কলকাতা, 9 জুন: ওঁদের কেউ আসেন হাবরা, কেউ কোলাঘাট, কেউ বা আরামবাগ কিংবা বর্ধমান থেকে । আগে আসতেন লোকাল ট্রেনে । এখন নিত্য বাস সফর । আর তাতেই পরিবারে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক । সেই আতঙ্ককে সঙ্গী করেই অফিস করছেন মহাকরণ কর্মীরা । কাজ করছেন ঠিকই । কিন্তু মনের ভেতর সবসময় ভর করছে একটা অজানা আতঙ্ক । যাতায়াতের পথে সংক্রমণ হবে না তো!
মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন 70% কর্মী নিয়ে খুলবে সরকারি অফিস । পরে নবান্নের তরফে জারি করা হয় নির্দেশিকা । গতকাল থেকে সরকারি অফিসে 70% কর্মীর উপস্থিতি আবশ্যিক করা হয়েছে । একইসঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সপ্তাহে অন্তত তিনদিন প্রতি কর্মীকে উপস্থিত থাকতে হবে অফিসে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসকের সঙ্গে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেন । সেই ভিডিয়ো কনফারেন্সের পর তিনি জানান, চতুর্থ দফার লকডাউন শেষ হলে 100% কর্মী নিয়ে কাজ করতে পারবে বেসরকারি সংস্থাগুলি । তবে বাড়ি থেকে কাজের বিষয়ে তিনি বেশি উৎসাহী বলেই জানিয়ে দেন। যেসব বেসরকারি সংস্থার সেই পরিকাঠামো রয়েছে তারা যেন সেই নীতি অবলম্বন করে বলে অনুরোধ করেন তিনি । চটকল এবং চা বাগানে 100% কর্মী নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে সবুজ সংকেতও দেন তিনি । পাশাপাশি জানান, আগে ঠিক হয়েছিল 50% কর্মী নিয়ে সরকারি অফিস খুলবে, কিন্তু সেটি বাড়িয়ে 70% করা হয়েছে ।
সপ্তাহের প্রথম দু'দিন সরকারি অফিসে উপস্থিতির সংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল । এতে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার বিষয়ে অনেকটাই গাফিলতি হচ্ছিল । আর সেই সূত্র ধরেই নতুন করে নির্দেশিকা জারি করা হয় নবান্নর তরফে । সেই নির্দেশিকাতেই বলা হয়েছিল, 8 জুন থেকে অন্তত 70% কর্মী দিয়ে সরকারি অফিসগুলিতে কাজ করাতে হবে । সেই ফরমান অনুযায়ী আধিকারিকরা কর্মীদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন বিশেষ রোস্টার । সেইভাবেই অফিসে আসছেন মহাকরণের কর্মীরা । এমনিতে মহাকরণের গেটের বাইরে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী বেসিন । সেখানে রাখা হয়েছে সাবান-জল । থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপার পরেই মহাকরণে ঢোকার অনুমতি মিলছে । পুরোদমে কাজ শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিনে মহাকরণের অলিন্দে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, কাজ হচ্ছে ঠিকই । কিন্তু প্রাণ নেই যেন । কর্মীদের উপস্থিতির হার খুবই কম । ফাঁকায় ফাঁকায় বসে সহকর্মীদের অনুপস্থিতিতে এমনিতেই সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করছেন কর্মীরা ।
কোরোনা আতঙ্ক নিয়েই কাজ করছেন মহাকরণ কর্মীরা আইন দপ্তরের এক কর্মী জানালেন, "যাতায়াতের পথে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি । অফিস থেকেই গাড়ি পাঠানো হয়েছিল । তাই কোনও সমস্যা হয়নি ।" তবে অন্য আর এক কর্মী বললেন, "বাসের কারণে অফিস ঢুকতে দেরি হচ্ছে বিস্তর । তার উপর পাবলিক বাসে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব । ফলে পরিবারের লোকজন চিন্তিত । যাতায়াতের পথেই সংক্রমণ হয়ে যাবে না তো!" কৃষি দপ্তরের এক কর্মী কাজ করার ফাঁকে জানালেন, তিনি আসেন হাবরা থেকে । গতকাল অফিসে আসেননি । আজ বাসে করে এসেছেন । বললেন, "এমনিতে মহাকরণের ভেতরে এখনও পর্যন্ত সমস্যার কোনও কারণ দেখিনি । কিন্তু পরিবারের লোকজন ভীষণ চিন্তিত । অফিস করার কারণে যদি ভাইরাস নিয়ে বাড়ি ফিরি তবে সেটা সবার জন্যই চিন্তার ।"