আর্থিক সংকটের কারণে, কখনও পেশাগতভাবে শেখা হয়নি বাঁশি বাজনো ৷ মিষ্টির দোকানে কাজ করার পাশাপাশি, বিভিন্ন গুরুদের থেকে বাঁশির প্রশিক্ষণ নিতেন অনিলবাবু ৷ পেশাগতভাবে বাঁশি বাজানোর ইচ্ছা ছিল তাঁর ৷ কিন্তু, সেই সময় ও অর্থ কোনটাই জুগিয়ে উঠতে পারেনি অনিল বিশ্বাস ৷ ফলে বাঁশি বাজানোর বদলে, শিখেছিলেন বাঁশি তৈরি করার পদ্ধতি ৷ তার পর নিজের হাতে বাঁশি তৈরি করা এবং সেই বাঁশি বিক্রি করেই জীবন কাটছে তাঁর ৷
তবে, শুধু দমদম স্টেশন চত্বর নয়, উৎসবের মরশুমে রবীন্দ্র সদনেও দেখা যায় তাঁকে ৷ আপন মনে বাঁশি বাজান তিনি ৷ তবে, বাঁশি বাজালেও একটা সময় তাঁর সুরের কদর করেনি কেউ ৷ জীবনের প্রথম দিকে অনিলবাবুর স্বপ্নপূরণ না-হলেও, বয়স বাড়লে তা সম্ভব হয় ৷ এখন শুধু বাঁশি বাজানো নয়, এর পাশাপাশি বিভিন্ন সিনেমা-সিরিয়ালেও শোনা যায় তাঁর বাঁশির সুর ৷ এমনকি বেশ কিছু অনুষ্ঠানের জন্য ডাকও পয়েছেন তিনি ৷ তবে, শুধু বাঁশি বাজানো আর বিক্রি করা নয় ৷ এবার শিক্ষক হিসেবেও সম্মানিত হচ্ছেন তিনি ৷
স্টেশন চত্বরেই থমকে বাঁশিওয়ালা অনিল বিশ্বাসের প্রতিভা আরও পড়ুন:বাঘ বিধবাদের পাশে বাউল শিল্পী
তবে এত কিছু হলেও, প্রতিভার যথার্থ মূল্য কেউ দেননি বলেই আক্ষেপ অনিল বিশ্বাসের ৷ কলকাতায় বাঁশি বাজিয়ে জীবন চালালেও, মাথা গোজার জায়গা পাননি তিনি ৷ তাই এখনও বর্ধমান থেকে দিনের পর দিন যাতায়াত করেন ৷ অনিলবাবু জানান, ‘‘যত না-বাঁশি বিক্রি হত, তার থেকে বেশি ডাক আসত ৷ তবে, করোনা কারণে সেটা এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে ৷ বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি পরে শিখেছিলাম বাঁশি তৈরিও ৷ এখন বয়সের কারণে রোজ আসতে পারি না ৷ 15 বছর বয়সে এই কাজ শুরু করেছি ৷ পরিবারে সবাই আছে ৷ তবে, এত কিছু হওয়া সত্ত্বেও মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি ৷’’