কলকাতা , 31 মার্চ : লকডাউন মেনে না চললে, নভেল কোরোনা ভাইরাসের (COVID-19) সংক্রমণ কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়বে । তার জেরে , সমাজের বিভিন্ন স্তরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এই রোগ । ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে । অথচ, সব জায়গায় লকডাউন মানা হচ্ছে না । যে কারণে আশঙ্কায় রয়েছে চিকিৎসকরা । এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন যাতে না হতে হয় , তার জন্য সাধারণ মানুষকে লকডাউন মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা ।
গোটা দেশে 21 দিনের লকডাউন । বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, এক্সপার্ট কমিটি , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র পরামর্শ অনুযায়ী সরকার লকডাউনের ঘোষণা করেছে । একথা জানিয়ে RG কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর , চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন , "এক জনের শরীর থেকে অন্য জনের শরীরে এই ভাইরাস যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে , তা যদি রোধ করা যায় তাহলে কমিউনিটিতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমানো যাবে ।" এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, " কমিউনিটিতে যদি এই ভাইরাসের সংক্রমণ একবার ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কন্ট্যাক্ট পারসনকে ট্রেস করা তখন আর কোনওভাবেই সম্ভব হবে না । তখন সমাজের বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক আকারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়বে ।"
একজন মানুষের থেকে অন্য মানুষের মধ্যে যাতে দূরত্ব বজায় থাকে, তার জন্য লকডাউন । সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং করানোর জন্য এই লকডাউন । অর্থাৎ, এক জায়গায় যাতে বেশি ভিড় না হয় । এদিকে, বাজার-দোকান অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রে কিছু ছাড় রয়েছে । এ কথা জানিয়ে চেস্ট-মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, "বাজারেও দূরত্ব বজায় রাখতে হবে । অথচ, দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় সেটা মানা হচ্ছে না । এক দোকানে অনেকে ভিড় করছেন । রাস্তায় ক্রিকেট , ফুটবল , ক্যারাম খেলা চলছে । এই সব জায়গায় কোথাও কিন্তু সোশাল ডিস্ট্যান্স মানা হচ্ছে না । কেউ এখন বুঝতে পারছেন না । তবে, কয়েকদিন পরে এটা বোঝা যাবে, যখন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে ।" কীভাবে? তিনি বলেন , "রাস্তায় যাঁরা ঘুরছেন এবং সোশাল ডিসট্যান্সিং অগ্রাহ্য করছেন, তাঁদের মধ্যে এই ভাইরাসের হেলদি ক্যারিয়ার কেউ নন, তা বলার মতো কোনও প্রমাণ আমাদের কাছে নেই । এই ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড 2 থেকে 14 দিন । কাজেই, এই ভাইরাস কারুর শরীরে প্রবেশের পর থেকে রোগের উপসর্গ দেখা দিতে দুই দিন সময় লাগতে পারে আবার দুই সপ্তাহ সময়-ও লাগতে পারে । এটা নির্ভর করবে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উপরে ।"
বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "ধরুন কারও ক্ষেত্রে রোগের প্রভাব বুঝে উঠতে দুই সপ্তাহ সময় লাগল । আপনি বাজারে গেলেন, হেলদি ক্যারিয়ারের থেকে সংক্রমণ নিয়ে এলেন । এই হেলদি কেরিয়ারদের আটকানোর জন্য আরও বেশি করে লকডাউন করা হয়েছে । যাঁরা রোগে ভুগছেন বা অসুস্থতায় তাঁরা হাসপাতালে রয়েছেন । যাঁরা হালকা অবস্থায় রোগে আছেন, তাঁরা হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন । লকডাউনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেই । হেলদি কেরিয়াররা যাতে রোগটি ছড়াতে না পারে, তার জন্য এই লকডাউন ।" তিনি আরও বলেন, "হেলদি ক্যারিয়ারের মাধ্যমে রোগ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে , তা আটকানোর জন্য লকডাউন জরুরি । লকডাউনকে যদি অগ্রাহ্য করি, যেটা বহু মানুষ করছেন, সেটা দুঃসাহসিক কাজ হচ্ছে । এবং, এর ফল কয়েক দিন পরে পাওয়া যাবে । হয়তো এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি বা প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ আমরা দেখতে হবে যে , আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে । "
মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "যদিও এই রোগে মৃত্যুর হার খুব কম দুই-তিন শতাংশ । তহলে দুই বা তিন শতাংশ যদি মৃত্যুর হার হয় , এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে দুই-তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হবে ।" চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, লকডাউন মেনে চলার জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে । লকডাউনের নিয়ম না মানলে ইমার্জেন্সি এপিডেমিক অ্যাক্ট অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হতে পারে । মানুষ যদি সচেতন না হন, তাহলে এই রোগ কোনওভাবেই আটকানো যাবে না । চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, " ইট্যালিতে প্রথম থেকে লকডাউন মানা হয়নি । তাই ওখানে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে । আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি এবং জনসংখ্যার ঘনত্বও বেশি । লকডাউন মেনে না চললে আমাদের দেশে ভয়াবহতা আরও কয়েকগুণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"
এদিকে, লকডাউনের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য খোলা রয়েছে বাজার । চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, একদিনে যতটা সম্ভব কয়েকদিনের বাজার করে নেওয়া উচিত। রোজ রোজ বাজারে যাওয়ার কোনও দরকার নেই । বাজার থেকে ফেরার পরে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে । জামা-কাপড় গরম জলে সাবান দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করে নিতে হবে । স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ৷ যাতে বাড়িতে কোনও ভাবেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রবেশ করতে না পারে ।