পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

লকডাউন না মানলে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কায় চিকিৎসকরা

কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় 21 দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ কিন্তু তা যদি সঠিকভাবে না মানা হয় , পরবর্তীতে আরও ছড়িয়ে পড়বে এই ভাইরাস ৷ তাই লকডাউন মেনে চলারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা ৷

Kolkata
ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কায় চিকিৎসকরা

By

Published : Mar 31, 2020, 8:36 PM IST

কলকাতা , 31 মার্চ : লকডাউন মেনে না চললে, নভেল কোরোনা ভাইরাসের (COVID-19) সংক্রমণ কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়বে । তার জেরে , সমাজের বিভিন্ন স্তরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এই রোগ । ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে । অথচ, সব জায়গায় লকডাউন মানা হচ্ছে না । যে কারণে আশঙ্কায় রয়েছে চিকিৎসকরা । এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন যাতে না হতে হয় , তার জন‍্য সাধারণ মানুষকে লকডাউন মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা ।

গোটা দেশে 21 দিনের লকডাউন । বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, এক্সপার্ট কমিটি , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র পরামর্শ অনুযায়ী সরকার লকডাউনের ঘোষণা করেছে । একথা জানিয়ে RG কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর , চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন , "এক জনের শরীর থেকে অন্য জনের শরীরে এই ভাইরাস যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে , তা যদি রোধ করা যায় তাহলে কমিউনিটিতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমানো যাবে ।" এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, " কমিউনিটিতে যদি এই ভাইরাসের সংক্রমণ একবার ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কন্ট‍্যাক্ট পারসনকে ট্রেস করা তখন আর কোনওভাবেই সম্ভব হবে না । তখন সমাজের বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক আকারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়বে ।"

একজন মানুষের থেকে অন্য মানুষের মধ্যে যাতে দূরত্ব বজায় থাকে, তার জন্য লকডাউন । সোশ্যাল ডিস্ট‍্যান্সিং করানোর জন্য এই লকডাউন । অর্থাৎ, এক জায়গায় যাতে বেশি ভিড় না হয় । এদিকে, বাজার-দোকান অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রে কিছু ছাড় রয়েছে‌ । এ কথা জানিয়ে চেস্ট-মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, "বাজারেও দূরত্ব বজায় রাখতে হবে । অথচ, দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় সেটা মানা হচ্ছে না । এক দোকানে অনেকে ভিড় করছেন । রাস্তায় ক্রিকেট , ফুটবল , ক‍্যারাম খেলা চলছে । এই সব জায়গায় কোথাও কিন্তু সোশাল ডিস্ট্যান্স মানা হচ্ছে না । কেউ এখন বুঝতে পারছেন না । তবে, কয়েকদিন পরে এটা বোঝা যাবে, যখন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে ।" কীভাবে? তিনি বলেন , "রাস্তায় যাঁরা ঘুরছেন এবং সোশাল ডিসট‍্যান্সিং অগ্রাহ্য করছেন, তাঁদের মধ্যে এই ভাইরাসের হেলদি ক্যারিয়ার কেউ নন, তা বলার মতো কোনও প্রমাণ আমাদের কাছে নেই । এই ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড 2 থেকে 14 দিন । কাজেই, এই ভাইরাস কারুর শরীরে প্রবেশের পর থেকে রোগের উপসর্গ দেখা দিতে দুই দিন সময় লাগতে পারে আবার দুই সপ্তাহ সময়-ও লাগতে পারে । এটা নির্ভর করবে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উপরে ।"

বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "ধরুন কারও ক্ষেত্রে রোগের প্রভাব বুঝে উঠতে দুই সপ্তাহ সময় লাগল । আপনি বাজারে গেলেন, হেলদি ক্যারিয়ারের থেকে সংক্রমণ নিয়ে এলেন । এই হেলদি কেরিয়ারদের আটকানোর জন্য আরও বেশি করে লকডাউন করা হয়েছে । যাঁরা রোগে ভুগছেন বা অসুস্থতায় তাঁরা হাসপাতালে রয়েছেন । যাঁরা হালকা অবস্থায় রোগে আছেন, তাঁরা হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন । লকডাউনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেই । হেলদি কেরিয়াররা যাতে রোগটি ছড়াতে না পারে, তার জন্য এই লকডাউন ।" তিনি আরও বলেন, "হেলদি ক্যারিয়ারের মাধ্যমে রোগ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে , তা আটকানোর জন্য লকডাউন জরুরি । লকডাউনকে যদি অগ্রাহ্য করি, যেটা বহু মানুষ করছেন, সেটা দুঃসাহসিক কাজ হচ্ছে । এবং, এর ফল কয়েক দিন পরে পাওয়া যাবে । হয়তো এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি বা প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ আমরা দেখতে হবে যে , আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে । "

মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "যদিও এই রোগে মৃত্যুর হার খুব কম দুই-তিন শতাংশ । তহলে দুই বা তিন শতাংশ যদি মৃত্যুর হার হয় , এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে দুই-তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হবে ।" চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, লকডাউন মেনে চলার জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে । লকডাউনের নিয়ম না মানলে ইমার্জেন্সি এপিডেমিক অ্যাক্ট অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হতে পারে । মানুষ যদি সচেতন না হন, তাহলে এই রোগ কোনওভাবেই আটকানো যাবে না । চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, " ইট্যালিতে প্রথম থেকে লকডাউন মানা হয়নি । তাই ওখানে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে । আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি এবং জনসংখ্যার ঘনত্বও বেশি । লকডাউন মেনে না চললে আমাদের দেশে ভয়াবহতা আরও কয়েকগুণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"

এদিকে, লকডাউনের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য খোলা রয়েছে বাজার । চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, একদিনে যতটা সম্ভব কয়েকদিনের বাজার করে নেওয়া উচিত। রোজ রোজ বাজারে যাওয়ার কোনও দরকার নেই । বাজার থেকে ফেরার পরে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে । জামা-কাপড় গরম জলে সাবান দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করে নিতে হবে । স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ৷ যাতে বাড়িতে কোনও ভাবেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রবেশ করতে না পারে ।

বাজারে গেলেন, সেখান থেকে কীভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ? মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তপন বিশ্বাস বলেন, "যদি আপনি মনে করেন, আপনি সুস্থ আছেন। বাজারে যাচ্ছেন, ভাইরাস কীভাবে আসবে? আসতে পারে এইভাবে যে, বাজারে যাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আপনি কেনাকাটা করছেন, তাঁর এই সংক্রমণ রয়েছে কি না তা আপনার জানা নেই । তিনি হয়তো উপসর্গহীন অবস্থায় সংক্রমণ বহন করে নিয়ে চলেছেন । তিনি হয়তো হাঁচি দিলেন বা তাঁর পাশে বিভিন্ন যে অবজেক্টগুলি রয়েছে , আপনি হয়তো সেখানে কোনওভাবে স্পর্শ করেছেন । এইভাবে আপনি কন্ট‍্যাক্ট করে ভাইরাসটি বাড়িতে নিয়ে এলেন । এর ফলে আপনার বাড়ির সকলে সংক্রমণের আশঙ্কায় রয়ে গেলেন । নিজেকে বাঁচাতে, পরিবারকে বাঁচাতে, দেশকে বাঁচাতে নিজেকে সতর্ক থাকতে হবে ।" তিনি আরও বলেন, "মানুষের কন্ট‍্যাক্টে এখন যত কম যাওয়া যায়, ততই ভালো । এটা ড্রপলেট ইনফেকশন । দু জন মানুষের মধ্যে যদি তিন ফুটের দূরত্বের ব্যবধান থাকে, তাহলে একজনের থেকে অন্য জনের শরীরে এই ভাইরাসের প্রবেশ করার সম্ভাবনা কম । যদি কেউ বাজারে যান, তাহলে এই দূরত্ব মেনে চললেও অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বনের জন্য মাস্ক ব্যবহার করবেন । বাড়িতে ফিরে ভালো করে হাত পরিষ্কার করুন, জামা-কাপড় পরিষ্কার করুন । স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।"

চেস্ট-মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কৌশিক চক্রবর্তী বলেন , "কেউ হয়তো মাস্ক পরে বাজারে গিয়েছেন । কিন্তু ভিড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন পাঁউরুটি কিনবেন বলে । কিন্তু, পাশের একজন একটু আগে হাঁচি দিয়েছেন । তিনি নাক ঢেকেও হাঁচি দিয়েছেন । বলতেই পারেন কেউ, সবই ঠিক আছে । কিন্তু, যিনি হাঁচি দিলেন, তাঁর হাতে তাঁর নিজের কফ লাগল । কিছুক্ষণ পরে তিনি পাঁউরুটির উপরে হাত দিলেন । পরে পাঁউরুটির উপরে আপনি হাত দিয়ে অন্য একটা পাঁউরুটি নিলেন । আপনি বলবেন, প্রোটেক্টেড ছিলাম । এদিকে, হয়তো ভালো করে হাত ধোওয়ার আগে পাঁউরুটির উপর রাখা হাত আপনার প্যান্টেও লাগল, প্যান্টে রয়ে গেল জীবাণু । ফলে বাড়িতে সেই জীবাণু প্রবেশ করল । "

এই চিকিৎসক বলেন, "বহু মানুষ আছেন যাঁরা দিন আনেন, দিন খান। তাঁদের খুব সমস্যা হচ্ছে। লকডাউনে দেশের বেশিরভাগ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু, আগে প্রাণ বাঁচাতে হবে । কম বয়সিদের ক্ষেত্রে হয়তো কোনও সমস্যা হবে না , সমস্যা বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে হবে । আমাদের দেশে 20 শতাংশের বেশি 60 বছরের বেশি বয়সের মানুষ রয়েছেন । জনসংখ্যা 130 কোটি । বয়স্কদের সকলে যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন , 130 কোটি জনসংখ্যার 20 শতাংশ অর্থাৎ , 26 কোটি মানুষের যদি সংক্রমণ হয় , তাহলে পরিস্থিতি কীরকম হবে ?" লকডাউন যদি না মানি, তাহলে যে আর্থিক সমস্যা হচ্ছে, লকডাউনের সময়সীমা সরকার বাড়িয়ে দিলে আরও বেশি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে । তখন আরও বেশি বিপদে পড়তে হবে ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details