35 আসন পাবেই যখন তখন কমিটি কেন, বিজেপিকে কটাক্ষ সেলিমের কলকাতা, 26 ডিসেম্বর: বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং অমিত শাহ মঙ্গলবার কলকাতায় সাংগঠনিক বৈঠক করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য দলের নির্বাচনী কমিটি ঠিক করে দিয়েছেন । টার্গেট দিয়েছেন 35 লোকসভা আসনে জয়ের জন্য । এই নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তীব্র কটাক্ষ শুরু করেছে । সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, "বিজেপি যখন ধরে নিয়েছে 35 আসন পাবে, তখন আর কমিটি গড়ার কি প্রয়োজন ?"
তাঁর কথায়, "35টা আসন যখন পাবে, তাহলে কমিটি কেন তৈরি করতে হচ্ছে ? তামাশা করে, ধর্মীয় নাটক করে আরএসএস-কে ব্যবহার করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যবহার করে, মোদির মুখ দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি গলে যাচ্ছে । সংগঠিত যে কমিটিগুলো রয়েছে, সেগুলো কাজ করছে না ৷ একটার পর একটা পার্টি অফিসে তালা পড়ছে ৷ এই কারণেই নির্বাচনী কমিটি করে দিতে হচ্ছে ৷ একের পর এক কমিটি করে দেওয়া যায়, কিন্তু কোনও কিছুই কাজ করে না ৷ একের পর এক নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে (কমিটির সদস্যরা)। মানুষ এখানে প্রস্তুত হচ্ছেন তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী মনোভাব নিয়েই৷ মানুষ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত হচ্ছেন । আরএসএস তৃণমূলকে টিকিয়ে রাখতে চায় আর মানুষ তৃণমূলকে ছুঁড়ে ফেলতে চায় ।"
সাংবাদিক বৈঠকে মহম্মদ সেলিম রাজ্যে থাকা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিজেপির নির্বাচনী কমিটিতে না রাখার প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, "এটাকে বলে এসওএস । হেডকোয়ার্টারে এসওএস । রাজ্য নেতারা অপদার্থ। যে কারণে তাঁদের (অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডা) এসে বৈঠক করতে হচ্ছে । এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে রাজ্যের যে সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রয়েছে তারাই অপদার্থ । তারা যে পদে থাকার যোগ্য নয়, তা আগাম বার্তা দিয়ে দিচ্ছে । ইতিমধ্যে আগে একটা মন্ত্রী তৃণমূলে চলে গিয়েছেন ৷ একজন মন্ত্রীকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে । এরকম পরিস্থিতিতে নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছে । এর মধ্যে আবার দেখবেন তৃণমূলের নেতারা বিজেপিতে ভিড়েছে ।"
বিবেকানন্দের বাণী নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি যে রাজনীতি শুরু করেছে, তাঁকে তীব্র কটাক্ষ করে মহম্মদ সেলিম বলেন, "গত নির্বাচনের আগে আমরা দেখেছিলাম কিভাবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে রাজনীতি করা যায় । আসলে উপলক্ষ ছিল সুভাষ বোস আর লক্ষ্য ছিল হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে কিভাবে আরও বেশি করে মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় এবং তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে যে বাইনারি আছে, সেটাকে আরও স্পষ্ট করা যায় ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এর আগে হয়েছিল বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার রাজনীতি । তখন একদল বিদ্যাসাগরপন্থী হয়ে গেল আর একদল বিদ্যাসাগর বিরোধী হয়ে গেল । তারপর বিদ্যাসাগরকে মানে বিদ্যাকে বিসর্জন দিতে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি । তারপরে সেখান থেকে জয় শ্রীরাম স্লোগানকে বিতর্কিত করেছে । এখন আবার হঠাৎ করে বিবেকানন্দকে নিয়ে পড়েছে । কিন্তু চালাকির দ্বারা কোনও মহৎ কাজ হয় না । এখানে উপলক্ষটা বিবেকানন্দ আর লক্ষ্য হচ্ছে কে কত বেশি বাঙালি সাজতে পারে ।’’
সেলিমের আরও বক্তব্য, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ ভারত পথিক ছিলেন ৷ তিনি গোটা দেশটাকে দেখেছিলেন । স্বচক্ষে দেখেছিলেন ও অন্তর থেকে উপলব্ধি করেছিলেন । সারা ভারতে যে বন্যপ্রথা আছে, বিভেদ আছে, সেটাকে উপেক্ষা করে সেসবের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে এক করার চেষ্টা করেছিলেন । এমনকি ধর্মীয় সংকীর্ণতা থেকে উপরে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন । আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তাঁর এবং তাঁর গুরুর মতকেই সংঘ পরিবার আক্রমণ করছে ।" তাঁর আরও দাবি, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের জন্য দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে আরএসএস ৷
আরও পড়ুন:
- লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ বিজেপিতে ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট কমিটি তৈরি করলেন শাহ-নাড্ডা
- বিবেকানন্দের বাণী নিয়ে সুকান্তের বিতর্কিত মন্তব্যে, প্রতিবাদে পথে নামছে তৃণমূল
- যাদবপুরের সমাবর্তন নষ্ট করার চেষ্টা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে হাতেখড়ি নেওয়া রাজ্যপালের, বিস্ফোরক সুজন