কলকাতা, 19 মার্চ: আজ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু হল অনলাইনে ক্লাস নেওয়া । আপাতত, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা ও লাইব্রেরি সায়েন্স বিভাগে শুরু হয়েছে এই অনলাইন ক্লাস । দুটি বিভাগের একজন করে অধ্যাপক উদ্যোগ নিয়ে এই অনলাইন ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন । কোরোনা ভাইরাসের কারণে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে 15 এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই ছুটির সময়ে সিলেবাস শেষ করার জন্যই এই অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এর আগে কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস চালুর কথা জানা গেলেও সরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাসের কথা জানা যায়নি । সেইদিক থেকে দেখতে গেলে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথম অনলাইন ক্লাস চালু করা হল ।
যেহেতু ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সে কারণে এক মাসের ছুটিতে পঠন-পাঠন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে । এমনকি এই লম্বা ছুটির কারণে পঠন-পাঠনে কি প্রভাব পড়বে, সেমিস্টার পিছিয়ে যাবে কি না, সিলেবাস কি করে শেষ করা যাবে, তার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সেইসব নিয়ে আলোচনা করতে কয়েক দিন আগেই রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । সেখানেই সিলেবাস শেষ করার জন্য এই সময়টা অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করার জন্য উপাচার্যদের বলেছিলেন তিনি । শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শ মেনে অনলাইন ক্লাস করানোর উপায় বের করে আজ থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুজয় ঘোষ । আজ একসঙ্গে বিভাগের 80 জন পড়ুয়ার অনলাইন ক্লাস নেন তিনি । অনলাইন ক্লাস চালু নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুজয় ঘোষ বলেন, " বিশ্ববিদ্যালয় আপাতত পঠন-পাঠন মুলতুবি আছে । ছেলে-মেয়েরা আসছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ে । সেই পরিস্থিতিতে উপাচার্যরা কী ভাবছেন, যখন এই কোরোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করে রাজ্য বেরিয়ে আসবে এবং পঠন-পাঠন শুরু হবে, তখন পরীক্ষাগুলো কী করে হবে । আর এটা একটা এমনই জরুরি অবস্থা যে মাঝপথেই সব বন্ধ করে দিতে হয়েছে । সেই অবস্থাতে কিভাবে সিলেবাস শেষ হবে এবং বিশেষত স্নাতকোত্তর স্তরের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল । কারণ এই স্তরের ছেলে-মেয়েরা সেমিস্টার সম্পন্ন করার পরে NET, SET পরীক্ষা দেয় Ph.D, ডক্টরেটের জন্য, বিদেশে যাওয়ার জন্য GRE, TWEFL পরীক্ষাগুলো দেয় ।
ফলে, সেমিস্টার পিছিয়ে যাওয়া ব্যাচেলর ডিগ্রি, কলেজগুলিকে যেভাবে প্রভাবিত করবে, স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর প্রভাবটা অনেক বেশি পড়বে । সেই ভাবনা থেকেই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবেদন করেছিলেন উপাচার্যদের কাছে, অনলাইন কিছু ব্যবস্থা করার । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে 100টির কাছাকাছি বিভাগ আছে, সেখানে সমস্ত বিভাগে একসঙ্গে অনলাইন ব্যবস্থা চালু করাটা বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ । সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আমি এবং আমার মতো দুই একজন অধ্যাপক চিন্তাভাবনা করে, আমরা যারা প্রযুক্তিতে সড়গড় ও ল্যাবরেটরিতে উপযুক্ত প্রযুক্তি রয়েছে, তাঁরা তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য নিয়ে গতকাল রাতেই একটা সেট আপ তৈরি করে ফেলি। যাতে আজ থেকেই অনলাইন ক্লাস চালু করে দিতে পারি । অনলাইন ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে গতকাল রাতেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয় । তারপর আজ সকাল সাড়ে 11টা থেকে বিভাগের 80 জন পড়ুয়াকে নিয়ে অনলাইন ক্লাস নেন অধ্যাপক সুজয় ঘোষ ।