কলকাতা, 21 জুলাই : প্রকাশিত হয়েছে উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল। এবার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরে ভরতির প্রক্রিয়া শুরুর পালা । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ও সায়েন্সের বিভিন্ন বিভাগে ভরতির জন্য প্রতিবছরই প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু, কোরোনা সংক্রমণের জেরে বর্তমান পরিস্থিতিতে এবছর অনলাইন বা অফলাইন কোনও পদ্ধতিতেই প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে কোন নিয়মে এবছর হবে স্নাতকে ভরতি ? ইতিমধ্যেই যাদবপুরের অধ্যাপক সংগঠন JUTA-র তরফে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৷ সেই বিষয়গুলি নিয়ে অধ্যাপক মহলকে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে ।
প্রবেশিকার বিকল্প খুঁজতে আলোচনা শুরু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে - প্রবেশিকার বিকল্প কী ?
ইতিমধ্যেই যাদবপুরের অধ্যাপক সংগঠন JUTA-র তরফে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৷ সেই বিষয়গুলি নিয়ে অধ্যাপক মহলকে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে । কী সেই পরামর্শ ?
JUTA-র তরফে যে পরামর্শ তালিকা দেওয়া হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, এবছর উচ্চমাধ্যমিকে বেশ কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি কোরোনা পরিস্থিতির কারণে। অ্যাকাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, যে বিষয়গুলির বোর্ড পরীক্ষা হয়নি সেগুলির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া উচিত। কিন্তু, কোরোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন বা অফলাইন প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগকে ভরতির মেধাতালিকা তৈরির জন্য নিজেদের নিয়ম ঠিক করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। এই নীতি সব বিভাগের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কারণ প্রতিটি বিষয়ে চাহিদা এবং প্রার্থীদের থেকে প্রত্যাশা আলাদা হয়ে থাকে। তাই মেধা বিচারে বিভাগগুলির মধ্যে একটি অভিন্ন নীতি রাখা সম্ভব নয়।
সেই পরামর্শ তালিকায় এটাও যুক্ত করা হয়, যেহেতু উচ্চমাধ্যমিকে বেশ কিছু মেনস্ট্রিম বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি তাই সেই বিভাগগুলি চাইলে প্রার্থীদের মাধ্যমিকে সেই বিষয়ের পারফর্মেন্সও মেধা বিচারে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। একইভাবে বিভাগগুলি সিদ্ধান্ত নেবে যে, তারা বিভিন্ন বোর্ডের প্রার্থী যারা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের জন্য সমান অনুপাতে আসন অ্যালট করবেন কি না। এক্ষেত্রেও বিভাগকে স্বতন্ত্রতা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে JUTA-র তরফে। সেই সঙ্গে দশম শ্রেণির মার্কশিটের স্ক্যানড কপি আবেদনের সময় আপলোড করা, বোর্ডগুলির সঙ্গে কথা বলে প্রার্থীদের মার্কশিট অনলাইনে যাচাই করার ব্যবস্থা করা এবং ক্লাস শুরুর আগে প্রার্থীদের আসল নথি যাচাই করার মতো একাধিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ভরতির জন্য। এই পরামর্শগুলি ছাড়াও যদি কোনও অধ্যাপকের আলাদা কোনও পরামর্শ থাকে এবছরের ভরতি নিয়ে তাহলে তিনি তা সংযোগ করতে পারেন ৷ সেক্ষেত্রে 23 জুলাইয়ের মধ্যে জুটাকে ই-মেইল-এর মাধ্যমে তা জানাতে হবে।
অন্যদিকে, 16 জুলাই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক কোর্সে ভরতির নিয়মাবলী নিয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তর বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৷ সেখানে বলা হয়েছে, মেধার ভিত্তিতে পড়ুয়া ভরতি করতে। সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদ জানায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, NET, NEET, জয়েন্টের মতো পরীক্ষা বাতিল হয়নি ৷ বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেই পরীক্ষাগুলি খানিকটা পিছিয়েছে । যেমন, স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়েছে গোটা দেশের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার। অথচ, তাড়াহুড়ো করে সর্বপ্রথম সরকার স্থগিত করল প্রেসিডেন্সির প্রবেশিকা পরীক্ষা। অধিকাংশ বোর্ডেই এবছর গড়ে নম্বর দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্সির পরীক্ষা বাতিল করতে চেয়ে সরকারের ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়া নিয়ে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। অতীতে বহুবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকার প্রবেশিকা পরীক্ষা তুলে দিতে চাইলেও ছাত্র আন্দোলনের ফলে তারা প্রতিবার অসফল হয়েছে। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের আশঙ্কা, কোরোনা পরিস্থিতিকে ছুতো হিসেবে ব্যবহার করে প্রেসিডেন্সির প্রবেশিকা পরীক্ষা স্থায়ীভাবে তুলে দিতে চায় সরকার।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের দাবি, বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাড়াহুড়ো না করে, বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ইতিমধ্যেই এই দাবিতে ইন্ডিপেন্ডেন্টস কনসলিডেশনের (IC) তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অ্যাডমিশন নোডাল অফিসারের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ছাত্র-ছাত্রীদের তরফে এই সংক্রান্ত একটি পিটিশনে সাক্ষর সংগ্রহ করার কাজ করা হয়েছে। সাক্ষর সম্বলিত সেই পিটিশন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, উপাচার্য ও রাজ্য জয়েন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানকে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা।