কলকাতা , 27 জুলাই : কোরোনার গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা স্বীকার করেছে রাজ্য সরকার । এই পরিস্থিতির মধ্যে চিকিৎসকদের উদ্বেগ এবং চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন মরশুমি রোগ । একদিকে কোনটি কোরোনা এবং কোনটি সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিচ্ছে । তেমনই অন্যদিকে মশাবাহিত ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কাও রয়েছে । সব মিলিয়ে আতঙ্কে, উদ্বেগে রয়েছে চিকিৎসকদের বিভিন্ন অংশ ।
মূলত বর্ষাকালেই এই মরশুমি রোগগুলির প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পায় । মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া । ডায়ারিয়া , আন্ত্রিক , জন্ডিস ইত্যাদি জলবাহিত রোগের প্রকোপও এই সময়ে বৃদ্ধি পায় । পাশাপাশি রয়েছে শ্বাসনালীর সংক্রমণ । তার মধ্যে রয়েছে কমন কোল্ড সংক্রমণ এবং ফ্লু । স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, গত বছর জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যায় । বর্ষাকালে তা আরও বৃদ্ধি পায় । নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় 47 হাজার । এছাড়া মশাবাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে 700 জন (2020-র মে পর্যন্ত) । এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের যে মরশুমি রোগ আছে সেগুলিতেও প্রত্যেক বছর এই সময় অনেকে আক্রান্ত হয় । বিশেষ করে শ্বাসনালীর সংক্রমণ । এই সংক্রমণের উপসর্গের সঙ্গে কোরোনা উপসর্গের অনেকটা মিল রয়েছে । এটা এক ধরনের ভাইরাল ইনফেকশন । এই ইনফেকশনের ক্ষেত্রে নাক দিয়ে জল পড়ে, হাঁচি বেশি হয় , জ্বর সাধারণত থাকে না তবে অল্প কফ দেখা যায় । এই বিষয়ে ইনফেকশাস ডিজ়িজ়েস অ্যান্ড বেলেঘাটা জেনেরাল (ID&BG) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "আমরা কোরোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখেছি যে প্রথমে সর্দি-কাশি-জ্বর হয় এবং তার পরের স্টেজে শ্বাসকষ্ট হয় । এই জন্য কমন কোল্ড ইনফেকশন এবং কোরোনা ভাইরাসকে চিকিৎসাগত দিক থেকে পৃথক করা খুব কঠিন । আরও এক ধরনের রোগ এই সময় দেখা যায় যাকে আমরা ফ্লু বলি । ফ্লু-তে সাধারণত অসহ্য মাথা যন্ত্রণা, গা-হাত-পা ব্যথা, এর সঙ্গে প্রবল জ্বর , নাক দিয়ে জল পড়া এবং কাশি হয় । ফলে এগুলির সঙ্গে COVID-19-এর উপসর্গগুলির যথেষ্ট মিল রয়েছে । ফলে কোরোনা আর কমন কোল্ড এবং ফ্লু-র উপসর্গগুলির মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন বিষয় । এই বিষয়টি নিয়ে আমরা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই যথেষ্ট চিন্তায় আছি । "
এই ধরনের কোনও রোগে আক্রান্ত হলে কী করা হবে ?
চিকিৎসক তপন বিশ্বাস বলেন, "প্রোটোকল অনুযায়ী যদি কোনও রোগীর সর্দি, কাশি , জ্বর হয় যতক্ষণ না তাঁর কোরোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বলতে পারছি না যে এটা কমন কোল্ড ইনফেকশন, ফ্লু নাকি কোরোনা । সেক্ষেত্রে মনে করুন , কারও কমন কোল্ড ইনফেকশন হয়েছে, তাঁর সর্দি , কাশি , জ্বর মাথাব্যথা রয়েছে । কোনও চিকিৎসকের কাছে গেলে প্রথমে তিনি কোরোনা পরীক্ষা করাতে বলবেন । এই টেস্টের রিপোর্ট যদি নেগেটিভ হয় তখন উপসর্গগুলি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হবে ।"
তিনি বলেন , সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে যত সংখ্যক বেড রয়েছে সেখানে কোরোনা রোগীদের জন্য সবগুলি পূর্ণ হয়ে আছে । যদি কোনও রোগী সর্দি-কাশি-জ্বর নিয়ে আসেন তাহলে প্রথমে তাঁকে কোরোনা সাসপেক্ট ওয়ার্ডে ভরতি করানো হবে । তারপর টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এলে নন-COVID-19 ওয়ার্ডে ভরতি করানো হবে।
গত ছয় মাস ধরে পৃথিবীতে যেভাবে ক্রমাগত কোরোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে প্রত্যেকেই যথেষ্ঠ উদ্বেগে ও চিন্তায় রয়েছেন । একথা জানিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন , "অবশ্যই আমরা কোরোনাকে আমাদের প্রধান শত্রু হিসেবে গণ্য করব । কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক মরশুমি রোগ রয়েছে যেগুলিকে কোনও মতেই অবহেলা করা যাবে না । এই রোগগুলির বিরুদ্ধেও আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে । আমাদের সব হাসপাতালে দু'টো সমান্তরাল ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে । যেখানে একদিকে কোরোনার বিরুদ্ধে লড়াই করব অন্যদিকে নন-COVID-19- রোগের জন্য পরিষেবা দেব ।"
এখন বর্ষাকাল চলছে । এই সময় কিছু অসুখ হয় । এগুলিকে সিজ়নাল ডিজ়িজ় অফ মনসুন বলা হয় । আরও বৃষ্টি পড়লে এই অসুখগুলি আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত থেকে যেতে পারে । প্রভাসপ্রসূনবাবু বলেন, " বর্ষাকালের এই অসুখগুলির মধ্যে কয়েকটি প্রাণঘাতী । এই অসুখগুলির বিরুদ্ধেও তাই আমাদের লড়াই চালাতে হবে । এর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে সংক্রমিত রোগ । তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে ম্যালেরিয়া । যদিও ম্যালেরিয়া আগের তুলনায় এখন অনেক কমে গেছে । তবুও ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতন থাকতে হবে । এর পাশাপাশি মশাবাহিত অন্য আরও দুটি রোগের মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গি এবং জাপানিজ় এনসেফালাইটিস । মশাবাহিত এই তিনটি অসুখের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় বর্ষাকালে ।"