পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Damayanti Sen: দময়ন্তীর দক্ষতায় আদালতের ভরসা থাকলেও প্রশাসনের আস্থা নেই কেন ?

কলকাতা পুলিশের বিশেষ নগরপাল (1) আইপিএস দময়ন্তী সেন ৷ তাঁর উপর বারবার ভরসা রাখতে দেখা যাচ্ছে কলকাতা হাইকোর্টকে ৷ অথচ কলকাতা পুলিশে অপরাধ দমনের বদলে তিনি নিযুক্ত প্রশাসনিক কাজে ৷ কেন তাঁর দক্ষতার উপর ভরসা নেই প্রশাসনের, উঠছে প্রশ্ন ৷

Damayanti Sen
Damayanti Sen

By

Published : May 11, 2023, 8:15 PM IST

কলকাতা, 11 মে:আইপিএস দময়ন্তী সেন ৷ 2012 সালে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তের সময় চলে আসেন প্রচারের আলোয় ৷ সেই সময় তিনি ছিলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান ৷ কলকাতা পুলিশের তদন্তের অভিমুখ ও প্রশাসনের বক্তব্যের ফারাক তৈরি হয়েছিল ওই ঘটনা ঘিরে ৷ পুলিশ মহলের অনেকে বলেন, তার জেরেই শাসকের রোষানলে পড়েছিলেন তিনি ৷ যদিও তাঁর দক্ষতার প্রশংসা সেই সময় অনেকেই করেছিলেন ৷

তার পর সময় এগিয়েছে ৷ পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় 11 বছর ৷ এই সময়ের মধ্য়ে একাধিক পদে বদলি হয়েছেন দময়ন্তী সেন ৷ বর্তমানে তিনি কলকাতা পুলিশের বিশেষ নগরপাল (1) ৷ পুলিশ মহলের একাংশের বক্তব্য, 2012 সালের সেই ঘটনার পর থেকে আর শাসকের নেকনজর পড়েনি দময়ন্তীর উপর ৷ সেই কারণেই অপরাধ দমনের বদলে এখন তাঁকে দিয়ে কলকাতা পুলিশের নানা প্রশাসনিক কাজ করানো হয় ৷ তাঁর দক্ষতাকে সেভাবে ব্যবহারই করা হয় না ৷

অথচ, গত কয়েক বছরে তাঁর বুদ্ধিমত্তার উপর বারবার আস্থা রাখতে দেখা গিয়েছে আদালতকে ৷ কাকদ্বীপে এক দম্পতিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা, মালদার ইংরেজবাজার নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার ঘটনা, কলকাতার আলিপুরের রেসিকা জৈনের রহস্যমৃত্যুর তদন্তেও আদালত ভরসা রেখেছিল দময়ন্তীর উপর ৷

আর সেই ভরসার সম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে আজ, বৃহস্পতিবারই ৷ দিনকয়েক আগে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে এক কিশোরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ৷ পুলিশ আত্মহত্যার ঘটনা বললেও পরিবারের তরফে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ তোলা হয়েছে ৷ সেই ঘটনায় এ দিন বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ তিন সদস্য়ের সেই সিটের অন্যতম সদস্য আইপিএস দময়ন্তী সেন ৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই সিটের আর দু’জন সদস্য আগেই অবসর নিয়েছেন ৷ তাঁদের একজন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা পঙ্কজ দত্ত এবং দ্বিতীয়জন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস ৷

আদালত যেখানে দময়ন্তীর উপর ভরসা রাখছে বারবার, সেখানে কলকাতা পুলিশ কেন তাঁর অপরাধ দমনের দক্ষতাকে ব্যবহার করছে না ? কেন এই বৈপরীত্য ? এই প্রশ্নগুলি বারবার ওঠে দময়ন্তী সেনকে কেন্দ্র করে ৷ রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এডিজি নজরুল ইসলাম ইটিভি ভারতকে বললেন, ‘‘রাজ্য সরকার সবসময় নিজের পছন্দের ও অদক্ষ পুলিশ আধিকারিকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায় । কিন্তু দক্ষ ও নির্ভীক পুলিশ আধিকারিকরা কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে থাকেন ।’’

যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতা পুলিশের ওই মহিলা আইপিএসের শাসকের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির শুরু, সেই পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘পার্ক স্ট্রিটে গণধর্ষণের ঘটনায় দময়ন্তী সেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন । তদন্তের গতি প্রকৃতি তাঁর হাত ধরে ঠিকভাবেই এগোচ্ছিল । কিন্তু যখন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান আগ বাড়িয়ে ঘটনাটি সাজানো বললেন ৷ সেক্ষেত্রে তদন্তকারী পুলিশকর্মী যদি সেখান থেকে অপরাধের কোনও লিংক বের করে আনতে পারেন, তখন প্রশাসনিক প্রধানের মুখ অনেকটাই নষ্ট হয় । ফলে তড়িঘড়ি সেই তদন্তভার থেকে দময়ন্তী সেনকে সরিয়ে দেওয়া হয় ।’’

কলকাতা পুলিশ গুরুত্ব না দিলেও আদালত দময়ন্তীর উপর ভরসা রাখায় খুশি কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এক আধিকারিক ৷ তিনি ঘটনাচক্রে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তে দময়ন্তী সেনের অধীনেই কাজ করেছেন ৷ তাঁর কথায়, দময়ন্তী সেনের অধীনে কাজ করাটা অনেকটা সৌভাগ্যের বলা চলে । অনেক সময় তদন্তকারী অফিসারের উপর অনেক সময়ই উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা নিজের মতামত জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন । কিন্তু এক্ষেত্রে দময়ন্তী সেন অনেকটাই আলাদা । তদন্ত যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তার জন্য তদন্তকারী আধিকারিক ও অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকদের তিনি বরাবরই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন ৷

সেই কারণেই দময়ন্তী সেন এতটা দক্ষ বলে মনে করেন অবসর নেওয়া ওই পুলিশ আধিকারিক ৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা কি বিষয়টি বুঝবেন ? আর যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, তিনি ? পুলিশ মহলে তাঁকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা বলছেন, ম্যাডাম নীরবেই কাজ করতে পছন্দ করেন ৷ তদন্তের কিনারা করেই জবাব দেবেন ৷

আরও পড়ুন:পুলিশের তদন্তে বিস্তর গলদ, কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় নয়া সিট গঠন হাইকোর্টের

ABOUT THE AUTHOR

...view details