কলকাতা, 7 সেপ্টেম্বর : ভবানীপুরে উপনির্বাচনকে নির্বাচন কমিশনের "ভবানীপুর স্পেশ্যাল সিদ্ধান্ত" বলে কটাক্ষ করলেন সুজন চক্রবর্তী । এছাড়া সোমবার বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর রক্ষাকবচ বিষয়েও মুখ খুললেন ৷ মনে করিয়ে দিলেন সুশান্ত ঘোষকে হয়রানি করার কথা ৷
ভবানীপুরে উপনির্বাচন নিয়ে-
নির্বাচন কমিশনের ভবানীপুরে উপনির্বাচন করার সিদ্ধান্তকে আমি "ভবানীপুর স্পেশ্যাল সিদ্ধান্ত" বলব ৷ সারাদেশে 31টি উপনির্বাচন হবে না । তিনটে লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে না । সারাদেশে একমাত্র উপনির্বাচন ভবানীপুরে ৷ কেন?
নির্বাচন কমিশন তাদের এই নির্দেশ প্রসঙ্গে জানিয়েছে রাজ্য সরকার বলেছে এই উপনির্বাচন না হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে, শূন্যতা তৈরি হবে । রাজ্যের মুখ্যসচিব (Chief Secretary) এ কথা জানিয়েছেন ৷ কিন্তু এর তো কোনও কারণ নেই ৷ যারা জিতেছে, তাদের 213 জন বিধায়ক রয়েছেন ৷ এটা ভুল যুক্তি ৷
আরও পড়ুন : Abhishek Banerjee : জীবন দেব, মাথা নত করব না; ইডির জেরার পর বিজেপিকে হুঙ্কার অভিষেকের
নির্বাচন কমিশন ও মুখ্যসচিবের পদক্ষেপ নিয়ে-
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হওয়ার কথা জানানোটা কি নির্বাচন কমিশনের কাজ ? কে কোথায় প্রার্থী হবেন, তা দেখে নির্বাচন ঠিক করা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয় ৷
এটা নাকি রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব (Chief Secretary) জানিয়েছেন ৷ কিন্তু এটা কি তাঁর কাজ ? তিনি কি রাজনীতি করতে এসেছেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হওয়ার কথা নির্বাচন কমিশনকে মুখ্যসচিব যে গদগদ ভঙ্গিতে জানাচ্ছেন, তার মানে দাঁড়াচ্ছে যে প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানোর দায়িত্ব মুখ্যসচিবের ৷ নির্বাচন পদ্ধতিটা দূষিত হয়ে গিয়েছে ৷
ইন্দিরা গান্ধির প্রসঙ্গ উত্থাপন-
এলাহাবাদ হাইকোর্টে ইন্দিরা গান্ধি নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় হেরেছিলেন ৷ এতে দেখা যাবে নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের কর্মীদের কাজের এক্তিয়ার কী । তাঁদের কাজ রাজনীতি করা নয় ।
এক্ষেত্রে মুখ্যসচিব কার্যত তাঁর আইনি অধিকারের বাইরে গিয়ে নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করেছেন । একজন ব্যক্তির নামে বা অনুপ্রেরণায় তিনি ভুল পদক্ষেপ করেছেন ৷ তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন চলতে পারে না ৷ আইনের চোখে খারাপ দৃষ্টান্ত । বেআইনি, বেঠিক ৷ তাহলে বাকি উপনির্বাচন কেন্দ্রগুলির মানুষের কী অপরাধ ? খড়দহের মানুষের কী অপরাধ ? এই প্রশ্ন উঠেছে এবং উঠবে ।
ভবানীপুরে উপনির্বাচন থেকে অভিষেককে ইডির তলব, একাধিক ইস্যুতে সরব হলেন বামনেতা সুজন চক্রবর্তী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডির সমন নিয়ে-
তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দোপাধ্যায় দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজিরা দিয়েছেন গতকাল । 9 ঘণ্টারও বেশি সময় জেরার পর তিনি দফতর থেকে বেরিয়ে এসে রীতিমতো হুঙ্কার দেন "জীবন দেব, মাথা নত করব না"৷ তাঁর এই ইডির জেরার সম্মুখীন হওয়া এবং বেরিয়ে এসে এমন মন্তব্যকে কটাক্ষ করলেন সুজন চক্রবর্তী । কী বলছেন তিনি ?
