পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কোরোনায় বাতিল সব অনুষ্ঠান, চিন্তায় ক্যাটারিং মালিকরা

কোরোনার জেরে যখন দেশজুড়ে লক ডাউন চলছে, তখন অন্যান্য সংস্থার মতো ক্ষতির মুখ দেখছে ক্যাটারিং সার্ভিসও৷ লক ডাউনের ফলে বাতিল হয়ে যাচ্ছে একের পর এক অনুষ্ঠান৷ শুধু তাই নয়, অনেককেই ফেরত দিতে হচ্ছে অগ্রিম টাকাও৷ যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে শুরু করে ইভেন্টের লোকেরাও৷

By

Published : Apr 21, 2020, 6:52 PM IST

Wb_kol_01a_banquets
কোরোনার প্রভাব ক্যাটারিং সার্ভিসে

কলকাতা, 21 এপ্রিল: বাংলা পঞ্জিকা মতে, চৈত্র মাসে কোনও শুভ কাজ হয় না। তারপরেই বৈশাখ, জৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের বিয়ের লগ্ন থাকে। অনেকেই আবার বর্ষার জন্য শ্রাবণ মাসে বিয়ের অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলেন। তাই বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসকেই বিয়ের জন্য অনেকেই বেছে নেন৷ তার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় প্রায় তিন থেকে চার মাস আগেই৷

গয়না কেনা থেকে শুরু করে অগ্রিম টাকাও দিয়ে রাখা হয় ক্যাটারিং ও অনুষ্ঠান বাড়ি গুলিতে৷ এখানেই শেষ নয়, অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখা হয় ফুলওয়ালা, বিউটি পার্লার, মিষ্টি বিক্রেতা, ডেকোরেটর, পুরোহিত সহ আরও বিয়ের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত থাকেন তাঁদেরও৷ চরম ব্যস্ততায় নিশ্বাস নেওয়ার সময় পাননা তাঁরা৷

তবে, এবারে লক ডাউনের জেরে সে সব বন্ধ ৷ কোরোনার প্রভাব এসে পড়েছে এখানেও ৷ কোরোনার জেরে যখন দেশজুড়ে লক ডাউন চলছে, তখন অন্যান্য সংস্থার মতো ক্ষতির মুখ দেখছেন তাঁরাও ৷ লক ডাউনের ফলে বাতিল হয়ে যাচ্ছে একের পর এক অনুষ্ঠান৷ শুধু তাই নয়, অনেককেই ফেরত দিতে হচ্ছে অগ্রিম টাকাও৷ যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে শুরু করে ইভেন্টের লোকেরাও৷ কলকাতার অন্যতম ক্যাটারিং সার্ভিস 'বিজলিগ্রিলের' ডিরেক্টর তপন বারিক বলেন, "লকডাউনের জেরে শুধু এপ্রিল মাসেই বিয়ে, উপনয়ন ও আরও কয়েকটি ছোটো অনুষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় 17টি কাজ স্থগিত হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কাজ বাতিলও হয়েছে। তবে, যেসব কাজ স্থগিত হয়ে গেল সেগুলির পরবর্তী তারিখ নিয়ে এখনও কোনও কথা হয়নি। এর ফলে আমরা ব্যাপক আর্থিক লোকসানের মধ্যে পড়েছি। সারা বছরই ছোটো-বড় বহু অনুষ্ঠান, কর্পোরেট কাজ, জন্মদিনের অনুষ্ঠান থাকলেও বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের দিকে আমরা বেশি জোর দিয়ে থাকি। সেগুলি সবই হাতছাড়া হয়ে গেল।"

