কলকাতা, 19 মে : বর্তমানে দিঘা থেকে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে 620 কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে আমফান । তবে, তার শক্তি সামান্য দুর্বল হয়েছে । সুপার সাইক্লোন থেকে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে আমফান । বর্তমানে 220 কিলোমিটার গতিবেগে পাক খাচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড় । ধীরে ধীরে রাজ্যে প্রবেশ করছে । আগামীকাল বিকেলের দিকে এটি স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে । পারাদ্বীপের কাছে অবস্থান করায় আজ সকাল থেকেই ওড়িশা উপকূলে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে । দক্ষিণ 24 পরগনায় শুরু হয়েছে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি । কলকাতাতেও ঝড়-বৃষ্টি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে ।
বর্তমান অবস্থান থেকে ক্রমশ উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর করবে এই ঘূর্ণিঝড় । আগামীকাল পশ্চিমবঙ্গের দিঘা উপকূল ও বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্য দিয়ে অগ্রসর করবে । সুন্দরবন উপকূলের খুব কাছ দিয়ে এটি এগোবে বলেই পূর্বাভাস আবহাওয়া দপ্তরের । আগামীকাল যখন যখন পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকার পাশ দিয়ে আমফান এগোবে, তখন তার সম্ভাব্য গতিবেগ থাকবে 165-175 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় । সর্বোচ্চ ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ থাকবে 185 কিলোমিটার ।
আগামীকাল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের জেলাগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে । বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনায় চার-পাঁচ মিটার পর্যন্ত সমুদ্র উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে । পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলে প্রায় দুই-তিন মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের সর্তকতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর । কলকাতার জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর । আগামীকাল সকালে 75-85 কিলোমিটার পর্যন্ত থাকবে ঝোড়ো হওয়ার গতিবেগ । সকালে সর্বোচ্চ হাওয়ার গতিবেগ 95 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় চলতে পারে ।
আমফান মোকাবিলায় কী করবেন, কী করবেন না আগামীকাল সকাল থেকেই কলকাতায় হালকা মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। যত বেলা বাড়তে থাকবে ঝড় বৃষ্টির দাপট ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকবে । যখন স্থলভাগের খুব কাছে চলে আসবে, তখন কলকাতায় হাওয়ার দাপট থাকবে 110-120 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা । ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ সর্বোচ্চ 130 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে । সমস্ত দোকানপাট আগামীকাল বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । মানুষকে রাস্তায় বের হতে নিষেধ করা হয়েছে । যেহেতু ঝড়ের দাপট অনেক বেশি থাকবে তাই পুরোনো বিপজ্জনক বাড়িগুলি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে । বড় গাছ ও ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছে আলিপুর আওহাওয়া দপ্তর । আমফান আয়লার থেকেও অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন । তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আয়লার থেকে অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।
আগামীকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টিপাত হবে । তবে কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে । উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে । আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে সবথেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে । হাওয়ার গতিবেগ অত্যন্ত বেশি থাকায় ল্যাম্পপোস্ট, বড় গাছ ভেঙে পড়া সম্ভাবনা রয়েছে । মাটির বাড়ি বা দুর্বল বাড়িগুলি ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়তে পারে। তাই নিচু অথবা ঢালু এলাকার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।
আগামী কয়েক দিন মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে । নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । কৃষকদেরও জন্য আগাম সর্তকতা জারি করেছিল আবহাওয়া দপ্তর । সমুদ্র সৈকতে কোনও মতেই যাওয়া যাবে না আগামী দু'দিন । ফেরি সার্ভিস, লঞ্চ সার্ভিস সমস্ত কিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর ।