কলকাতা, 9 জুলাই : COVID-19 সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় মানুষের থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সতর্ক করা হয়েছিল । বাতাসেও যে নভেল কোরোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে , সেই বিষয়ে কোনও উল্লেখ ছিল না তাদের নির্দেশিকায় । মেনে চলা হচ্ছিল সামাজিক দূরত্ব বিধি । এড়িয়ে চলা হচ্ছিল মানুষ সংস্পর্শ । কিন্তু সম্প্রতি অ্যামেরিকার কয়েকজন বিজ্ঞানী WHO-এর নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, বাতাসেও ভেসে থাকতে পারে কোরোনা ভাইরাস । নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে তা প্রবেশ করতে পারে মানুষের শরীরে । বিজ্ঞানীদের এই তথ্য নতুন কিছু নয় । একজন সংক্রমিত মানুষের ড্রপলেট বাতাসেই বাহিত হয় বলে জানালেন চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী ।
সংক্রমিত মানুষের হাঁচি বা কাশির সময়ে সেই ড্রপলেট বেরিয়ে আসে । নির্দিষ্ট এলাকার বাতাসেই থাকবে সেই ড্রপলেট । ভারি হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য তা মাটির দিকে নেমে আসতে পারে । কিন্তু ড্রপলেট ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যম হলেও বাহক বাতাসই । যদিও ভাইরাসের বাতাসে ভেসে বেড়ানোর বিষয়ে কোনও প্রামাণ তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি ।
একজন মানুষ থেকে অন্য একজন মানুষে ছড়ায় SARS COV-2 বা নভেল কোরোনা ভাইরাস
এই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই চলছিল সতর্কতা অবলম্বন । সারা বিশ্ব এই তথ্যে বিশ্বাস করলেও কয়েকজন বিজ্ঞানী প্রথম থেকেই ভিন্ন মত দিয়েছেন । এমন কয়েকজন বিজ্ঞানীর মতে, কোরোনা ভাইরাস শুধু মানুষ থেকে মানুষের শরীরে ছড়ায় এমন নয়, বাতাসেও মিশে যেতে পারে এটি । যা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে ।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে প্রকাশিত হওয়া অ্যামেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের একটি গবেষণা এও বলছে, কোরোনার ভাইরাস বাতাসে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে । যদিও এই তথ্য নিয়েও বিতর্ক রয়েছে ।
বিজ্ঞানীদের একাংশের মত
ড্রপলেটের মাধ্যমেই কোরোনা ছড়াতে পারে । ড্রপলেট থেকে ভাইরাসটি বায়ুতে মিশতে পারে । যেমন, যদি কোনও আক্রান্ত রাস্তার দিকে মুখ করে হাঁচেন তাহলে তার লালার ছিঁটে রাস্তায় পড়লে সেখান থেকে বায়ুতে মিশতে পারে । এক্ষেত্রে হংকং ও মেইনল্যান্ড চায়না থেকে বের করা দু'টি গবেষণাপত্রের উল্লেখ করে তাঁরা জানিয়েছেন, কোরোনার এপিসেন্টার ইউহানে দেখা গেছে, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা যে পোশাক বা মাস্ক ব্যবহার করেন তার থেকে এই ভাইরাস বায়ুতে মিশে যায় ।
বিষয়টি নতুন নয় ; স্পষ্ট জানিয়েছেন কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিতাভ নন্দী
সেইক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে পুনরুত্থাপন করা তাঁর কাছে অর্থহীন । কারণ ড্রপলেট যদি যান হয়, সেক্ষেত্রে তার যন্ত্রাংশ বাতাসই । এইরকমও উপমা দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক । তবে কি সত্যিই বাতাসে ভেসে বেড়ায় কোরোনা ভাইরাস ? কীভাবে অবলম্বন করা যাবে সতর্কতা ? অমিতাভ নন্দী বলেন, "যখন কেউ হাঁচছেন-কাশছেন, তখন ড্রপলেট তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে । ওই ড্রপলেট অর্থাৎ, জলকণা তখন বাতাসে এসে গেল । সেটা তখন বাতাসে ভাসমান । তা হলে বাতাসে তো থাকছেই COVID-19-এর ভাইরাস । এই বিষয়টি ফেব্রুয়ারি মাসেই আমি বলেছিলাম ।"
এই বিষয়ে কী বলছেন চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী ?
যখন কেউ হাঁচি দিচ্ছেন, ধরে নেওয়া যাক তখন সেখানে হালকা বাতাস বইছে । এমনিতেই বড় ড্রপলেট হলে তার ওজনের জন্য একটু এগিয়ে নিচে নেমে যায় । তবে ক্ষুদ্র পার্টিকেলগুলি অনেকক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকতে পারে । এই কথা জানিয়ে চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, "যদি তখন ওখানে বাতাস বইতে থাকে, সেক্ষেত্রে বাতাসে উৎসস্থান থেকে ১৫-২০-৩০ মিটার ভেসে যেতেই পারে COVID-19-এর ভাইরাস । যদিও তা নির্ভর করছে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর । বাতাসের অবস্থানের উপর ।"
এই বিষয়ে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক অর্পিত সাহা বলেন, "COVID-19 নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বা সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল (CDC)-এর নির্দেশিকা আমরা পেয়েছি । এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রধানত ড্রপলেটের মাধ্যমে হয় । বিভিন্ন গবেষণা এবং সম্প্রতি ২৩৯ জন বিজ্ঞানী দাবিটি রেখেছেন । ড্রপলেট ছাড়াও এটা এরোসোলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে । তবে কত সময় পর্যন্ত এরোসোল হয়ে এই ভাইরাস থাকতে পারে, এখনও পর্যন্ত তার তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি, তেমন প্রমাণ নেই ।"
তবে এই ক্ষেত্রে কী করণীয়?
সামাজিক দূরত্ব বিধি নিয়ে সেইরকম কোনও সতর্কতার কথা বলেননি অমিতাভ নন্দী । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকাতেই সম্মতি জানিয়ে তিনি বলেন, "ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে মুখ, নাক বা চোখ দিয়েও । সেইক্ষেত্রে নাক, মুখ ঢাকা রাখতে হবে । মনে রাখতে হবে সংক্রমিত হব না, সংক্রমণ ছড়াব না । আর বারবার হাত ধোয়ার অভ্যেস করা ভাল । তবে ত্বক ভেদ করে এই ভাইরাস প্রবেশ করবে না ।"