তিনি চুপসে আছেন, কিন্তু বুক ফুলিয়ে থাকার মতো হাবভাব করতে হবে ৷ সিবিআই, ইডির ডাকার কারণ কী ? 34 বছরের বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সবাই মিলে চেষ্টা করেও একটা কালো দাগ মারতে পারেননি ৷ রাজনীতি সহজ নয়, রাজনীতি মানে মূল্যবোধ ৷
আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ কার কার তৈরি হচ্ছে ? কী করে হচ্ছে, কোথা থেকে হচ্ছে আর তারা সবাই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে ৷ এটা কী ভাবে হচ্ছে ? যার যত বেআইনি সম্পদ, সে তত বড় নেতা, কী করে হচ্ছে ? এর উত্তর কে দেবে ?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কী হয়েছে, তা তিনি বলবেন ৷ সবাই জানে ৷ তিনি শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ৷ দলের লোকদের কী হচ্ছে, সেটাও তাঁকে বলতে হবে ৷
বেআইনি সম্পদে দল ভরে গিয়েছে । তৃণমূল নেতাদের 2016-য় দাখিল করা হলফনামা (Affidavit) আর 2021-এ করা হলফনামা মিলছে না ৷ 2011-য় দাখিল করা হলফনামার সঙ্গে 2016-র হলফনামার মিল নেই ৷ তৃণমূলের ঝাণ্ডা সঙ্গে থাকলে বেআইনি যে কোনও কাজ করা যায় ৷ সোনাকাণ্ড, কয়লাকাণ্ডে যুক্ত হওয়া যায় ৷ না বোঝার কী আছে ? যাঁরা অপরাধী, তাঁরা লম্বা-চওড়া ভাষণ কম দিন ৷
আরও পড়ুন : Subhendu Adhikari: ভবানীপুরে ভোট আটকাতে দিল্লিযাত্রা শুভেন্দুর ! বৈঠক শাহ-নাড্ডার সঙ্গে
প্রসঙ্গ যখন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী-
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সিআইডি দফতরে হাজিরা দেওয়া থেকে রেহাই পেয়েছেন । হাইকোর্টের রায়ে কার্যত রক্ষাকবচ পেয়েছেন তিনি ৷ ইতিমধ্যে সিআইডি তদন্তের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিতে পারেন বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা । একই কথার পুনরাবৃত্তি সুজন চক্রবর্তী গলায় । এ প্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিলেন সুশান্ত ঘোষের কথা ৷
10 বছর আগের যে ঘটনার চার্জশিট পুলিশ দিয়েছে, সেই সময়ে পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এখন পুলিশ আবার সেই পুরনো মামলার তদন্তে নেমেছে । এখনও পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবেন, অন্য কেউ দেবে কী করে ?
শুভেন্দু রক্ষাকবচ পেলেও তাঁকে মনে করিয়ে দিতে চাই, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরে চারপাশ মিলিয়ে একসময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তৃণমূল নেতা শুভেন্দুবাবু ৷ 10 বছরের পুরনো বস্তাপচা গল্পকে সামনে এনে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছিলেন সুশান্ত ঘোষকে ৷ আজকের মতো তিনি রক্ষাকবচ পাননি । এমন নির্যাতন করা হয়েছিল, তিনি বেঁচে থাকবেন কি না সন্দেহ ছিল ৷ সেই নির্যাতন করেছিল রাজ্য সরকার, শুভেন্দু অধিকারী ৷ একসময় তিনি তৃণমূলের হয়ে যে অপরাধ করেছিলেন, ওনার কথা অনুযায়ী আজ তৃণমূল সেই এক অপরাধ করছে তাঁর বিরুদ্ধে ৷