কলকাতা, 18 জানুয়ারি: তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেই কোনও সম্প্রীতি নেই, তারা আবার করবে সম্প্রীতি মিছিল ৷ আগামী 22 জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে 'সম্প্রীতি মিছিল'-এর ডাক দিয়েছেন, তাকে এই ভাষাতেই কটাক্ষ করলেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ ৷
উল্লেখ্য, রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সম্প্রীতি মিছিলের বিরোধিতা করে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ তবে বৃহস্পতিবার শর্তসাপেক্ষে সেই মিছিলে অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট । এ প্রসঙ্গে বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ দিন বলেন,
"সম্প্রীতি মিছিলের কী দরকার ছিল ? এদের নিজেদের দলের মধ্যেই সম্প্রীতি নেই । যতবার দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়েছে ততবার সম্প্রীতি মিছিল হয়েছে । লাভ কী হয়েছে তাতে ? সিএএ পাশ হওয়ার পর সমস্ত রাজ্যজুড়ে আগুন লাগানো হল । বাস ট্রেন পুড়িয়ে দেওয়া হল । সে সব কেউ আটকাল না । কোনও মামলাও হল না । যারা পশ্চিমবঙ্গে আগুন জ্বালিয়েছে, গন্ডগোল করছে এবং যারা সম্প্রীতির বিরুদ্ধে তাদেরকে নিয়ে সম্প্রীতি মিছিল করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।"
মুখ্যমন্ত্রীকে এই ভাষায় কটাক্ষ করার পাশাপাশি দিলীপ আরও বলেন, "কথায় কথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি নাকি দাঙ্গাবাজ । সারা দেশজুড়ে উৎসব আনন্দ হচ্ছে, তাঁকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে । কিন্তু তিনি বিরোধিতা করছেন ৷ কেন বিরোধিতা করছেন ? কে উৎপাত করছে ? কে দাঙ্গা করার চেষ্টা করছে । সম্প্রীতির নাম করে সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারী কোর্টে গিয়েছেন । আর তাঁর কথা মতোই ওই দিনের মিছিলে শর্ত আরোপ করা হয়েছে ৷ না হলে তো আবার লুটপাট দাঙ্গা হাঙ্গামা হবে ।"
আজ এ বিষয়ে আসানসোলের বিজেপি বিধায়ক তথা বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল জানান যে, যে দিন সারাদেশের হিন্দুরা মন্দিরে মন্দিরে পুজো করবেন, সেদিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রীতি মিছিল করবেন । কাকে উনি কী বার্তা দিতে চাইছেন ? যেদিন রামনবমীর মিছিলে মহিলা এবং বাচ্চাদের উপরে পাথর ছোড়া হয়েছিল, সেদিন এই একতা এবং সম্প্রীতি কোথায় ছিল ? তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সেদিন এই মিছিল করছেন, যাতে ওইদিন একটা বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । আর যদি এটা হয় তাহলে সমস্ত দ্বায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই বর্তাবে ।"
ওইদিন মিছিলের জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা মুখ্যসচিবের কাছে জানতে চেয়েছে রাজভবন ৷ এ বিষয়ে অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, "মুখ্যসচিব তো ওনার হাতের কাঠের পুতুল । যেটা উনি শিখিয়ে দেবেন, সেইটাই এরা বলবে ।"
প্রসঙ্গত, আগামী 22 জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা শহরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা পূজন চলবে ৷ সেদিনই বিকেলে রাজ্যে সম্প্রীতি মিছিলের ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রথমে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে তারপর সমস্ত ধর্মের মানুষদের নিয়ে তিনি পার্ক সার্কাস পর্যন্ত পদযাত্রা করবেন ৷ তারপর সেখানে পৌঁছে সভা করবেন তিনি । শুধু তাই নয়, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে ওইদিন রাজ্যের ব্লকে ব্লকে হবে এই ধরনের পদযাত্রা ।
এই মিছিলের বিরোধিতা করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এই মিছিল রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করবে । তাই তিনি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার আর্জি জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল এবং আদালতের কাছে । তবে আজকের রায় তৃণমূলের পক্ষেই যায় । 22 জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস মিছিল করতে পারবে । তবে আদালতের তরফে এও বলা হয়েছে যে, ওইদিন মিছিলে যেন কোনও ভাবেই কোনও উস্কানিমূলক স্লোগান বা বক্তব্য দেওয়া না হয় । কিছু শর্ত আরোপ করা হলেও মিছিল করার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট ।
আরও পড়ুন:
- 22 জানুয়ারি মমতার 'সম্প্রীতি মিছিল' আটকাতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ শুভেন্দু
- হিংসায় ইন্ধন দিতেই রামমন্দির উদ্বোধনের দিন মমতার সম্প্রীতি মিছিল, দাবি অমিত মালব্যর
- মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচির পালটা 22 জানুয়ারি 'অরাজনৈতিক' মিছিল শুভেন্দুর