কলকাতা, 21 অক্টোবর : আজ আনন্দ করতে গিয়ে আগামীকালে দুঃখ ডেকে আনবেন না । কোরোনা পরিস্থিতির মাঝে দুর্গোৎসব কতটা ভয়ংকর পরিণতি ঘটাতে পারে, সেই বিষয়ে আশঙ্কা, উদ্বেগের কথা জানাল রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ । ফের সরকার, প্রশাসন সহ পুজো উদ্যোক্তা, সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আবেদন জানাল তারা ।
এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম (SDF)-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "গত প্রায় তিন মাস ধরে আমাদের দেশে কোরোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী । প্রথম থেকেই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার কোরোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য গোপন করেছে এবং তৈরি করা হয়েছে মিথ্যা তথ্য । তা সত্ত্বেও যতটুকু তথ্য সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, দৈনিক সংক্রমণের দিক থেকে আমাদের দেশই শীর্ষস্থানে রয়েছে । এ রাজ্যে সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে ।"
তিনি বলেন, "দেশের অন্যত্র সংক্রমণের হার যে রকমই দেখানো হোক না কেন, ওনাম উৎসবের পর কেরালায় সংক্রমণ প্রায় 32 গুণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে এখনও পর্যন্ত যে কোনও জায়গায় অবাধ জমায়েত হতে দিলে কোভিড-19-এর সংক্রমণ এক ধাক্কায় বহুগুণ বেড়ে যাবে ।"
সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক বলেন, "আমাদের রাজ্যে দুর্গোৎসব অনেক বেশি জাঁকজমকপূর্ণ । ফলে এখানেও কোরোনার সংক্রমণ বহুগুণ বেড়ে যাবে, এই আশঙ্কা থেকে আমরা বার বার মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসনের শীর্ষ স্থানীয় সকলকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছি ৷ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি ।"
এই রাজ্য তথা এ দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অত্যন্ত শোচনীয় । চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরাট ঘাটতি রয়েছে । ফলে এ রাজ্যেও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা টানা সাত-আট মাস ধরে ডিউটি করে ক্লান্ত, এই সব বিষয়ও গত 12 অক্টোবর চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছে এই সংগঠন । এ রাজ্যে 60 জনের মতো চিকিৎসকের ইতিমধ্যেই কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে । অনেক স্বাস্থ্যকর্মীরও মৃত্যু হয়েছে । চিকিৎসকদের মধ্যে কোরোনায় মৃত্যুর হার সাধারণ মানুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি । এই পরিস্থিতিতে পুজো মণ্ডপগুলিতে নো-এন্ট্রি সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টের রায় খুবই সদর্থক । এ কথা জানিয়ে চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "এই রায় পালন করতে সরকার এবং প্রশাসনকে তৎপর এবং আরও সদর্থক ভূমিকা নিয়ে এই অতিমারীর সুনামি থেকে রাজ্যবাসীকে রক্ষা করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আবারও আবেদন জানানো হয়েছে ।"
তিনি বলেন, "এই উৎসবকে উৎসবের নিয়মে চলতে দিলে যে সংখ্যক মানুষ একসঙ্গে আক্রান্ত হবেন এবং তাঁদের মধ্যে যত সংখ্যক মানুষকে ভরতি করানোর প্রয়োজন দেখা দেবে, এর জন্য ক্রিটিক্যাল কেয়ার-এর বেড, চিকিৎসক সহ অন্যান্য লোকবলের দরকার হবে, তা এ রাজ্যে নেই । এর ফলে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মর্মান্তিক পরিণতি রোধ করতে সব স্তরের, সব পেশার মানুষের কাছে আমরা আবেদন জানাচ্ছি, আজকে আনন্দ করতে গিয়ে আগামীকালের দুঃখ ডেকে আনবেন না । কোরোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দুর্গোৎসব ভয়ংকর পরিণতি ঘটাতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সরকার এবং সাধারণ মানুষের কাছে আমরা আবার আবেদন রাখছি ।"
পুজো উদ্যোক্তাদের প্রতি SDF-এর আবেদন:
অনাড়ম্বর হোক এবারের পুজো ।
ফেসবুক লাইভ, ইউটিউব-এর মাধ্যমে মণ্ডপ এবং প্রতিমা দেখানো হোক ।
পাড়ার পুজোর উপরে জোর দেওয়া হোক ।
প্যাকেট খাবার বাড়িতে পৌঁছাতে হবে ।