কোরোনা পরিস্থিতি সারিয়ে আবার কবে ছন্দে ফিরবে শহর, সেবিষয়ে সন্দিহান সকলেই৷ পরিস্থিতি ঠিক হলেও মানুষের মন থেকে কোরোনার ভয় অতি সহজেই দূর হবে না৷ তাই, স্থগিত হয়ে যাওয়া কাজ আবার কবে হবে বা নতুন করে কোনও কাজ হবে কি না সেবিষয়ে কোনও দিশা পাচ্ছেন না তাঁরা৷ এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, "কোরোনার আতঙ্ক কাটিয়ে কবে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিকভবে তা এখন বলা যাচ্ছে না। আর্থিক ক্ষতির একটা দীর্ঘস্থায়ী ছাপ পড়বে। যাঁরা আমাদের কাঁচা মাল জোগান দেন তাঁদের অনেকেই আমরা আগাম টাকা দিয়ে রেখেছি। সেই টাকাও আমরা এখন ফেরত নিতে পারছিনা।"

অপরদিকে, অনুষ্ঠান বাড়ি মঙ্গলম ব্যাঙ্কোয়েটের ম্যানেজার ওয়াসিম আক্রম বলেন, "এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই মাসে যে তারিখগুলি ছিল সেগুলি স্থগিত হয়েছে। কাজকর্ম বন্ধ থাকলেও কর্মীদের বেতন, ইলেকট্রিকের খরচ ছাড়াও আরও অন্যান্য খরচ তো চালিয়ে যেতেই হচ্ছে। ছোটো-বড় সব ব্যবসায়ীরা বিরাট ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমাদের ব্যবসার সার্বিক কাঠামোটা যেহেতু একটি চেনের মতো সব চেয়ে ছোটো তাঁতী থেকে বিক্রেতা ও ক্রেতার উপর নির্ভরশীল তাই একজন ছোটো কুটির শিল্পীর থেকে শুরু করে ক্রেতাদের সকলের উপরেই এর প্রভাব পড়বে।"

লক ডাউনের প্রভাব পড়বে আর্থিক পরিস্থিতিতে ৷ তাই লক ডাউন ওঠার পর মানুষের হাতে সেভাবে টাকা থাকবে না এটা বলাই বাহুল্য৷ এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এত খরচ করে আদেও কেউ বড়ো কোনও অনুষ্ঠান কি করতে চাইবেন? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে৷ এপ্রসঙ্গে মঙ্গলম ব্যাংকয়েটের ম্যানেজার বলেন, "লকডাউনের জেরে সাধারণ মানুষের হাতে তেমন যে টাকা থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। তাই লকডাউন উঠে গেলেও আগে একজন যত টাকা খরচ করে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান করতেন এখন তার চেয়ে কিছুটা কমেই করতে চাইবেন।" পাশাপাশি তিনি জানান, অন্যান্য বছর এই সময় তাঁদের ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিং হয়ে যেত৷ তবে, এবছরে নতুন করে আর কোনও বুকিংই হয় নি৷ সব মিলিয়ে বেশ চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁদের কপালে৷

শহরের অপর একটি ক্যাটারিং সংস্থা, 'মুন্না মহারাজের' ম্যানেজার জশ সিং বলেন, "এবছর ব্যবসার হল ফিরবে না বললেই চলে। মারওয়াড়ি ক্যালেন্ডার মতে আগামী বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে কোনও বিয়ের লগ্ন নেই। অন্যদিকে এবছরে বাঙালি ও অবাঙালীদের বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। এপ্রিল, মে ও জুন মাস মিলিয়ে প্রায় 70টি বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এই লোকসান তুলতে সময় লেগে যাবে কমপক্ষে 2 থেকে 3 বছর। আমাদের ব্যবসার সঙ্গে বহু ছোটো-বড় ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকাও জড়িয়ে রোয়েছে। তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয়।"

ক্যাটারিং সংস্থা বা ইভেন্টের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কর্মীদের কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কাজে ফিরতে পারছেন না তাঁরা৷ রোজগারের সব রাস্তা বন্ধ তাঁদের কাছে৷ আপাতাত, পরিস্থিতি ঠিক কবে হবে সেদিকে তাঁকিয়ে তাঁরা৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details